‘দাবি আদায়ের সক্ষমতা বিএনপির নেই, শিগগিরই অবসরে যাব’
৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৭
ঢাকা: বিএনপির ‘এক দফা’র আন্দোলনের মধ্যেই রাজনীতি থেকে ‘শিগগিরই’ অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘কেয়ারটেকারের কথা না ভেবে বিএনপির বিকল্প ভাবা উচিত। দাবি আদায়ের জন্য যে সক্ষমতা লাগে, তা নেই বিএনপির। দলটির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ দুর্বল।’
বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে বনানীর নিজ বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। ‘নতুন দল গঠন’ এবং ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া’ নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে বিএনপি সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন।
হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমি অসুস্থ। রাজনীতি করার মতো শারীরিক সক্ষমতা আমার নেই। শিগগিরই অবসর গ্রহণ করব। আমার এলাকাবাসীর (ভোলা) কাছ থেকে মতামত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আপাতত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যেতে চাই। সেজন্য ভিসার আবেদন করব। বিএনপি থেকেই রাজনীতি ছাড়তে চাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। রাজনীতি নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা এই মুহূর্তে করছি না। আমি রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখছি।’
তথ্যমন্ত্রীর হাসান মাহমুদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখনো বিএনপির একজন গুরুত্বহীন ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে দাবি করি। সুতরাং তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক নয়। কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এখন আমি জড়িত নই।’
তিনি বলেন, ‘২৩ বছর আমি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। ড. মোশাররফ ও রফিকুল ইসলাম মিয়া ছাড়া সবাই আমার জুনিয়র। কিন্তু আমি ছাড়া সবাই উপরে উঠে গেছে। আমি পদবীর জন্য রাজনীতি করি না। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে যোগদান করেছিলাম। বেগম জিয়ার অনুপুস্থিতিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’
মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয় আজগুবি ১১টি অভিযোগে। তিন বছর পার হলেও নোটিশের উত্তরের কোনো পাল্টা জবাব পাইনি। ৩১ বছর রাজনীতি করে এমন প্রাপ্তি পীড়াদায়ক।’
দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক ভুল করেছি। আট বছর কোনো কাউন্সিল হয় না। জাতির স্বার্থে কিছু কথা বলতে হয়। দলের সব নেতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই কথা বলা। বিএনপিতে সত্যি কথা বলার লোক চোখে পড়েনি সাইফুর রহমান ছাড়া। সবাই ইয়েস স্যার, রাইট স্যার বলা লোক।’
সরকারে সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। জনগণ সুযোগ পেলে সঠিক বিচার করে। ক্ষমতাসীনরা মনে করে উন্নয়ন কাজে ভোট পাবে। আসলে মানুষ বিচার করে নিত্যপন্যের দাম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায়। শুধু উন্নয়ন কাজে ভোট হয় না।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অনুগ্রহ করে সামাজিক সম্প্রীতির দিকে লক্ষ্য রেখে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন। কারণ, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। পাশের দেশ ভারত দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে। শক্ত ভিত্তির ওপর তাদের গণতন্ত্র। তাদের অনুসরণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
বিএনপির ও অন্যান্য দলের সঙ্গে বসে সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের অবস্থা খারাপ হলে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল দায়ী থাকবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্দেশে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দলের সংস্কার করতে হবে। ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন করতে হবে।’
‘কেন দলের মধ্যে এক নায়কতন্ত্র কায়েম হয়েছে, কেন পদবাণিজ্য হচ্ছে’— তারেকের উদ্দেশে প্রশ্ন হাফিজ উদ্দিন আহমেদের।
উল্লেখ, একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন জেড ফোর্সে ছিলেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। যুদ্ধে সাহসিকতার জন্যে বীর বিক্রম খেতাব পান তিনি। সামরিক বাহিনী থেকে অবসরের পর রাজনীতিতে যুক্ত হন হাফিজ। ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে হাফিজকে পানিসম্পদমন্ত্রী করেন। গত প্রায় ২৩ বছর ধরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাকে কারাগারেও যেতে হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় ২০২০ সালে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল বিএনপি।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস