Saturday 26 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দইজ্জ্যার তলে গাড়ি’ দেখতে লোকে লোকরণ্য টানেল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৩৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: উদ্বোধনের পর প্রথম ছুটির দিনে চট্টগ্রামে ‘দইজ্জ্যার তলে গাড়ি চলাচল’ দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল। হাজার, হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে। মানুষ ও যানবাহনের চাপে টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় বিভিন্ন ধরনের সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি যানবাহন টানেল অতিক্রম করেছে বলে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বঙ্গবন্ধু টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল ও ট্রাফিক) তানভীর রিফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) গাড়ির খুব চাপ। সকাল থেকেই চাপ বেশি। বিকেলে একেবারে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় বিভিন্ন ধরনের মোট ৬ হাজার ৫২২টি যানবাহন টানেল অতিক্রম করেছে। ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৯৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার দুপুর থেকেই পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তের দিকে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হতে থাকে। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন যানবাহন তো ছিলই, বাস ভাড়া করেও দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে গেছেন টানেল দেখতে। অনেকের ব্যক্তিগত গাড়িতে বাজছিল টানেলকে নিয়ে জনপ্রিয় হওয়া সেই গান, ‘কী ‍হুনিলাম আজব কথা, দইজ্জ্যার তলে চলের গাড়ি’।

বিকেলের দিকে পতেঙ্গা সমুদ্র থেকে টানেলের প্রবেশপথ পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী হাজারও মানুষের সমাগম দেখা গেছে। কেউ মোবাইলে ছবি তুলছেন, কেউ সেলফি তুলছেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হাঁটছেন প্রবেশপথের সামনে। আবার কেউ কেউ প্রথমে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত অবলোকন করেন। এরপর সুড়ঙ্গপথ পাড়ি দিতে টানেলের সামনে ভিড় জমান, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু এবং তরুণ।

পুলিশ পরিদর্শক এস এম শহীদুল ইসলাম স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে প্রাইভেটকারে চড়ে টানেল অতিক্রম করেন। শহীদুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘নদীর নিচে গাড়ি চলবে, এটা কি আমরা কখনো ভাবতে পেরেছিলাম! এজন্য টানেল খুলে দেওয়ার পর আর দেরি করিনি, আজ (শুক্রবার) প্রথম ছুটির দিনেই চলে এলাম!’

নগরীর জিইসি মোড় থেকে টানেল দেখতে আসা ফাইরুজ ফাইজা জানান, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তারা বাসা থেকে পতেঙ্গার উদ্দেশে রওনা দেন। গাড়ির প্রচণ্ড চাপ পেরিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা টানেলে পৌঁছাতে পারেন।

উচ্ছ্বসিত ফাইরুজ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর তলদেশের টানেল পার হতে পেরেছি, এটাই বড় কথা। টানেল পার হওয়ার পর যানজটের সব বিরক্তির অবসান হয়ে হয়ে গেছে।’

টানেল দেখার এ উচ্ছ্বাসকে অবশ্য লুফে নিতে দেরি করেননি গাড়িচালকরা। পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তে কিছু প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও বাস ভাড়ার বিনিময়ে টানেল ঘুরিয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত টানেলের উভয় প্রান্তে সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এমনকি টানেলের ভেতরেও যানবাহনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

সংরক্ষিত এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বরত নৌবাহিনীর সদস্যদের এসময় সতর্ক দেখা গেছে। পুলিশকে মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।

 

গত ২৮ অক্টোবর সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রথম টোল প্রদানকারী যাত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত টোল পরিশোধ করে টানেল অতিক্রম করেন।

টানেল উদ্বোধনের পর দক্ষিণ প্রান্তে কর্ণফুলী উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দইজ্জ্যার (নদী) তল দিয়ে গাড়ি চলবে, দইজ্জ্যার তল দিয়ে মানুষ বাড়ি যাবে- আপনাদের জন্য বিশেষ উপহার নিয়ে এসেছি।’

উদ্বোধনের দিন সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল উন্মুক্ত ছিল না। উদ্বোধনের পরদিন ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ থেকে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হয়েছে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

টানেল দিয়ে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। তবে অন্যান্য যানবাহন ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে যুক্ত করার মাধ্যমে এই টানেল শিল্প সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করবে। বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং চট্টগ্রামকে একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য, ট্রান্সশিপমেন্ট ও লজিস্টিক হাব হিসেবে রূপান্তরিত করবে।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর