Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিজর্সনে বিদায়, কৈলাসে ফিরলেন দেবী দুর্গা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:০০

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দুর্গাপূজা। চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জনের মুহূর্ত। ছবি: শ্যামল নন্দী

ঢাকা: ঢাকের বাজনা আর আবির খেলার রঙে রাঙল পূজা মণ্ডপ। সেই বাদ্য আর রঙেই মণ্ডপ থেকে বিদায় নিলেন দেবী দুর্গা। ভক্তদের স্মরণে ‘বাপের বাড়ি’ মর্ত্যলোকে এসেছিলেন যে দেবী, এ বছরের মতো সমাপ্ত হলো সেই সফর। বিসর্জনের মাধ্যমে দেবীকে বিদায় দিলেন ভক্তরা। ঘোড়া চড়ে এসেছিলেন দেবী, ঘোড়ায় চড়েই ফিরলেন কৈলাসে, স্বামীর ঘরে। শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব, দুর্গাপূজা।

১০ দিন আগে মহালয়ার মাধ্যমে মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর ষষ্ঠীতে শুরু উৎসবের। আজ মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে দেবীকে বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্ত হলো পাঁচ দিনের সেই উৎসবের। আগামী দিনগুলোতে সবাই যেন ভালো থাকে এবং সবার মঙ্গল ও কল্যাণ হয়, সেই প্রার্থনাতেই সাঙ্গ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর দিনে সকালে মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার দশমী বিহিত পূজা শুরু হয়। সেই পূজার পর দর্পণ বিসর্জন প্রশস্তা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হয় অঞ্জলি প্রদান ও সিঁদুর দান। পরে সিঁদুর খেলা ও বিজয়া দশমীর গানের সঙ্গে ভক্ত অনুরাগীদের নাচ-গানের আয়োজন চলে দুপুর পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় প্রতিমা বিজর্সন পর্ব।

মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিজয়া দশমীতে প্রতীকী প্রতিমা বিসর্জন হয়। ছবি: সারাবাংলা

রাজধানীর বেশিরভাগ দুর্গোৎসবে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করা হলেও কিছু কিছু স্থায়ী মন্দিরে প্রতীকী প্রতিমা বিসর্জন হয়ে থাকে। তেমনি একটি মন্দির হলো মিরপুরের কেন্দ্রীয় মন্দির। সেই মন্দিরে দশমী বিহিত পূজা সমাপনান্তে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতীকী প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয় এবং এর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব।

বিজ্ঞাপন

মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ভবেশ মুখার্জী সারাবাংলাকে বলেন, এখানে গত চার দিন বিভিন্ন পূজা-আচার অনুষ্ঠান হয়েছে। আজ উৎসবের শেষ দিন। আজকের দিনে মায়ের (দেবী দুর্গা) কাছে আমাদের প্রার্থনা একটাই— আমরা মায়ের সন্তান। আজ সারা পৃথিবীর বর্তমান পরিস্থিতি অনেক সংকটপূর্ণ। এ রকম পরিস্থিতিতে মা যেন আমাদের সবাইকে ভালো রাখেন। আমরা যেন অস্থিতিশীল ও সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারি এবং আগামী দিনগুলোতে মা আমাদের সুস্থ রাখুক, ভালো রাখুক— মায়ের কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

দশমীতে আবির খেলায় মেতে ওঠেন ভক্তরা। ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে তোলা। ছবি: হাবিবুর রহমান

মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরের পূজা অচর্না কমিটির সদস্য সচিব নিখিল চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। তিনি বলেন, এ বছর পূজায় অত্যন্ত আনন্দ-উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করেছে। অসাধারণ আয়োজনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা সবাই দুর্গাপূজা পালন করেছি। এবারের পূজার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতিও ছিল অত্যন্ত চমৎকার। দুর্গাপজায় এ ধরনের একটি পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার জন্য আমরা মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরের সহযোগী পুরোহিত অরুণ রায় সারাবাংলাকে বলেন, গত ১৪ অক্টোবর ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে চণ্ডিপাঠ দিয়ে মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গাপূজার শুরু হয়। এরপর গত ১৯ অক্টোবর সকালে দেবী দুর্গার শুল্কা পঞ্চমী বিহিত পূজা ও বোধন হয়। ২০ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দুর্গাদেবীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা এবং সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস হয়। তারপর মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী এবং মহানবমী পেরিয়ে আজ বিজয়া দশমীতে দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপনান্তে দর্পণ বিসর্জন এবং সবশেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এই উৎসবের সমাপ্তি হচ্ছে।

প্রতিমা বিজর্সনের সময়ও সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছিলেন নারীরা। ছবি: শ্যামল নন্দী

এদিন সকাল থেকে মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গণে ভক্তদের ভিড় বাড়তে থাকে। ঢাকের বাদ্য আর ভক্তদের উলুধনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গণ। রাজধানীর অন্যান্য পূজামণ্ডপের মতো মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরেও দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপন, অঞ্জলি প্রদান হয় হয়। পরে পূজায় আগত ভক্ত-অনুরাগীরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। একইসঙ্গে দেবী দুর্গার উদ্দেশে ফুল নিবেদন ও আশীর্বাদ-প্রার্থনাও সমান তালে চলতে থাকে। আর দশমী পূজা উদ্‌যাপনের প্রধান আচারের অংশ হিসেবে নারী ভক্তরা মন্দিরে দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করেন, যা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলার অংশ। এই আচারে দেবী দুর্গার শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে হিন্দু নারীরা একে অন্যের গায়ে সিঁদুর মাখিয়ে জীবনে সমৃদ্ধি কামনা করেন।

দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে পাঁচ দিন বাপের বাড়ি অর্থাৎ মর্ত্যলোকে কাটিয়ে দেবী ফিরেছেন দেবালয়ের (স্বর্গ) কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে। সঙ্গে থাকবে চার সন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। শাস্ত্রমতে, বিজয়া দশমীর দুটি তাৎপর্য। একটি দেবী দুর্গার বিজয়। অন্যটি রামচন্দ্রের বিজয়। বিজয়া দশমীর আরও একটি তাৎপর্য রয়েছে— হিমালয় রাজকন্যা দেবী দুর্গা বা পার্বতী কিংবা উমা নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছিলেন দেবতা শিবকে। শিবের আবাসস্থল কৈলাস পর্বত। সেখান থেকে দেবী দুর্গা বা পার্বতী পিতৃগৃহে আসেন আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী— এই তিন দিন পিত্রালয়ে থাকার পর দশমী তিথিতে পতিগৃহ কৈলাসে প্রত্যাবর্তন করেন। কন্যাকে বিদায় জানানোর বেদনায় বিধুর-বিষাদাচ্ছন্ন হয় দশমী তিথি। তাই দশমী তিথি বিষাদের-বেদনার।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

দুর্গাপূজা দেবী দুর্গা দেবীকে বিদায় প্রতিমা বিসর্জন বিজয়া দশমী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর