‘আবরারের সমবয়সী দেখলেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে’
৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:০৭
ঢাকা: ‘আমার একটাই চাওয়া ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের যেন শাস্তিটা কার্যকর হয়। ওরা জেলে থাকলেও ওদের বাবা-মা কিন্তু ইচ্ছে করলেই তার সন্তানকে দেখতে যেতে পারছেন, কথা বলতে পারছেন। কিন্তু আজকে আমি চারটি বছর সব কিছু থেকে বঞ্চিত।’
কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলের নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। ৫ অক্টোবর তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে যারা পড়ালেখা করতো; আজকে তারা চাকরি করছে, বিয়ে করেছে, বাচ্চাও হয়েছে। শুধুমাত্র ওই খুনিদের জন্য আজকে আমি সব কিছু থেকে বঞ্চিত। আবরারের সমবয়সী কাউকে দেখলেই আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে, হু হু করে কেঁদে ওঠে মন।
চার বছর আগে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা। ওই মামলার রায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ট্রাইব্যুনাল। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
রোকেয়া খাতুন বলেন, আবরার ছাড়া কেমন চলছে আমার জীবন; এটা কি বলা সম্ভব বাবা। একজন মা তার সন্তান ছাড়া পৃথিবীটা অন্ধকার দেখে। সন্তানের সঙ্গে পৃথিবীর কোনো কিছুর তুলনা করা যায় না। বেঁচে আছি কোনো রকম। মনে হয় দুনিয়ার সব কিছু দিয়েও যেন শান্তি ফিরে আসবে না। আমার দুই ছেলে ওরাই ছিল আমার পৃথিবী।
তিনি বলেন, আবরার মৃত্যু হয়েছে ঠিক, তার আসবাবপত্র রয়েছে আগের মত। সে যে ঘরে পড়তো, ঘুমাতো, টিভি দেখতো সব কিছুই আগের মত আছে; শুধু আবরার নেই। তার পোশাক-আশাক সব যত্নে করে তুলে রেখেছি। যতদিন বেঁচে থাকবো আবরারের স্মৃতি ওইভাবেই থাকবে। আমি মরে যাওয়ার পরে যে যা করে করুক, আমি তো তখন আর দেখতে আসবো না।
আবরার বাবা বরকত উল্লাহ জানান, কিছুদিন ধরে আবরার মা খুব বেশি যেন অসুস্থ। ছেলের কথা মনে করে প্রায় সে কান্নাকাটি করে সে। গতকালকে ফেসবুকে কে যেন আবরার একটি ছবি দেখিয়েছে সেটা দেখে আবারও কান্নাকাটি করছে। মায়ের মন তো সব -সময় আবরার স্মৃতির কথা মনে করে।
তিনি বলেন, আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট আছি। তবে উচ্চ আদালতে যেন রায়টি বহাল রাখেন; সেই প্রত্যাশা করছি। একইসঙ্গে রায়টি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাই।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকতুল্লাহ। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার হত্যা মামলায় ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার তৎকালীন এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার ওরফে অপু, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, বহিষ্কৃত উপসমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, বহিষ্কৃত ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, বহিষ্কৃত কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ। আসামিদের মধ্যে জিসান, তানিম ও রাফিদ পলাতক রয়েছে।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, বহিষ্কৃত গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, বহিষ্কৃত আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা ও আকাশ হোসেন।
সারাবাংলা/এআই/এনইউ