চট্টগ্রামে ভাঙচুর-আগুনের মধ্যেও চলছে গাড়ি, দূরপাল্লার বাস বন্ধ
১ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:০৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঝটিকা মিছিল থেকে যানবাহনে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিন পার হচ্ছে। এদিন মহাসড়কে পণ্যবাহী পরিবহন কম এবং দূরপাল্লার বাস চলাচল প্রায় বন্ধ দেখা গেছে। জেলা ও মহানগরীর অভ্যন্তরীণ রুটে গণপরিবহনসহ যানবাহন চলাচল প্রায় স্বাভাবিক আছে।
৭২ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিন বুধবার (১ নভেম্বর) চট্টগ্রামে তিনটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া নগরীতে ঝটিকা মিছিল থেকে গাড়ি ভাঙচুরের পর এক ছাত্রদল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ট্রাকে, সীতাকুণ্ডে লরিতে এবং পটিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের বহনকারী একটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে জানান, বুধবার ভোরের দিকে উপজেলার চন্দ্রঘোনা আদুরপাড়া এলাকায় সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে দেয় অবরোধকারীরা। এ সময় পাথরবোঝাই দু’টি ট্রাক সেখানে আটকে পড়ে। অবরোধকারীরা ট্রাক দুটির একটি ভাঙচুর করে এবং আরেকটিতে আগুন দেয়। পরে তারা অবরোধের সমর্থনে স্লোগান দিতে দিতে চলে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওসি জানান।
এদিকে, বুধবার বিকেলে সীতাকুণ্ড উপজেলার পন্থিছিলা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে লোহার রডবাহী একটি লরিতে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘লরিটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল। বিএনপির কর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে সেটাতে আগুন দেয়।’
এছাড়া বুধবার সকালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ভেল্লাপাড়া ব্রিজ এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পোশাক শ্রমিকদের বহনকারী একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কর্ণফুলী থানার ওসি জহির হোসেন সারাবাংলাকে জানান, আনুমানিক ৩০-৪০ জন পটিয়ামুখী বাসটি ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ছয়টি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটল। অবরোধ শুরুর আগে সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাতে নগরীর খুলশী থানার দামপাড়ায় কে কনভেনশন সেন্টারের সামনে বরযাত্রী নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে আসার পর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার ভোরে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার টেনারি বটতল এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সকালে ইপিজেড থানার সী-ম্যান্স হোস্টেল এলাকায় যাত্রীবেশে উঠে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এদিকে, বুধবার দুপুরে নগরীর কোতোয়ালি থানার কদমতলী সংলগ্ন আটমার্সিং মোড়ে ঝটিকা মিছিল থেকে ককটেল ফাটিয়ে একটি মিনিবাসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তৌহিদুল ইসলাম (২৮) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। তৌহিদুল কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) অতনু চক্রবর্তী বলেন, ‘বেলা ১টার দিকে আটমার্সিং মোড়ে ১০-১২ জন যুবক ঝটিকা মিছিল বের করে। মিছিল থেকে আকস্মিকভাবে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং একটি মিনিবাসে ভাঙচুর করে। পুলিশ ধাওয়া করে তৌহিদদুলকে আটক করে। পরে আশে তল্লাশি চালিয়ে একটি ককটেল ও দুটি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করা হয়।’
বিক্ষিপ্ত এসব ঘটনা ছাড়া চট্টগ্রামে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য কোনো সভা-সমাবেশেও দেখা যায়নি। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত তাদের ফেসবুক পেইজে ছবি আপলোড করে জানিয়েছে, সকালে দলটির নগর শাখার নায়বে আমির আ জ ম ওবায়দুল্লাহ’র নেতৃত্বে তারা নগরীর চান্দগাঁও অঞ্চলে অবরোধের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশ করেছে।
অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বন্দরনগরীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক দেখা গেছে। রিকশা, অটোরিকশা, টেম্পু, হিউম্যান হলার, মিনিবাস, সিটিবাস, বিআরটিসি বাস স্বাভাবিকভাবে চলছে। ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যাও আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে।
নগরীর একে খান গেইট, অলঙ্কার মোড়, সিটি গেইট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। দামপাড়া কাউন্টার থেকে ঢাকা কিংবা দক্ষিণে কক্সবাজার-বান্দরবানের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়নি। কাউন্টারগুলো বন্ধ ছিল। শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে কক্সবাজার-বান্দরবানের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে খাগড়াছড়ি এবং চান্দগাঁও বাস টার্মিনাল থেকে রাঙামাটির উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়নি বলে জানা গেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিষয়ে সিএমপির স্থানীয় আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর সারাবাংলাকে বলেন, ‘যানবাহন মহাসড়কে আগেরদিনের তুলনায় বেড়েছে। পণ্য নিয়ে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান অনেক বেশি ছিল। সীতাকুণ্ড, মীরসরাইয়ে যেসব বাস বা অন্যান্য গণপরিবহন সেগুলো ছেড়েছে। তবে ঢাকা বা অন্যান্য জেলার পরিবহন কিছু কম ছিল।’
বিএসআরএম কারখানার বার আউলিয়া ইউনিটের উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এস এম আবু ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সকালে স্বাভাবিক নিয়মেই মাইক্রোবাসে করে শহর থেকে অফিসে এসেছি। পথে কোনো সমস্যা হয়নি। অবরোধকারী কাউকে দেখিনি।’
সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের পর কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছে আর তাতে সঙ্গী হয়েছে জামায়াতও। ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পর ৩১ অক্টোবর থেকে দল দু’টির ডাকে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি চলছে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম