১২৫০০ টাকা মজুরি প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ
১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১২
ঢাকা: গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য নতুন ঘোষিত নূন্যতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। সমাবেশ থেকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে।
বিক্ষোভ সমাবেশে থেকে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনে নিহত আঞ্জুয়ারা, রাসেল ও ইমরান হত্যার বিচার ও হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা বাতিল, ৫ ও ৬ নং গ্রেড ও শিক্ষানবিস পদ বিলুপ্ত করে মজুরি কাঠামো নির্ধারণ, শ্রমিক আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করা ও নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া সমাবেশ থেকে শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেফতার শ্রমিকদের মুক্তি এবং শ্রমিকদের ওপর পুলিশের নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধেরও আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, ‘আমরা গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি চাই। ন্যায্য মজুরির প্রশ্নে, দরাদারির প্রশ্নে আমরা প্রস্তুত আছি।’
সরকার ও গার্মেন্ট মালিকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘হিসেব করে দেখেন বাজারে জিনিসপত্রের দাম কত, চালের দাম কত, ডিমের হালি কত, মসুরি ডালের কেজি কত, লাউ-কুমড়ার দাম কত? মাছ-মাংসের দিকে যাচ্ছি না। সেখানে হাত দেওয়ার মতো অবস্থা শ্রমিকদের নাই। শ্রমিকদের জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। আজকের দিনে চার সদস্যের একটি পরিবার ১২ হাজার ৫০০ টাকায় চলতে পারে না। মজুরি আরও না বাড়ালে শ্রমিকদের খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা সম্ভব না। তাই মজুরি বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি পুনর্বিবেচনা করুন। তা না হলে শ্রমিকেরা বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যেতে বাধ্য হবে। পুলিশের গুলি দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ উৎপাদন খাত হচ্ছে গার্মেন্ট খাত, এই খাতে শ্রমিকদের না খাওয়ায়ে রেখে, অর্ধেক খাওয়ায়ে রেখে মালিকদের হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক করে দেওয়ার যে ব্যবস্থাপনা আছে, সেটাতে যদি আপনি (প্রধানমন্ত্রী) হস্তক্ষেপ না করেন তাহলে শ্রমিকদের বিক্ষোভ দূর হবে না। তাই বলতে চাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি পুনর্বিবেচনা করুন। তা না হলে শ্রমিকেরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
মন্টু ঘোষ বলেন, ‘শ্রমিকদের ওপর হামলা, গুলি চালানো এবং হয়রানি করা বন্ধ করুন। আজ শুধু শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছি না, এখান থেকে শ্রমিক হত্যার বিচার দাবি করছি।’
বিক্ষোভ সমাবেশে শ্রমিক নেত্রী তাসলিমা আখতার বলেন, ‘আগামী ১২ নভেম্বর (রোববার) মজুরি বোর্ডের কাছে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি ঘোষণার বিরুদ্ধে আপত্তিপত্র দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ১২ হাজার ৫০০ টাকার যে মজুরি ঘোষণা করেছে, সেটি আমরা ৪০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করেছি। আজকে বাজারে পেঁয়াজের দাম, পেয়ারার দামের থেকে বেশি। আজকে আলুর দাম, চালের দামসহ প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে শ্রমিকদের জীবনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। শ্রমিকরা বেঁচে থাকতে পারছেন না। আমরা সরকারকে শ্রমিকদের মজুরি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’
শ্রমিক নেতা রাজু আহমেদের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতা সাদেকুর রহমান শামীম, বাবুল হোসেন, শ্রমিক নেত্রী জলি তালুকদার, শবনম হাফিজ, শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, মাসুদ রেজা, ইয়াসমিন মিয়া, শহিদুল ইসলাম সবুজ ও শাহ আলম প্রমুখ।
এদিন গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী পরিষদ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স সলিডারিটিসহ কয়েকটি সংগঠনের সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাবের সামনে থেকে হাইকোর্টের সামনের কদম ফোয়ারা মোড় ঘুরে পল্টন এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস