আগুন সন্ত্রাসীদের বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
২১ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:০২
ঢাকা: অগ্নিসন্ত্রাসকারীদের চলমান মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের শাস্তি এতো দেরিতে হবে কেন? তাদের এই বিচার কাজ কেন দ্রুত হবে না? একে একে সকল সামনে আসছে। এই সমস্ত অপরাধীর মামলাগুলো শুধু চালালেই হবে না তারা যেন যথাযথ সাজা পায় সেই ব্যবস্থা আপনাদের করতে হবে। আপনাদের কাছে এটা হলো আমার দাবি।
শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তার আগে সকাল ১১টা ২৪ মিনিটে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত নির্মিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ১৫ তলা ভবন উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি আমাদের কতশত নেতাকর্মী হত্যা করেছে। চোখ তুলে নিয়েছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হাড় গুঁড়ো গুঁড়ো করে হত্যা করেছে। এরপর ২০১৩ সালে তারা আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করল।
তারা ২৯ জন পুলিশ হত্যা করেছে। ৩ হাজা ২২৫ মানুষকে পুড়িয়েছে, ৫০০ মানুষকে হত্যা করেছে, ৩ হাজার ৮৮২টা গাড়ি, ২৯টা রেল, ৯টি লঞ্চ এবং সাধারণ মানুষের প্রাইভেটকার সিনএনজিসহ বিভিন্ন কিছু আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে।’
চলমান বাস ট্রাকের আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করাসহ অগ্নিসন্ত্রাসের কথা স্মরণ করিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত, জেলায় জেলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলাগুলো চলমান। এই মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে জবে। এটি আইনজীবী কিংবা সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে আমার অনুরোধ।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এরা তো অন্যায় করেছে। আমার মনে হয় আগুন সন্ত্রাসীদের হাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব থেকে বেশি নির্যাতিত। তাহলে তাদের শাস্তি হবে না কেন? তাদের শাস্তি এত দেরিতে হবে কেন? তাদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ কেন দ্রুত হবে না? এ ব্যাপারে আপনাদের অবশ্যই নজর দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে। অনেকেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিল। এখন তো আন্দোলনের সুযোগ দিচ্ছি। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু তাদের সময়ে আমরা তো আন্দোলন করতে পারিনি। আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। কাজেই এই আগুন সন্ত্রাসী, অপরাধীদের মামলাগুলো শুধু চালালেই হবে না। তারা যেন সহজে সাজা পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে, এটা আপনাদের কাছে আমার দাবি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কারণ বিচারহীনতা এটা যেন না চলে। মানুষ যেন ন্যায় বিচার পায়। স্বজন হারার বেদনা নিয়ে বেচে থাঁকা এটি কি কী কষ্টের, আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি তা বুঝি।’
জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নিয়ে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে লাশ গুম করারও প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার বিচার করতে পেরেছি। এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করি। ৩ নভেম্বর জেলহত্যার বিচার করতে পেরেছি। কিন্তু এই হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী যে জড়িত এটি তো প্রমাণিত সত্য। জিয়াউর রহমান যদি জড়িতই না থাকবে ক্ষমতা দখলের সব থেকে বেনিফিশিয়ারি কে? জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় এসে এই খুনিদেরকে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে বিভিন্ন দেশে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। কাজেই কে লাভবান সেটি তো জিয়াউর রহমান নিজেই।’
‘কাজেই সেই বিএনপি-জামায়াতের যারা এদেশের মানুষের ওপর আক্রমণ করে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তাদের লেলিয়ে দেয়। অবশ্যই তাদের বিচার বাংলাদেশে হতে হবে। কাজেই তাদের বিচার যেন হয় সে ব্যবস্থা আপনারা করেন।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু।
সারাবাংলা/এনআর/একে