দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প: ৭ বছরে অগ্রগতি ৫০ শতাংশ
২১ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৩৫
ঢাকা: প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি নেই, এরপরও বাড়ছে ব্যয় ও মেয়াদ। ৭ বছরে এটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। ‘অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধি (প্রভাতী)’ শীর্ষক প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন চিত্র। ফলে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাবটি নিয়ে গত ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হক।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৭৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ১৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৯২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২৭৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং প্রকল্প ঋণ থেকে ৫২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এটি ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ২০১৭ সালের রেইট সিডিউল অনুযায়ী প্রণয়ন করা হয়েছিল । এজন্য ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, এক হাজার ৬৮৮ মিটার কালভার্ট ও সিডি অবকাঠামো নির্মাণ, ২৫ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়ন, ৬১ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, ২০টি ভবন, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ২০টি বড় বাজার, ১০০টি মধ্যম বাজার এবং ১৫টি ছোট গ্রাম বাজার উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এলজিইডি অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধিও জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২২৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং প্রকল্প ঋণ সহায়তা থেকে ৫২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে আইএমইডির সম্মতির জন্য পরিকল্পনা কমিশন এটির মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়। অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ২০১৭ সালের রেইট সিডিউল অনুযায়ী প্রণয়ন করা হয়েছিল। এরমধ্যে নির্মাণ কাজের ব্যয় বৃদ্ধি, বর্তমান ডলার রেইট বৃদ্ধির কারণে ফিনানসিং এগ্রিমেন্টে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া, স্থানীয় জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত কাজ অন্তর্ভুক্ত করা এবং এমটিআর মিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নির্মাণ কাজের মূল্য বৃদ্ধির জন্য ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ রেসপন্স প্রোগ্রামে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে (এলসিএস) ব্যয় করা হয়। এই অর্থ সংশোধিত ডিপিপিতে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা কারণে মোট ৯২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত: মূল অনুমোদিত ২০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ স্থলে আরডিপিপিতে ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু একই ধরনের কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং এলজিইডি অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ভৌত অগ্রগতি ৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩৬৭ কোটি টাকা বা ৪৮ শতাংশ হওয়ার কারণ সভায় জানানো হবে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হক সারাবাংলাকে বলেন, পিইসি সভায় বসে প্রকল্পের ধীর গতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উচ্চতায় ব্রিজ নির্মাণের সংস্থান ছিল, পরবর্তীতে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী সেটি অনেক বেশি উচ্চতা বাড়াতে হচ্ছে। ফলে নতুন করে এপ্রোচ সড়ক ও ব্রিজের মিটার বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে। এছাড়া যেহেতু প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থায়ন আছে সেহেতু মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে। ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলা। রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর, সাদুল্যাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিপুর, চিলমারী, রৌমারী, উলিপুর, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা। রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলা। নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা। লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস