একই দিনে সাজা-জামিন-স্থগিত— মন্ত্রী বললেন আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি
১৫ অক্টোবর ২০২৩ ২০:২৯
ঢাকা: আদালত অবমাননার দায়ে কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেল রানাকে সাজা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সকালে এ রায়ের তিন ঘণ্টা পরই আপিল দায়েরের শর্তে দুপুরে তাকে ৩০ দিনের জন্য জামিন দেওয়া হয়। পরে আপিল করলে বিকেলে চেম্বার আদালত তার সাজা স্থগিত করেন।
বিচার বিভাগের অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তার সঙ্গে ঘটেছে এমন ঘটনা। এ ঘটনায় বিচারব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া মিলেছে। তবে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক মনে করছেন, এ ঘটনায় আইনের কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটেনি। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।
রোববার (১৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলে মন্ত্রী সারাবাংলাকে এ কথা বলেন। এর আগে হাইকোর্ট একটি ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করলেও সে আদেশ অমান্য করে সোহেল রানা বিচারকাজ চালিয়ে যান। এ ঘটনায় বিচারক সোহেল রানার ব্যাখ্যায় হাইকোর্ট সন্তুষ্ট না হলে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিলেন। সোহেল রানা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত আছেন।
আরও পড়ুন- সকালে কারাদণ্ড, দুপুরে জামিন, বিকেলে সাজা স্থগিত
সোহেল রানাকে প্রথমে সাজা ও তারপর জামিন দেওয়া এবং একই দিনে সাজা স্থগিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী সারাবাংলাকে বলেন, ‘রায় হয়েছে। রায়ে একমাস সাজা হয়েছে। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরে (ফৌজদারি কার্যবিধি) আপনারা দেখবেন, আদালত যদি এক বছর পর্যন্ত সাজা দেন, সেই আদালত আপিল করার শর্তে তাকে জামিনও দিতে পারেন। উনারা (হাইকোর্ট) সেই জামিন দিয়েছেন এবং অ্যাপিলেট ডিভিশনে (আপিল বিভাগ) তাৎক্ষণিক সেই আপিল করা হয়েছে। এতে আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি।’
সোহেল রানা যা করেছেন তা তার আইনি অধিকার— এমনটি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই অধিকার সবারই রয়েছে। যদি রায়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে মনে করেন এবং তিনি যদি সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করা উচিত বলে মনে করেন, অবশ্যই সেই অধিকার তার আছে। সংবিধান এই অধিকার সবাইকে দিয়েছে। সেই অধিকারবলেই তিনি (সোহেল রানা) আদালতে গেছেন।’
গত বৃহস্পতিবারের (১২ অক্টোবর) এ ঘটনার পর রাতেই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমি রাতে বৈঠক করেছি। প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের অভিভাবক— এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমিও দেশের আইনমন্ত্রী। দেশের বিচারব্যবস্থা সঠিকভাবে চলুক, এটি জনগনের আকাঙ্ক্ষা। সেই আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে আমারও দায়িত্ব আছে। কোনো সময়ে কোনো অবস্থায় জনগণ আদালতের কার্যক্রম ও ন্যয়বিচার থেকে যেন বঞ্চিত না হন, তা দেখার দায়িত্ব আমার। আমি সেজন্য তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। বৈঠকের কারণে কারও কোনো কাজে ব্যাঘাত ঘটেনি।
এর আগে অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার সোহেল রানার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করলে সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। তবে বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এস মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তার নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনার আবেদন গ্রহণ না করে তাকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সেইসঙ্গে তাকে সাত দিনের মধ্যে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে এ রায় দেওয়া হয়। পরে দুপুর ২টার কিছু পরে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে একই হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩০ দিনের জন্য জামিন দেন সোহেল রানাকে। ওই দিনই বিকেল ৫টার পর আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত তার কারাদণ্ড ও জরিমানার রায় স্থগিতের আদেশ দেন।
আরও পড়ুন-
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
অতিরিক্ত জেলা জজ অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আইনমন্ত্রী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক