Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সেই শিশু আপাতত থাকবে ভারতীয় মায়ের কাছে, বাবার জামিন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১৮

ঢাকা: আদেশ না মেনে শিশুকে নিয়ে দেশত্যাগ করায় আদালত অবমাননার দায়ে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শিশুর বাবা বারিধারার বাসিন্দা সানিউর টিআইএম নবীকে জামিন দিয়েছেন আপিল বিভাগ। সেইসঙ্গে এ বিষয়ে পারিবারিক আদালতে থাকা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশুটি তার মা সাদিকা শেখের কাছে থাকবে।

তবে বাবা সপ্তাহে দু’দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুটির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এ ছাড়া আদালতের অনুমতি ছাড়া শিশুকে দেশের বাইরে নেওয়া যাবে না।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৬ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে শিশুটির বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান। মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম।

এর আগে, ২০২১ সালের ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ সাঈদ ও তার শিশু সন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হেবিয়াস কর্পাস আইনে রিট করে মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) এর পরিচালক কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী।

হাইকোর্ট ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট মাসহ শিশুকে হাজির করার নির্দেশ দেন। হাজিরের পর ওইদিন শিশুকে মায়ের জিম্মায় দিয়ে বাবাকে সপ্তাহে তিন দিন দেখা করার সুযোগ দেন। শিশুটির মা সাদিকা শেখ সাঈদ ভারতের হায়দরাবাদের নাগরিক।

পরে আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম বলেন, ‘ওই আদেশের পর শিশুর কথা চিন্তা করে গুলশান ক্লাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে জিডি করেন বাবা। জিডি মূলে নন-এফআইআর মামলাও হয়। আর কৌশলে শিশুটিকে নিয়ে যান বাবা। বিষয়টি আদালতে জানালে ১৫ নভেম্বর হাইকোর্ট শিশুটিকে পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে আইনজীবীর চেম্বারে হাজির করতে বলেন। কিন্তু শিশুকে হাজির করেননি তারা। এ কারণে আবেদনে শিশুকে বিদেশ নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ১৭ নভেম্বর আদালত ওই শিশুকে বাবাসহ ২১ নভেম্বর বিকেল ৩টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে পুলিশের ঢাকা মহানগর কমিশনার ও গুলশান থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।’

বিজ্ঞাপন

তখন পুলিশ জানায়, শিশুকে নিয়ে ১৬ নভেম্বর বাবা দেশত্যাগ করেছেন। এরপর আদালত শিশুর দাদাকে তলব করেন। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আদালতের আদেশে শিশুকে হাজির না করে বিদেশ চলে যাওয়ায় বাবা সানিউর টিআইএম নবীকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড দেন উচ্চ আদালত।

এরপর চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর সানিউর আত্মসমর্পণ করেন এবং ওই দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান। এর মধ্যে আজ (সোমবার) সকালে শিশুটিকে মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়।

রিটের পর আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেছিলেন, ২০১৭ সালে হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ নামের এক নারীকে বিয়ে করেন বারিধারার সানিউর টিআইএম নবী। বিয়ের পর তারা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন। কয়েক মাস পর তারা ঢাকায় ফিরে আসেন।

এরই মধ্যে ২০১৮ সালে ওই দম্পতির এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এরপর করোনাকালে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়। এমনকি ভারতের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাদিকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। বিষয়টি ভারতে মেয়ের স্বজনরা জানতে পারেন। পরে ওই দেশ থেকে তাদের পরিবারের পক্ষে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। এতেও বিষয়টি সমাধান হয়নি। পরে সাদিকার বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান।

এরপর ২০২১ সালের ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ ও তার শিশু সন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আইনে রিট দায়ের করে মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফ্লাড)। হাইকোর্টে রিট দায়েরের পরপরই ভারতীয় নাগরিক সাদিকা শেখ সাঈদকে ডিভোর্স দেন সানিউর টিআইএম নবী।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

জামিন ভারতীয় মা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর