Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু: ‘মিথ্যা মামলা’ করায় বাদীর বিরুদ্ধে মামলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৫৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিথ্যা মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে ফাঁসানো নারীসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। ‘মিথ্যা’ মামলায় গ্রেফতার হয়ে দুদকের সাবেক ওই কর্মকর্তার মৃত্যুর পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফল ইসলাম দুদকের সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন গ্রহণ করে বাদীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

মামলায় অভিযুক্ত চারজন হলেন— বাদী রণি আক্তার তানিয়া, এস এম আসাদুজ্জামান, মো. জসিম ও মো. লিটন।

চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাদী রণি আক্তার তানিয়া দুদকের সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনের শুনানি আজ (সোমবার) হয়েছে। আদালত সেটি গ্রহণ করেছেন। একইসঙ্গে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় বাদীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওসমান গণিকে নির্দেশ দেন।’

‘নির্দেশনামতে বেঞ্চ সহকারী ওসমান গণি চট্টগ্রামের প্রথম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) পূর্ণাঙ্গ তদন্তপূর্বক ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।’

গত ২৯ আগস্ট রণি আক্তার তানিয়া নিজেকে দুদকের সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র বাসার গৃহকর্মী দাবি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় শহীদুল্লাহ’র সঙ্গে মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ার নামে আরও একজনকে আসামি করা হয়। মামলার আরজিতে তাকে বেতন না দিয়ে উল্টো মারধর ও হুমকিধমকির অভিযোগ আনা হয়।

বিজ্ঞাপন

ওই মামলায় আদালতে পরোয়ানামূলে গত ৩ অক্টোবর রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানা পুলিশ দুদকের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে (৬৪) গ্রেফতার করে। তার বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায়। গ্রেফতারের পর চান্দগাঁও থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যান শহীদুল্লাহ।

মূলত গ্রেফতারের পরই শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের বিষয়টি জানাজানি হয়। তখন থেকেই তার পরিবার দাবি করে আসছিল, রণি আক্তার তানিয়া কখনোই তাদের বাসার গৃহকর্মী ছিলেন না। জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশিদের প্ররোচনায় তিনি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

শহীদুল্লাহ’র মৃত্যুর ঘটনায় ১৬ অক্টোবর তার স্ত্রী বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। মামলায় ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তারা হলেন- চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম ও তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ ও সোহেল রানা এবং এস এম আসাদুজ্জামান, জসিম উদ্দিন, মো. লিটন, রণি আক্তার তানিয়া ও কলি আক্তার।

মামলার আরজিতে বাদী অভিযোগ করেন, জায়গা-জমি দখলের জন্য আসাদুজ্জামান, জসিম, লিটন, তানিয়া ও কলি মিলে তার স্বামীকে মিথ্যা মামলার আসামি করেন। এতে তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তা দেন চান্দগাঁও থানার অভিযুক্ত চার পুলিশ কর্মকর্তা।

ওইদিনই বাদী রণি আক্তার তানিয়া আদালতে শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, এস এম আসাদুজ্জামান, মো. লিটন ও মো. জসিম প্ররোচনা দিয়ে তাকে মামলাটি করতে বাধ্য করেন। তিনি মামলায় আনা অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে জবানবন্দিও দেন।

এদিকে গ্রেফতারের পর শহীদুল্লাহ’র মৃত্যুর পর সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে এএসআই ইউসুফ আলী ও সোহেল রানাকে চান্দগাঁও থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। মামলা দায়েরের পর চান্দগাঁও থানার ওসি খাইরুল ইসলাম ছুটিতে চলে যান। পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুর রহমানকে সিএমপির পশ্চিম জোনের উপকমিশনার কার্যালয়ে পরিদর্শক (অপরাধ) হিসেবে বদলি করা হয়।

এছাড়া গ্রেফতারের সময় নির্দয় আচরণ সংক্রান্তে পরিবারের অভিযোগ তদন্তে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের উপকমিশনারকে প্রধান করে কমিটিতে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) এবং বিশেষ শাখার সহকারী কমিশনারকে সদস্য করা হয়।

শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা নিয়ে আদালতেও একটি জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এতে বলা হয়, যে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছিল, ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন উর রশীদ সমন আটকে রেখে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই পরোয়ানামূলে গ্রেফতারের সময় পুলিশের মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে শহীদুল্লাহ মারা যান।

বেঞ্চ সহাকরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে এক সদস্যের কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম। এ অভিযোগে সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম-৬ আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন-উর রশিদকে বিচার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে সরিয়ে ‘ক্যাশিয়ার’ পদে বদলি করা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কোস্ট গার্ডের নতুন ডিজি জিয়াউল হক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩২

সম্পর্কিত খবর