সিনিয়রকে যৌন হয়রানি, জবি শিক্ষার্থী কারাগারে
২০ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:০৮
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আদালতে উপস্থাপন করা হলে বিচারক অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) জবির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরের সামনে ওই নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করা হয়। ভুক্তভোগী জবির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত মেহেদী হাসান সৈকত বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
বৃহস্পতিবার যৌন হয়রানির ঘটনায় ওই নারী শিক্ষার্থী জবি প্রক্টর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ সময় সৈকতকে আটক করে পুলিশে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে বৃহস্পতিবার রাতেই ওই নারী শিক্ষার্থী কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। পুলিশ ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার সৈকতকে আদালতে উপস্থাপন করে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বলেন, সৈকত অনেক দিন ধরে আমাকে জ্বালাতন করছিল। মেসেঞ্জারে বাজে ভাষায় মেসেজ দিত। তবে আমি পাত্তা দিতাম না। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমি শান্ত চত্বরে ভিডিওধারণের সময় সৈকত আমাকে যৌন হয়রানি করে। আমি ভয় পেয়ে আমার পাশে থাকা এক বন্ধুকে জানালে সৈকত তাকেও মারধর করে।
ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় মারধরের শিকার হন নাট্যকলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বিলাস দাস। তিনি বলেন, ‘সৈকত জুনিয়র হয়েও আমাদের বান্ধবীকে যৌন হয়রানি করেছে। শুধু তাই নয়, এ কথা আমাকে বললে সে আমার গায়েও হাত তুলেছে। এ ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন।’
শ্লীলতাহানির অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান সৈকত সহকারী প্রক্টরের সামনে বলেন, ‘আমি ওই মেয়েকে পছন্দ করি। কিন্তু সে আমার ডাকে সাড়া দেয় না।’ পরে তিনি ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিতে রাজি হন। তবে ভুক্তভোগী আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সিসি ক্যামেরা দেখা হবে। অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ওই ছেলেকে থানায় পাঠানো হয়েছে।’
যৌন হয়রানির মামলা করতে প্রথমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যান সূত্রাপুর থানায়। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো ওই শিক্ষার্থীকে আমরা আটক করেছিলাম। পরে ঘটনাস্থল কোতোয়ালি থানায় হওয়ায় আমরা সেখানে মামলা করতে পাঠিয়ে দিই।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ওই ছাত্রী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মেহেদী হাসান সৈকতকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে শুক্রবার আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সৈকতের ছাত্রলীগসংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন বলেন, ‘সে ছাত্রলীগের কেউ না। কখনো ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতেও অংশ নেয়নি। তাছাড়াও অপরাধী যেই হোক, ছাত্রলীগ কাউকে ছাড় দেবে না। সে এমন অপকর্ম করে থাকলে আমিও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শাস্তির দাবি জানাই।’
সারাবাংলা/একে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যািলয় জবি শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি শিক্ষার্থী কারাগারে শ্লীলতাহানি হয়রানি