Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রেশনের আওতায় ফায়ার কর্মীরা, বাড়ছে প্রশিক্ষণে গুরুত্ব

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৫০

ঢাকা: যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে নগরায়নের পরিধি। গ্রামেও পড়ছে শহরের ছাপ। তবে এই নগরায়ন যেমন জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে, তেমনি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে ডেকে আনছে নানা ঝুঁকিও। বিশেষ করে রাজধানীসহ দেশের বহু স্থাপনা মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতি মাথায় রেখে অগ্নিনির্বাপনে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ হয়েছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি এবং জনবল।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে অগ্নিনির্বাপনে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমানে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের আজীবন রেশন ব্যবস্থার পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে আবাসিক সুবিধার মতো উদ্যোগও। এমনকি হজ পালনের সুযোগও দেওয়া হয়েছে তাদের।

‘ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স’র যাত্রা শুরু হয় ১৯৮২ সালে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য ‘গতি, সেবা এবং ত্যাগ’। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বছরের পর বছর সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা একটু একটু করে বাড়লেও সেই সঙ্গে দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঘরবাড়ি ও জনসংখ্যা। সেই হিসাবে এখনো পিছিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা। ফায়ার স্টেশনগুলোয় এখনো পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জাম নেই। প্রত্যাশিত বিশ্বমানের প্রশিক্ষণও পাননি অধিকাংশ কর্মী। বছরের পর বছর মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে নিজস্ব কৌশল কাজে লাগিয়ে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এভাবে কাজ করতে গিয়ে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। এমন বাস্তবতায় সারা দেশের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই উদ্যোগে আধুনিক যন্ত্রপাতি যুক্ত করার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধার দিকেও।

আর সেসব উদ্যোগ নিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দীন। এরই মধ্যে তার উদ্যোগেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য চালু হয়েছে আজীবন রেশন সুবিধা। এই উদ্যোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সায় দেওয়ায় এখন থেকে পুলিশের মতো ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আজীবন রেশন সুবিধা পাবেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যাতে সরকারিভাবে হজ পালনের সুযোগ পান সে উদ্যোগও তার হাত দিয়ে নেওয়া। অগ্নিঝুঁকি কমাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার অনুমতি চেয়ে একটি প্রস্তাব ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যা এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, চার হাজার লিটারের বেশি ধারণ ক্ষমতার অত্যাধুনিক ওয়াটার ব্রাউজার যুক্ত করা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার যন্ত্রের বহরে। এটা হবে সবচেয়ে বেশি পানি ধারণ ক্ষমতার গাড়ি। বিভিন্ন প্রকল্পাধীন ফায়ার স্টেশনের অনুকূলে ৬৯৮টি পদ সৃষ্টির পাশাপাশি কর্মীদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, “২০২২ সালে আমরা অগ্নিবীর খেতাব অর্জন করি। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩’।”

তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- অগ্নিবীর খেতাব পাওয়া সদস্যদের পরিবারের কাছে ঈদ উৎসবে উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য স্থায়ী আবাসনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে কর্মীদের মধ্যে কাজের গতি বাড়ে।’

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে চালু থাকা ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৫০১ টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজধানী ঢাকায় ১১৫টি। পানিবাহী গাড়ির সংখ্যা ৫৬২টি। বিশেষ পানিবাহী গাড়ির সর্বোচ্চ ২১ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। পাম্প ১ হাজার ৬০২টি। অ্যাম্বুলেন্স ১৯৫টি। ২৪ তলা ভবন পর্যন্ত কাজ করতে সক্ষম পাঁচটি টিটিএল মেশিন রয়েছে। আরও আছে নানা যন্ত্রপাতি। যা ব্যবহার করে দ্রুত অগ্নিনির্বাপন করা সম্ভব।

জানা গেছে, ২০০৭ থেকে ২০২৩ সাল অর্থাৎ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফায়ার সেফটি ট্রেনিংয়ের আওতায় অগ্নিপ্রতিরোধ, অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা ও ফায়ার ড্রিল বিষয়ে ২৪ হাজার ৫২টি কোর্সের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, ২০০৯ সালে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের জনবল ছিল ছয় হাজারের কিছু বেশি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির জনবল ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে দেড়শ’র বেশি ফায়ার স্টেশনের কাজ চলমান রয়েছে। এই স্টেশনগুলোর কাজ শেষ হলে জনবলের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬ হাজার। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩১ হাজার করার জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে জনবল বাড়ানো ও তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। সেইসঙ্গে উদ্ধার অভিযান যাতে সহজ হয় সেজন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তবে বড় কোনো দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা এখনও গড়ে ওঠেনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের। অদূর ভবিষ্যতে সে সংকট কাটিয়ে ওঠারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তারা।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আগে উচ্চ ল্যাডার ছিল না। এখন ২৪ তলা পর্যন্ত আমরা পৌঁছাতে পারি। এখন আমাদের জনবল রয়েছে, প্রশিক্ষিত জনবল আছে। আরও উন্নত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভূমিকম্পের মতো বড়ধরনের দুর্যোগ দ্রুত মোকাবিলার সক্ষমতা না থাকলেও অগ্নিনির্বাপনে ব্যবস্থা নিতে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে।’

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এখন আর আগের পরিস্থিতি নেই। এখন অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনা স্থলে ছুটে যান। আগে ৯ থেকে ১০ তলার ওপরে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হতো। এখন ২৪ তলা পর্যন্ত আগুন নেভাতে সক্ষম ফায়ার সার্ভিস। এতেই প্রমাণ করে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বেড়েছে।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন করার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন, তা চলমান বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

প্রশিক্ষণ ফায়ারকর্মী রেশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর