নিজ কর্মদক্ষতায় নারীদের অধিকার অর্জনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:১৮
ঢাকা: অধিকার নিজের কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়েই অর্জন করার আহ্বান জানিয়ে নারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারীরা যদি নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তাহলে পরমুখাপেক্ষী হতে হবে না। আর আন্দোলন করে অধিকার আদায় করতে হবে না। অধিকারটা নিজের কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়েই আমরা অর্জন করব।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে গণভবনে নারী উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা অঙ্গসংগঠনের সমাবেশে তিনি এ সব কথা বলেন। এর আগে, সকাল ১০টার দিকে ধানমন্ডিতে জয়িতা টাওয়ারের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন, জয়িতা টাওয়ারে স্থাপিত জামদানি গ্যালারি ও জয়িতা মার্কেট প্লেস উদ্বোধন করেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত জয়িতা টাওয়ারের উদ্বোধন শেষে গণভবনের খোলা মাঠে আয়োজিত নারী সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা মেয়াদে নারীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টিসহ কর্মসংস্থানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
‘আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, অধিকার অধিকার বলে চিল্লালে হবে না। অধিকার হবে তখন একটি নারী যখন ১০ টাকা উপার্জন করে আঁচলে বেঁধে ঘরে আসে। তাহলে ওই পরিবারে তার একটি স্থান হয়। সংসারে তার কথার একটি মূল্য থাকে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা; একজন নারীর জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। এ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলেই মেয়েদের অন্য কারও মুখাপেক্ষী হতে থাকতে হবে না।’
জয়িতা টাওয়ারের উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে একটি মহৎ কাজ করা হলো বলে মনে করেন। এ ছাড়া ভবিষ্যতে প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহরেও জয়িতা টাওয়ার করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মেয়েদের স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে পাসের হার বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন বলেন, ‘এখন আমরা আনন্দিত। আমাদের মেয়েদের সংখ্যাই কিন্তু এখন বেশি। ছাত্রীর সংখ্যা বেশি, ছাত্রের সংখ্যা কম। অনেক দেশ বলে জেন্ডার ইক্যুইটি আমার তো উল্টো হয়ে গেছে। ছেলেরা কেন স্কুলে যায় না সেটি খুঁজে বের করতে হবে।’
খেলাধুলা সংস্কৃতিচর্চা সবদিক থেকেই মেয়েরা এগিয়ে আছে বলেও জানান তিনি।
প্রমিলা ফুটবল চালু করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের কয়েকটা এলাকা আছে, সেখানে মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেবে না। সে জন্য পরের বার যখন সরকারে আসি প্রাইমারি থেকে ছেলেদের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফুটবল টুর্নামেন্ট আর মেয়েদের জন্য বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু করি। এখন ক্রিকেট ফুটবল ভারোত্তলন থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে আছে।’
নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার সব ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
কোভিড-১৯ অতিমারির ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দাসহ মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে নারীদের কৃষি উৎপাদনের দিকেও নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা নিজেদের উৎপাদন নিজেরা করব। নিজের পায়ে দাঁড়াব। কারও কাছে হাত পেতে চলব না, মাথা উঁচু করে চলব। আমি মনে করি, নারীরা যদি কাজ করে নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তাহলে পরমুখাপেক্ষী হতে হবে না। কেউ আর দূর দূর ছেই ছেই করবে না। আর ওই আন্দোলন করে অধিকার আদায় করতে হবে না। অধিকারটা নিজের কাজের মধ্য দিয়ে, জ্ঞানের মধ্য দিয়ে, কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়েই আমরা অর্জন করব। সেটি যেন মাথায় থাকে।’
নারী উদ্যোক্তাসহ নারী নেতাদের গণভবনে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকদিন থেকে অনেকে বলছিলেন ভাবলাম একবার আমরা দাওয়াত দেই। কারণ সময় খুব কম, প্রতিদিন খাটতে হয়। তবু আপনারা কষ্ট করে এসেছেন। আমি মনে করি গণভবনের মাটি আমার বোনদের পদাপর্ণে আজ ধন্য হয়েছে।’
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি ও জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান, মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
অনুষ্ঠানে ‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সারাবাংলা/এনআর/একে