দেনা মেটাতে সন্তান বিক্রি, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও
২ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৪২
ঠাকুরগাঁও: দেনা মেটাতে নিজের সন্তানকে বিক্রি করেছেন মা শিল্পী বেগম। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই নারীর পাশে দাঁড়ান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন। তাকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সদর উপজেলার মহেষআলী গ্রামের আব্বাস আলীর মেয়ে শিল্পী বেগম (২৮)। ২০১১ সালে সদর উপজেলার বাহাদুর পাড়া গ্রামের রায়হান আলীর সঙ্গে ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। স্বামী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ঠাকুরগাঁও শহরের গোয়ালপাড়া মহল্লার রহমান ক্লিনিকের পাশেই ভাড়া থাকতেন তিনি। স্বামী রায়হান ছিলেন অলস প্রকৃতির, হিজরা কমিউনিটিতে নাম লিখিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে পালিয়ে যান বলে জানা গেছে।
আরও জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে সন্তানদের ভরণপোষণ এবং বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় দেনা হয়ে যায় শিল্পী বেগমের। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ এবং সন্তানদের ভরণপোষন চালাতে না পেরে অবশেষে রহমান ক্লিনিকের মাহমুদা খালার মাধ্যমে এক দম্পত্তির কাছে নিজের নবজাতক শিশু সবুজকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বাতেনের মোড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা শাহনাজ বেগমসহ একাধিক নারী জানান, যার সন্তান সেই জানে তার মনের কষ্টটা। এ ধরনের ঘটনা কারও ভাগ্যে যেন না ঘটে। সন্তানটি শিল্পীর কাছে ফিরে আসবে এমনটাই আশা করেন তারা।
শিল্পী বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে কিছুটা ভালো লাগছে। কিন্তু নিজের সন্তানকে অন্যের কাছে হস্তান্তর করে কান্না করা ছাড়া কিছুই করার নেই আমার।’ এদিকে এ কথা শোনার পর শুধু কেঁদেই চলেছেন শিল্পী বেগমের ৬ বছরের সন্তান। তার চোখে ঝড়ছে অশ্রু, মুখে যেন ভাই হারানোর বেদন। সেও ভাইকে ফিরিয়ে পেতে চায়।
শহরের গোয়ালপাড়া মহল্লায় রহমান ক্লিনিকে আয়ার কাজ করেন মাহমুদা বেগম। তিনি বলেন, ‘শিল্পী যখন সন্তানকে নষ্ট করার চেষ্টা করে তখন আমি তাকে বাঁধা দেই, বলি অন্যের কাছে সন্তানটি দিলে কিছু অর্থ দিবে। যা দিয়ে সে দেনা পরিশোধ করতে পারবে।’
অপরদিকে পাওনাদার হোটেল ব্যবসায়ী এক নারী বলেন, ‘আমি কথা শুনে হাসপাতালে গিয়ে বসেছিলাম। তার তো অন্য কোনো উপায় নেই ঋণ পরিশোধের। তাই টাকা নেওয়ার জন্য ক্লিনিকে গিয়ে বসে থাকি। পরে টাকা দিলে চলে আসি। তার কাছে হাওলাদ দেওয়া ৫ হাজার এবং খাওয়ানো বাবদ ৭০০ টাকা পাই। সেই টাকা আমাকে পরিশোধ করে শিল্পী।’
এ ঘটনা শোনার পর শিল্পী বেগমের কাছে ছুটে যান ঠাকুরগাঁও উপজেলা ইউএনও মো. বেলায়েত হোসেন। তার সঙ্গে কথা বলে শহরের বাতেনের মোড় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে পুনর্বাসন করেন। এছাড়া আর্থিক দূরঅবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রশিক্ষণসহ ঋণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/ইআইবি/এনএস