Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আ.লীগের তুহিনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মাঠে, বিএনপিতে কোন্দল

কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৩৪

ময়মনসিংহ: আওয়ামী রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ভাষাসৈনিক রফিক উদ্দিন ভুইয়া, পাঁচ বারের এমপি এম শামসুল হক (একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক), সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান (একুশে পদকপ্রাপ্ত) এবং সাবেক ফার্স্টলেডি বেগম রওশন এরশাদ’র জন্মভূমি ও রাজনীতির চারণক্ষেত্র ময়মনসিংহ। এই সকল রাজনীতিক কালে কালে বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসকে উচ্চকিত করে গেছেন। এই অঞ্চলের রাজনীতি আবর্তিত হতো উল্লিখিত সব নেতাদের ঘিরে। মূলত নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হতো তাদের জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেই নির্বাচন এখন কড়া নাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

আর মাত্র কয়েক মাস পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যেই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। যদিও রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সরাসরি নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলছে না। তাদের দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই দাবিতে তারা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আন্দোলনের পাশাপাশি তারা নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় থেমে নেই সবচেয়ে বেশি সংসদীয় আসনের জেলা ময়মনসিংহের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠকসহ নিজেকে যোগ্য প্রমাণে উঠে-পড়ে লেগেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ১১টি আসনে আওয়মী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ অন্যান্য দলের প্রায় পৌনে দুই’শ মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। ময়মনসিংহকে বলা হয়ে থাকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। স্বাধীনতার পর থেকে এখানকার বেশিরভাগ সংসদীয় আসন আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করেছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বিএনপি এবং তার পর জাতীয় পার্টি। কয়েকবছর ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে রয়েছে জাতীয় পার্টি। সেজন্য তাদের দুয়েকটি আসন ছেড়ে দিতে হয়। এবারও জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট বাঁধলে অন্তত দু’টি আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে নয়টি আসনে জয়ের জন্য আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের মাঠে নামতে হবে। আর রাজপথের প্রধান বিরোধীদল নির্বাচনে এলে ভোটের হিসাব-নিকাশ কিছুটা হলেও পাল্টে যাবে। কারণ, তারাও কয়েকটি আসন পুনরুদ্ধারে ভোটের মাঠে নামবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসনভিত্তিক পরিক্রমায় এবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে সারাবাংলার আয়োজনে থাকছে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের চিত্র।

আরও পড়ুন:

আ.লীগে খালিদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী, বিএনপিতে এগিয়ে জাকির

উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসন গঠিত। স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছয় বার, বিএনপি চার বার ও জাতীয় পার্টি একবার এই আসনে বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সারাদেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হলেও মাত্র দুটি আসনে পরাজিত হয়। এর একটি ছিল ময়মনসিংহের তৎকালীন নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ নিয়ে গঠিত আসন। এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিল মুসলিম লীগের নূরুল আমিন। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের ভাষাসৈনিক রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া, ১৯৭৯ সালে বিএনপি’র খুররম খান চৌধুরী, ১৯৮৬ সালে আবারও আওয়ামী লীগের রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া, ১৯৮৮ সালে দল পাল্টে জাতীয় পার্টি থেকে খুররম খান চৌধুরী, ১৯৯১ সালে খুররম খান চৌধুরীর ভাই বিএনপি’র আনওয়ারুল হোসেন খান চৌধুরী, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত ভোটে বিএনপি’র জহুরুল ইসলাম খান বিজয়ী হন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম ও মাঝে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র খুররম খান চৌধুরী, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহীন।

আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় নান্দাইলে সড়ক যোগাযোগ, ব্রিজ কালভার্ট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামোসহ বিদ্যুতায়নের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নকেই পুঁজি করে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা দুটি ধারায় বিভক্ত থাকায় পৃথক পৃথক দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহীন ও সাবেক এমপি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুস সালামের নেতৃত্বে দুই ধারায় বিভক্তিতে জড়িয়ে পড়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। প্রকাশ্যে মুখে কিছু বলতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে দু’জনের প্রতিই ক্ষুব্ধ বেশির ভাগ নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের তৃণমূল ও মূল ধারার নেতাকর্মীদের দাবি, আগামী নির্বাচনের আগে এই বিরোধ মেটাতে না পারলে নান্দাইল আসনটি হারাতে হতে পারে। তবে দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত।

অপরদিকে, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিতেও রয়েছে বিভক্তি। অনেকেই মনে করেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নান্দাইলে কঠিন রাজনৈতিক মেরুকরণ হবে। জয় ঘরে তুলতে চাইলে দলীয় কোন্দল মেটাতে হবে বড় দুই দলকেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে বিচক্ষণতার উপর এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জয়-পরাজয় অনেকটা নির্ভর করছে।

ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন- বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, সাবেক এমপি ও নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চৌধুরী স্বপন, বিএমএ সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভূঁইয়া, হাইকোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান খান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন হুমায়ূন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জালাল উদ্দিন মাস্টার ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা শাহাজাহান কবির সুমন।

বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার মেয়াদে এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার রেকর্ড উন্নয়ন হয়েছে। নান্দাইল উপজেলায় এখন আর কোনো সড়ক পাকাকরণের বাকি নেই। ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার ১৭৬ কিলোমিটার সড়ক পাকা করা হয়েছে। এর বাইরে ১৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডির গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার ১০৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। এলাকার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পূর্ণতা দিয়েছি। এর মধ্যে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার নরসুন্দা নদীর ওপরসহ এলাকায় একাধিক ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে সক্ষম হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নান্দাইল প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখানে নেই অডিটোরিয়াম, শিশু পার্ক, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। অনেক কাজ এখনো চলমান, কিছু আছে একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায়। আরও অনেক কাজ করার আছে এ উপজেলায়।’ মনোনয়ন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তার বাইরে নই। তিনি মনে করলে ফের আমাকে মনোনয়ন দেবেন। আর আমি মনোনয়ন পেলে তাকে এই আসন উপহার দেবো। তবে তিনি যাকেই নৌকা দেবেন তার হয়েই কাজ করবো। আগের অবস্থা নেই এখানে, এখানে আওয়ামী লীগ বেশ শক্তিশালী।’

আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশাী সাবেক এমপি আব্দুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমপি তুহীনের মেয়াদে বর্তমান সরকারের বরাদ্দে চোখের পড়ার মতো যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে নান্দাইলে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আগামী নির্বাচনে উন্নয়নের এই প্রভাব ভোটে পড়বে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচেনের পর তিনি এলাকায় কম থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দলকে সুসংগঠিত করতে ফের আমাকে উপজেলার সভাপতি বানিয়েছেন। একসঙ্গে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই লক্ষে আমি কাজ করে যাচ্ছি। কেউ যদি নির্দেশ না মানে সেটা তার বিষয়।’

উন্নয়ন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ‘যতটুকু হয়েছে তা সম্পূর্ণ নয়, আরও উন্নয়ন করা সম্ভব ছিল। অনেক সময় বরাদ্দ টাকাও ফেরত চলে গেছে। তৃণমূলের সকল নেতাকর্মী আমার সঙ্গে আছে। প্রতিটি এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হচ্ছে, মতবিনিময় হচ্ছে। মনোনয়ন কেন্দ্রের বিষয়। যাকে দেবে তার সঙ্গেই আমরা আছি। আমরা চাই নৌকার বিজয়। এই আসন শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে কাজ করে যাচ্ছি।’

এদিকে, বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন- সাবেক এমপি আনওয়ারুল হোসেন খান চৌধুরীর ছেলে ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন কমিটির সদস্য ইয়াসের খান চৌধুরী, সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরীর ছেলে নান্দাইল উপজেলা বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসের খান চৌধুরী, সৌদিআরব বিএনপি নেতা শিল্পপতি একেএম রফিকুল ইসলাম, তার ছোট ভাই এ এফ এম আজিজুল ইসলাম পিকুল ও মালয়েশিয়া বিএনপি’র প্রকাশনা সম্পাদক মামুন বিন আবদুল মান্নান।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির বিভক্তি প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান হয়। ওই সময় সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরী ও সৌদিআরব বিএনপির নেতা এ কে এম রফিকুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন চান। খুররম খান চৌধুরী এ সময় মনোনয়ন পাওয়ায় রফিকুল ইসলাম ও তার অনুগত নেতাকর্মীরা আলাদা বলয় তৈরি করেন। এরপর থেকে দু’জনই পৃথক বলয়ে দলীয় কার্যক্রম চালাতে থাকেন। গত বছর ১৭ জুলাই সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরী মৃত্যুবরণ করলে তার ছেলে নাসের খান চৌধুরী দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে পিতার বলয় ধরে রেখে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বছরের বেশিরভাগ সময় সৌদি আরবে থাকায় তার ছোট ভাই পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য এ এফ এম আজিজুল ইসলাম পিকুল দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

বিএনপির এই গ্রুপিং-কোন্দলে আলাদা বলয় তৈরির চেষ্টা করছেন উত্তর জেলা বিএনপির আরেক সদস্য মামুন বিন আবদুল মান্নান। ইয়াসের খান চৌধুরী, নাসের খান চৌধুরী, এ এফ এম আজিজুল ইসলাম পিকুল ও মামুন বিন আবদুল মান্নানের মধ্যে দলীয় বিরোধ প্রকাশ্য। প্রত্যেকেই দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেন আলাদা আলাদাভাবে। বিভক্তির এই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলেও। ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও বিভ্রান্ত। বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা মনে করেন, আন্দোলন শেষে বিএনপি নির্বাচনে গেলে যেই মনোনয়ন পাবে তাকেই বিজয়ী করবে। আন্দোলন শেষে স্থানীয় বিরোধ মিটিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করবে বিএনপি।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ইয়াসের খান চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা আনওয়ারুল হোসেন খান চৌধুরী এমপি ছিলেন। জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে আমার বাবা বিএনপির দুঃসময়ে দলের হাল ধরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক প্রয়াত বাবার পথ ধরেই আমি দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ এলাকাবাসীর আপদে-বিপদে, সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছি। গত ১৪ বছর ধরে এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করছি। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে গুছিয়েছি। মামলায় জড়িয়ে পড়া বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাধ্যমতো সহায়তা দিচ্ছি। গতবার মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন করেন আমার চাচা। আগামীতে মনোনয়ন চাইব, সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে আমার।’

বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য এ এফ এম আজিজুল ইসলাম পিকুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি বর্তমানে একদফার আন্দোলন করছে। সরকার দমন-পীড়ন চালিয়ে দলটিকে নিষ্ক্রিয় করতে চাইছে। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি, সুচিকিৎসা, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আমরা রাজপথে অবস্থান করছি। তারেক রহমানের নিদের্শে দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। আন্দোলন শেষে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, আর দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে এই আসনটি উপহার দিতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।

এদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম ভূঁইয়ার ছেলে হাসনাত মাহমুদ তালহা ও জাসদ থেকে দলটির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৮ হাজার ১২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ২ হাজার ৯৩২ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৮৫ হাজার ১৮৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর ভোটার সাতজন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবদুস সালাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির খুররম খান চৌধুরী। তিনি পান ৫৬ হাজার ৮৪৩ ভোট। এর পর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহীন। তিনি ওই বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জয় পান আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহীন। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে পান ২ লাখ ২৭ হাজার ২৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির খুররুম খান চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পান ২০ হাজার ৮৬০ ভোট।

সারাবাংলা/কেএমএম/পিটিএম

আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন আব্দুল মালেক চৌধুরী স্বপন ইয়াসের খান চৌধুরী এ এফ এম আজিজুল ইসলাম পিকুল একেএম রফিকুল ইসলাম খুররম খান চৌধুরী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নাসের খান চৌধুরী ময়মনসিংহ-৯ মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর