বাংলাদেশের সঙ্গে সুগভীর বন্ধুত্ব এগিয়ে নিতে চাই: শি জিনপিং
২৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চীন ও বাংলাদেশ সরকারের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধনী দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বাংলাদেশের সাফল্য অর্জনে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আরও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে টানেলসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর হাতে শুভেচ্ছা বার্তাটি তুলে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এর আগে, রাষ্ট্রদূত সেটি পাঠ করে শোনান। বাংলায় অনুবাদ করে সেটি উপস্থাপন করেন সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন।
বার্তায় শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জানাই। টানেলটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের এই শুভক্ষণে আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।’
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চীন ও বাংলাদেশের মধ্যাকার উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার সাক্ষর বহনকারী একটি প্রকল্প এবং দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতার আরেকটি অনন্য দৃষ্টান্ত। আমি বিশ্বাস করি যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল স্থানীয় ট্রাফিক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাবে এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘চীন-বাংলাদেশ কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব সম্পর্কের উন্নয়নে আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিই। আমাদের দুই দেশের প্রবীণ প্রজন্মের নেতা কর্তৃক স্থাপিত সুগভীর বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিতে এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও বেশি সাফল্য অর্জন করতে আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক, যাতে দু’দেশের জনগণের আরও কল্যাণ মিলবে।’
এর আগে, সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি নিজে টানেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল পরিশোধ করে দক্ষিণ প্রান্তে কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন মঞ্চে যোগ দেন। সেখানে ৫২৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন আরও ৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও দুটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এছাড়া টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট ও ৫০ টাকা মূল্যমানের ৫০ টাকার স্মারক নোট উন্মোচন করা হয়।
উদ্বোধন মঞ্চের আনুষ্ঠানিকতা সেরে প্রধানমন্ত্রী দুপুর ১টা ১০মিনিটে পাশে জনসভা মঞ্চে আসেন। টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করেছে।
উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদীর দুইতীরে চীনের সাংহাই সিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে টানেল প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এর আগে, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন, এর মধ্য দিয়েই মূল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
নির্মাণ কাজ করেছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুই সুড়ঙ্গপথের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মত। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।
নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ থেকে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।
টানেল দিয়ে মোটর সাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি চলতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এই টানেল দিয়ে যানবাহন ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ