Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অভাবে বন্ধের পথে ২ মেধাবী বোনের লেখাপড়া

মনিরুল ইসলাম দুলু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:০৫

ফাতেমা খাতুন ও জোহরা খাতুন, ছবি: সারাবাংলা

বাগেরহাট: জমজ বোন ফাতেমা খাতুন ও জোহরা খাতুন। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে জেলার শেখ হেলাল উদ্দীন সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন তারা। দিনমজুর বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে এখন বিছানায়। মা মাসুদা বেগম সেলাইয়ের কাজ করেন। একমাত্র ছোট ভাই পাঁচ বছর বয়স থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। টাকার অভাবে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে না পারায় এখন শারীরিক সমস্যার সঙ্গে অনেকটা মানসিকভাবে ভারসম্যহীন। এমন হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা দুই বোনের স্বপ্ন হবেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। কিন্তু সে স্বপ্নে এখন বাঁধ সেধেছে দারিদ্রতা।

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দুরে শুভদিয়া ইউনিয়নের দুর্গম কচুয়া গ্রামের জিল্লুর রহমান তালুকদারেরব জমজ মেয়ে ফাতেমা খাতুন ও জোহরা খাতুন। অভাবের কারণে দু’বোন অন্যের বাসায় প্রাইভেট পড়িয়ে এবং মায়ের সেলাইয়ের কাজ করে যা আয় হয়, তাই দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে তাদের। ধার-কর্য ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় এসএসসি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে দু’বোন পেয়েছেন জিপিএ-৫।

দুই বেলা খাবারের খরচ চালানো যাদের দুরূহ, সেখানে পড়াশোনা ও গ্রাম থেকে প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার দূরের কলেজে নিয়মিত ক্লাস করার খরচ চালান তাদের কাছে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন মা মাসুদা বেগম। মা-বাবার স্বপ্ন বাঁচাতে ভোর থেকেই গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রাইভেট পড়ান দুই বোন। বাড়ি ফিরে মাকে সাহায্য, বাবা ও ভাইকে সেবাযত্নের পর গভীর রাত পর্যন্ত জেগে লেখাপড়া করেন তারা— এভাবেই নিজেদের সংগ্রামের কথা বলছিলেন অদম্য ফাতেমা ও জোহরা।

বাবা জিল্লুর রহমান ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলেন, ‘বাড়ির জায়গাটুকু ছাড়া আমার কিছুই নেই। পুরাতন এই ছোট্ট একটি ঘরে পরিবারের পাঁচ সদস্যের বসবাস। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলাম আমি। দিনমজুরের কাজ করতাম। প্যারালাইসিস হওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারি না। মেয়ে দুইটা নিজের চেষ্টায় যতদূর সম্ভব লেখাপড়া করেছে। এখন কারও সহযোগিতা না পেলে তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাসুদা বেগম বলেন, ‘গরিব হলেও মেয়ে দু’টি লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে চায়। ধার করে কলেজে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু এখন কলেজে পড়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা না থাকায় তাদের পড়াশোনা বন্ধের পথে।’

শেখ হেলাল উদ্দীন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বটু গোপাল দাস বলেন, ‘ফাতেমা ও জোহরা অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার প্রতি তাদের খুব আগ্রহ। আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারি সহায়তা করার চেষ্টা করি। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে মেয়ে দুটি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে। লেখাপড়ার সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে তারা বড় হয়ে সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

সারাবাংলা/এমআইডি/এনএস

জোহরা খাতুন ফাতেমা খাতুন বাগেরহাট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর