‘বিদেশি হস্তক্ষেপে নির্বাচনের ফল পূর্বনির্ধারিত হয়ে যেতে পারে’
১৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৫৯
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ দূত মো. ওয়ালিউর রহমান বলেছেন, ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের ফলে নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত এবং জনগণের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে।’ এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) আয়োজিত ‘স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর বিদেশি হস্তক্ষেপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ কনফারেন্স হলে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন হলো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা প্রয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হয়। কিন্তু একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থায় বিদেশি হস্তক্ষেপ একটি গুরুতর সমস্যা। বিদেশি হস্তক্ষেপের ফলে নির্বাচনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা হুমকির সম্মুখীন হয়, এবং জনগণের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের প্রচার করার পেছনে কিছু ভূমিকা রয়েছে। অতীতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া এবং সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বাংলাদেশের নির্বাচনগুলিকে আরও গণতান্ত্রিক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক করতে সহায়তা করেছে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইইউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক শক্তির বক্তব্য ও ভূমিকা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপের পর্যায়ে রূপ নিচ্ছে। যেখানে আন্তর্জাতিক আইনে, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর বিদেশি হস্তক্ষেপকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র ও সংস্থার এমন ভূমিকা আন্তর্জাতিক আইনের এক প্রকার পরোক্ষ লঙ্ঘন বলে আমি মনে করি।’
যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় যদিও অনেকের মতে তারা এটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু একত্রে এই বিষয়টিও লক্ষণীয় যে চলমান বাইডেন প্রশাসন প্রথম থেকেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতর মূলভিত্তি হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তাই এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আশ্চর্যজনক নয়। কিন্তু সর্বশেষ বাংলাদেশের নির্বাচনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ভিসানীতি সরাসরি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে হস্তক্ষেপের পর্যায়ে চলে গেছে বলে আমি মনে করি।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রভাবে নির্বাচন ব্যবস্থায় যেসব সমস্যা দেখা যায় তা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতাকে হুমকির সম্মুখীন করে। বিদেশি হস্তক্ষেপের ফলে নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত হয়ে যেতে পারে, এবং জনগণের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে। বিদেশি হস্তক্ষেপের ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা হারায় এবং জনগণ নির্বাচনে আস্থা হারাতে পারে। সর্বোপরি দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি তৈরি হতে পারে।’
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ উপাচার্য ও ইআরডিএফবির সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান। তিনি বলেন, ‘এখন বিশ্বের কিছু পরাশক্তি বাংলাদেশের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাদের আগ্রহের মাত্রা বাড়তে বাড়তে এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে। বিদেশি হস্তক্ষেপ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা মেনে নিতে পারি না এবং তা কখনো মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের এখনও অনেক কিছু করার বাকি আছে।’
যারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ করেন তারা কি যেকোনো ইনডেক্সে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে আছেন, এমন প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, ‘আজ মানবাধিকারের কথা বলেন, বাক স্বাধীনতার কথা বলেন, কিংবা অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা বলেন- যেকোনো ইনডেক্সে সেই পরাশক্তি দেশগুলো এক নম্বরে নেই। বাংলাদেশ আজকে একটি জিও পলিটিক্যাল বাস্তবতার মধ্যে আছে। বাইরের একটি রাষ্ট্র যার একটা দূতাবাস হয়তো এখানে আছে। তারা কীভাবে চিহ্নিত করবে অমুক অমুক নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবেন?’
ইআরডিএফবির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
ইআরডিএফবির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্ত, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদসহ অনেকে।
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসেফিক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে ২০২২ সালের ১ অক্টোবর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি শিক্ষা, গবেষণা এবং উন্নয়ন বিষয়ে বহু সভা সেমিনার আয়োজন করেছে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও