ইজারাদারের ওপর হামলায় খেয়াঘাট বন্ধ, পারাপারে ভোগান্তি
১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৩
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী): কুয়াকাটার কলাপাড়া ও তালতলীর মধ্যবর্তী জালালপুর ও সওদাগর পাড়ার খেয়াঘাটের ইজারাদারকে মারধর ও চাঁদা দাবিসহ খেয়াঘাটে যেতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সওদাগর পাড়ার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য জসিম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুদিন খেয়া বন্ধও ছিল। তাতে দুই পারের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে পারাপারে। তালতলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হস্তক্ষেপে ফের খেয়াঘাট চালু হলেও ইজারাদার আবারও হামলার ভয়ে ঘাটে যেতে পারছেন না।
জানা যায়, নিজাম পাহলান বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে সওদাগর পাড়ার খেয়াঘাট সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় ইজারা নেন। নিজামের অভিযোগ, ইজারা নিয়ে ঘাট পরিচালনা করতে গেলে সওদাগর পাড়ার ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পাশাপাশি ইউপি সদস্যের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে খেয়া পারাপারের টাকা নেওয়া যাবে না বলে শর্ত দেন।
নিজাম পাহলানের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কামাল গাজীসহ সাত-আটজন নিজাম পাহলানের ওপর হামলা চালান। আহত অবস্থায় তাকে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে বন্ধ হয়ে যায় খেয়া পারাপার।
নিজাম পাহলানের ভাগনে বলেন, মামাকে মারধরের পরে অনেক যাত্রী জমা হয়ে যায় ঘাটে। আমি তাদের পার করতে গেলে ওপারের স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম গাজী আমাকে ডেকে বলেন, আমি বা আমার মামা বা অন্য কেউ যেন খেয়াঘাটে না যাই। পরে আমরা ছোট ছোট নৌকায় করে যাত্রী পারাপার করেছি।
নিজাম পাহলানের ছোট ভাই মিজান পাহলান বলেন, আমরা প্রায় তিন বছর ধরে খেয়াঘাট পরিচালনা করে আসছি। ওপারের জসিম মেম্বারসহ তার পরিবারের লোকজন আমাদের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার ভাইয়ের ওপরে হামলা চালায়। আমাদের কাছ থেকে তারা খেয়া নিয়ে যাত্রী পারাপার করে। এতে আমাদের অর্থিক ক্ষতি হয়। হামলার পর ভাইয়ের চিকিৎসার পেছনেও অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে।
এ ঘটনার প্রভাব পড়েছে খেয়াঘাটের ওপর। সেখান দিয়ে ঠিকঠাকমতো খেয়া পারাপার না হওয়া ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের। মাহমুদা নামের এক যাত্রী বলেন, খেয়াঘাটের ঝামেলায় অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অথচ জরুরি কাজে আমাদের নিয়মিত এ পথে যাতায়াত করতে হয়। খেয়াঘাট নিয়ে যে ঝামেলাই থাকুক, দ্রুত সমাধান করা উচিত। কারণ খেয়াঘাট বন্ধ থাকলে আমাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না।
এ বিষয় জানতে চাইলে ইউপি সদস্য জসিম গাজী মোবাইল ফোনে বলেন, খেয়া নিয়ে কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই। তবে এই খেয়া পরিচালনা করা নিজাম পাহলান মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। আমি ইউপি সদস্য। সে হিসাবে আমার কাছে অনেক অভিযোগ আসে। আমি অনেকবার সাবধান করে দিলেও তারা পরিবর্তন হয়নি।
নিজাম পাহলানের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জসিম গাজী বলেন, আমার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। তবে মারামারি হয়নি। তারা মিথ্যা বলছেন।
তালতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার টুম্পা বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তাদের উপজেলায় আসতে বলছি এবং পুনরায় খেয়া চালুর নির্দেশ দিয়েছি। কারণ ওখানে ঝামেলা হলে খেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হবে। উভয় পক্ষ এলে আমি কথা বলে সমাধান করে দেবো।
সারাবাংলা/টিআর