অ্যাভিয়েশন খাতে নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ
৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:০৩
ঢাকা: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণে ‘স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার সংযোগ’ শ্লোগানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে নির্মিত টার্মিনালটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে অ্যাভিয়েশন হাবে পরিণত করার মাইলফলক হতে যাচ্ছে।
শনিবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আশা প্রকাশ করেন।
আংশিক উদ্বোধনের পর পরীক্ষামূলকভাবে বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইনস। এ টার্মিনালের একাংশে ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে আজ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেও যাত্রী চলাচলের জন্য টার্মিনালটি প্রস্তুত হতে সময় লাগবে আরও এক বছর। ২০২৪ সালের শেষে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহারের সুবিধা পাবেন যাত্রীরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের অনেক প্রবাসী বসবাস করেন। তারা আমাদের রেমিট্যান্স পাঠান। তারাও যাতায়াত করেন। তাছাড়া বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, একদিকে ভারত মহাসাগর অপরদিকে প্রশান্ত মহাসাগর এবং একইসঙ্গে বঙ্গোপসাগর। প্রাচীন যুগ থেকে এই জায়গাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানটা আন্তর্জাতিক এয়াররুটের মাঝে। যদি আমরা সেভাবে উন্নত করতে পারি তাহলে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ একটা চমৎকার জায়গা হতে পারে। সে লক্ষ্য রেখে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ইতোমধ্যে আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাৎসরিক যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা ৮০ লাখ। আর এই তৃতীয় টার্মিনাল সম্পূর্ণ চালু হলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম হবে। তবে ভবিষ্যতে এটা প্রায় দুই কোটির কাছাকাছি হবে বলে বিশ্বাস করি। কারণ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এক সময় বাংলাদেশের কক্সবাজার বা হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবনের হাব। সেটাই বিশ্বাস করি এবং সেভাবেই আমরা তৈরি করতে চাচ্ছি।’
পৃথবীতে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হয় জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘একসময় হংকং ছিল আন্তর্জাতিক হাব। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এখন দুবাই। আমি বিশ্বাস করি, একসময় আমাদের কক্সবাজার বা হজরত শাহজালালই হবে আন্তর্জাতিক হাব। রিফুইলিংয়ের জন্য এখানে সবাই আসবে, থামবে। বাংলাদেশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবে। আর কক্সবাজারে নামলে আমাদের সবথেকে দীর্ঘ বালুকাময় সমুদ্র সৈকত সকলে উপভোগ করতে পারবে। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই।’
এর আগে, শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এসময় দেশের গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে তাকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩’র বিভিন্ন অংশ ঘুরে ঘুরে দেখেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। উদ্বোধন ঘোষণা শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী আশাবাদ করে বলেন, ‘আজ আমাদের অর্জনের খাতায় যুক্ত হলো হজরত শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে দেশের আকাশ পথের পরিধি বাড়ছে। বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল তারই বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম অ্যাভিয়েশন হাবে পরিণত করা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন সেক্টরে আজ অত্যন্ত আনন্দের দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন দর্শন বাংলাদেশের জাগরণের অনুপ্রেরণার উৎস। তারই কন্যার হাতে আজ সে উন্নয়ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে এর মাধ্যমে বছরে ১২ মিলিয়ন যাত্রী ও পরে ১৪ মিলিয়ন যাত্রী চলাচল করতে পারবে বলে আশা করি।’
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেছেন, ‘স্বপ্নের চেয়েও বড় এই প্রকল্প। আজ আমাদের গর্বের দিন। আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিন। অনেক বাধা আমাদের পার হতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তিনটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেগুলো মেনে তৃতীয় টার্মিনাল স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল বাংলাদেশের নতুন অধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর অ্যাভিয়েশন হাব করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ।’
তৃতীয় টার্মিনালের ডাবল এন্ট্রি ব্রিজসহ ১২টি বোর্ডিং গেট ২০২৪ সালের মধ্যে চালু হবে এবং পরবর্তী ১৪টি বোর্ডিং সেতু পরবর্তীতে স্থাপন করা হবে। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে সরকার দিয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বাকি অর্থ দিয়েছেন। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা তৃতীয় টার্মিনালনালে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গ মিটারের একটি ফ্লোর স্পেস, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি আগমন ইমিগ্রেশন এবং ৩টি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক রয়েছে।
টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার পর ঢাকা বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। এতে বার্ষিক যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে ২৪ মিলিয়ন (পুরানো টার্মিনালসহ), যা এখন মাত্র ৮ মিলিয়ন। বিমানবন্দরটি প্রতি বছর ৫ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডেল করতে পারে। ৩৭টি নতুন এয়ারক্রাফ্ট পার্কিং এরিয়া এবং এপ্রোন এলাকায় সংযোগকারী দুটি ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় টার্মিনালটি একটি মাল্টিমোডাল পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যাতে যাত্রীরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ এবং প্রস্থান করতে সক্ষম হয়।
নতুন টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভূগর্ভস্থ রেলপথ (এমআরটি-৫, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর অংশ) এবং একটি ভূগর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে আন্ডারগ্রউন্ড টানেলের মাধ্যমে হজযাত্রীরা তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন।
তৃতীয় টার্মিনালটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের অধীনে একটি জাপানি কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি ৩৬টি এয়ারলাইনস বিশ্বের ২০টি দেশের সর্বমোট ২৭টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তবে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকে কেন্দ্র করে ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহী দেশের সংখ্যা ৫৪টিতে পৌঁছেছে।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস
টপ নিউজ তৃতীয় টার্মিনাল শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর