নিতাই হত্যার ১১ বছর, বিচার দেখে যেতে পারেননি মা-বাবা
২২ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০৬
ঢাকা: ২০১২ সালের ২৩ অগাস্ট রাজধানীর বনানীতে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত (নিতাই) সন্ত্রাসীদের হাতে নিজ বাড়িতে খুন হয়। ওই ঘটনায় তার বাবা তড়িৎ কান্তি দণ্ড অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলার ১১ বছর পার হলেও এখনও বিচার শেষ হয়নি। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছেন, চলতি বছরের মধ্যে আলোচিত মামলার বিচার শেষ হবে।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য তারিখ ধার্য রয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। তবে তা শেষ না করে আগামী ২৯ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, আলোচিত মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হয় সেই চেষ্টাই রাষ্ট্রপক্ষ থেকে করা হচ্ছে। মামলাটিতে মোট আসামি ১০ জন। তাদের সবাই কারাগারে। তবে এই ১০ আসামি বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। ছিনতাইয়ের সময় কেউ যদি তাদের বাধা দেয় তাকেও তারা হত্যা করতো। মামলার সকল আসামি হত্যার বিষয়ে আাদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে ভিকটিমের পরিবার ন্যায় বিচার পাবে। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি করে এই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
নিহত ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্তের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবারের এক সদস্য জানান, ‘ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ছিল আমাদের পরিবারের বটগাছ। সব কিছুর সমাধান আমরা তার কাছে পেয়েছি। একটুও অভাব-অনটন বুঝতে দেননি তিনি। কিন্তু হঠাৎ নিতাই দাদার মৃত্যুতে আমাদের পরিবার এলোমেলো হয়ে গেল। ছেলের হত্যার বিচারও দেখে যেতে পারলেন না তার পিতা-মাতা। আমাদের পরিবারের কেউ খোঁজ খবর রাখে না। মাঝে-মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক ফোন করলেও এখন তাও বন্ধ হয়ে গেছে। সংসারের অভাবের কারণে মামলার খোঁজ-খবরও নিতে পারছি না। দেখতে দেখতে ১১ বছর পার হয়ে গেল। জানি না মামলাটির কী হবে। তবে আমরা চাই আসামিদের কঠিন শাস্তি হোক। রাষ্ট্রপক্ষের কাছে আমরা ন্যায় বিচার চাই।’
এদিকে আসামিদের পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, আসামিরা পরিস্থিতির শিকার। ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নন। মামলার দায়েরের সময় এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ ছিল না, তবে চার্জশিট এসেছে। আশা করছি, মামলাটির রায় ঘোষণা হলে আসামিরা ন্যায় বিচার পাবেন।’
মামলার আসামিরা হলেন- ডা. নিতাইয়ের গাড়িচালক কামরুল হাসান অরুণ, মাসুম মিন্টু ওরফে মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, মাসুম ওরফে প্যাদা মাসুম, রফিকুল ইসলাম, সাঈদ ব্যাপারী, বকুল মিয়া, মো. সাইদ মিজি, মো. আবুল কালাম ওরফে পিচ্চি কালাম, সাইদুল ও ফয়সাল। বর্তমানে সবাই কারাগারে রয়েছেন।
২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গাজী আতাউর রহমান। চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘চুরি করতে গিয়ে তারা ডা. নিতাই চন্দ্রকে হত্যা করেন। আসামিরা সবাই ফৌজদারি কার্যবিধি আইন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই বছরের ২২ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এছাড়াও পাঁচ আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন।
এ মামলার আসামি রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও সাঈদ ব্যাপারী ওরফে আবু সাঈদকে সংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে এখনো সংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়নি।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ২২ আগস্ট রাত ১১ টার সময় মহাখালী ডা. কোয়াটারের বাসার নিচতলায় ভিকটিমের বাবা-মা এবং ২য় তলায় ডা. নারায়ন চন্দ্র দত্ত (নিতাই) ঘুমাতে যায়। ওইদিন ভোর ৩ টা ৪৫ মিনিটের দিকে নিতাইতের মা মঞ্জু দত্ত দ্বিতীয় তলায় আওয়াজ শুনতে পায়। পরে তিনি দ্বিতীয় তলায় উঠে দেখেন, তার ছেলে বুক ও মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে। নিতাইয়ের মায়ের চিৎকারে প্রতিবেশী ডা. আক্তার হোসেনসহ নিরাপত্তাকর্মীরা এগিয়ে আসে। এর পর তাকে দ্রুত বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, চুরির সময় দেখে ফেলায় ডা. নিতাইকে হত্যা করা হয়। আসামিরা নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও দু’টি সোনার বালা নিয়ে যায়।
সারাবাংলা/এআই/পিটিএম