উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করতে বিদেশি হস্তক্ষেপ চলছে: মাকসুদ কামাল
১৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৪৮
ঢাকা: বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করতেই বিদেশি হস্তক্ষেপ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) আয়োজিত ‘স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর বিদেশি হস্তক্ষেপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ কনফারেন্স হলে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বস্তুতপক্ষে আমাদের দেশে এখন যে বিদেশি হস্তক্ষেপ চলছে, উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করার জন্যই। পৃথিবীর কিছু মোড়ল রাষ্ট্র তাদের দেশের বাইরে গিয়েও তাদের শাসন-শোষণ অব্যাহত রাখতে চায়। সেজন্য তারা চায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যাহত হোক, বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল থাকুক, রিজিম চেঞ্জ হোক। এই রিজিম চেঞ্জ করার জন্য আজ তারা উঠেপরে লেগেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী দেয়, আমরা ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিরুদ্ধে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, সেদিন আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়া আমাদের পাশে ছিল। সুতরাং বুঝতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর কোন একক মোড়ল রাষ্ট্র নয়। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মধ্য দিয়ে একটি দেশের রিজিম পরিবর্তন হয়ে যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন ভিসা নীতি কম্বোডিয়ায় আরোপ করা হয়েছে। আরও কিছু দেশে আরোপ করা হয়েছে। এজন্য রিজিম চেঞ্জ হয় নাই। আমাদের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নাই। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়েই এ জাতির ভয় কেটেছে। এখন দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা, সুতরাং জাতির জনকের কন্যাকে ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নাই। এখন আমাদের দরকার হবে যে কোন প্রতিকূলতার মধ্যে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসা।’
ঢাবি উপ উপাচার্য আরও বলেন, ‘আজ তাদের গাত্রদাহ হলো- ছলে বলে কৌশলে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়া। যদি শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে শেখ হাসিনা নয়; পরাজিত হবে এদেশের জনগণ।’
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ দূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন হলো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা প্রয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হয়। কিন্তু একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থায় বিদেশি হস্তক্ষেপ একটি গুরুতর সমস্যা। বিদেশি হস্তক্ষেপের ফলে নির্বাচনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা হুমকির সম্মুখীন হয় এবং জনগণের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে যত ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, যত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে- আমরা বিদেশি শক্তিকে বলে দিতে চাই; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলে দিতে চাই, আমরা একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি, আমরা বীরের জাতি, আমরা বিজয়ী জাতি। এই জাতিকে কখনোই মাথা নোয়ানো যাবে না। এটিই আমাদের শিক্ষা। এই শিক্ষা নিয়েই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ উপাচার্য ও ইআরডিএফবির সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান। তিনি বলেন, ‘এখন বিশ্বের কিছু পরাশক্তি বাংলাদেশের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাদের আগ্রহের মাত্রা বাড়তে বাড়তে এখন আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে। আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা মেনে নিতে পারি না। এবং তা কখনও মেনে নেওয়া হবে না।’
বুয়েট উপ উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমাদের একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আছে। যেটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা আইন অনুযায়ী কাজ করে থাকে।’
আলোচনা সভায় বক্তারা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদার আসনে আসীন করেছে। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটে বিশাল অর্থনীতির অনেক দেশও যেখানে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর বিদেশি হস্তক্ষেপ কখনোই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।’
ইআরডিএফবির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং ইআরডিএফবির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্ত, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদসহ অনেকে।
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসেফিক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে ২০২২ সালের ১ অক্টোবর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি শিক্ষা, গবেষণা এবং উন্নয়ন বিষয়ে বহু সভা সেমিনার আয়োজন করেছে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও