Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অক্টোবরেও কমছে না ডেঙ্গুর তীব্রতা

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৬ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৪৭

ঢাকা: চলতি বছরে এরই মধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে ২০২২ পর্যন্ত বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৮১ জন। সেখানে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই মারা যান ৩৯৬ জন। ধারণা করা হচ্ছিল, অক্টোবরে এসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমবে। বাস্তবে সেটি ঘটছে না। অক্টোবরের প্রথম ১৫ দিনেও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনের প্রায় সমান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, অক্টোবরের প্রথম ১৫ দিনে ৩৬ হাজার ২০৮ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮০ জনের। মূলত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে ব্যাপক হারে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পেরিয়ে এসে অক্টোবরেও সেই প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের শেষ ১৫ দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৩৬৫ জন। এই ১৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৩৩ জন।

এরপর আগস্টের প্রথম ১৫ দিনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন ৩৮ হাজার ৪৩ জন। এই সময়ে মৃত্যু হয় ১৭৫ জনের। আগস্টের শেষ ১৬ দিনে অবশ্য ডেঙ্গু রোগী সামান্য কমেছে। এই সময়ে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩৩ হাজার ৯৩৩ জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৬৭ জন।

সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বেড়ে যায়। এ মাসের প্রথম ১৫ দিনে দেশে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন ৩৮ হাজার ১৫৬ জন। মারা যান ১৯৭ জন। পরে ১৫ দিনে এই সংখ্যা ছিল আরও বেশি— ৪১ হাজার ৪৪২ জন। দুই সপ্তাহে দেশে এত বেশি ডেঙ্গু আর কখনো দেখা যায়নি। এই সময়ে মৃত্যুও হয়েছে সর্বোচ্চ ১৯৯ জনের।

বিজ্ঞাপন

সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে বলে ধারণা করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এ মাসের প্রথম ১৫ দিনের পরিসংখ্যান আগেই তুলে ধরা হয়েছে। সে পরিসংখ্যান বলছে, এই ১৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা সেপ্টেম্বরের প্রথম বা শেষ ১৫ দিনের চেয়ে কম হলেও তা আগস্টের শেষ ১৫ দিনের চেয়েও বেশি।

কীটতত্ত্ববিদ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যেসব সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, এসব ব্যক্তি আগেই আক্রান্ত হয়েছেন। একটি ডেঙ্গুর সংক্রমণ শনাক্ত হতে কখনো কখনো ৮ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সে হিসাবে গত কয়েক দিনে যাদের ডেঙ্গু সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তারা সংক্রমিত হয়েছেন আরও আগেই।

বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবেশি হওয়ার কথা জানিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বরে কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা প্রত্যাশিত ছিল না। অক্টোবরেও বৃষ্টি কিন্তু থেমে থেমে হচ্ছে প্রায়ই। এরকম বৃষ্টি হতে থাকলে মশা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতেও সময় লাগবে। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে তখন হয়তো প্রকোপ কিছুটা কমে আসবে।

একই কথা জানিয়ে ড. রুহুল আমিন বলেন, এখন যেসব লার্ভা আছে, সেগুলো অ্যাডাল্ট হয়ে যাচ্ছে বা যাবে। সে হিসাবে অক্টোবরেও ডেঙ্গুর দাপট থাকবে। যদি অক্টোবরে আর বৃষ্টিপাত না হয় এবং তাপমাত্রা কমে যায়, তাহলে এডিস মশার ডিমগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। ডিম পাড়লেও পরিপক্কতা পাবে না। তাই মশা কমে আসবে। তখনই কেবল ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে।

এসব বিশেষজ্ঞের বক্তব্যে এটি স্পষ্ট, ডেঙ্গু যেভাবে এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে, তার প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে না।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

অক্টোবর ডেঙ্গু রোগী ডেঙ্গুর তীব্রতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর