Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমলা নির্ভরতা ছেড়ে রাজনীতিক ‘কো-চেয়ারম্যান’ ধারায় আওয়ামী লীগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫২

ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান মনোনীত হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। এর মধ্য দিয়ে আমলা নির্ভর রাজনীতিক থেকে দলের পরীক্ষিত রাজনীতিককে কো-চেয়ারম্যান করার সূচনা করল আওয়ামী লীগ।

শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় দলের সভাপতি ও জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা কো-চেয়ারম্যান হিসাবে কাজী জাফরউল্লাহর নাম ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব মনোনীত করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। সেদিন আরও ১৪টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। আজ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় কো-চেয়ারম্যান হিসাবে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহকে মনোনীত করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা এবং সভা পরিচালনা করেন কমিটির সদস্য সচিব দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য এবার তেজগাঁও শিল্প এলাকার ট্রাক স্ট্যান্ডের উত্তর পাশে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভবনে অফিস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আজকের সভায় শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নির্বাচন পরিচালান কমিটি সংগঠন মোতাবেকই করি। কো-চেয়ারম্যান আমরা করেছি কাজী জাফরউল্লাকে। সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। কারণ কো-চেয়ারম্যানের অনেক কাজ থাকে। সারাক্ষণ বসে শুধু লেখালেখি করতে হবে।

জাফরউল্লাহ ১৯৮১ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দলীয় রাজনীতিতে প্রবেশ সক্রিয় হন। জাফরউল্লাহ ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তৎকালীন ফরিদপুর-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।

২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে জাফরউল্লাহ সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত এইচ টি ইমামের কক্ষে বসা শুরু করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার। এইচ টি ইমামের কক্ষে বসার পর কবির বিন আনোয়ার দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত। এছাড়াও সাবেক দুই সচিব আবুল কালাম আজাদ ও মোহাম্মদ সাদিকের নামও কো চেয়ারম্যান হিসাবে আলোচনায় ছিল।

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকেন। তিনি সারাদেশের নির্বাচনি প্রচারাভিযানসহ সাংগঠনিক বিষয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। দলীয় সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ নানামুখী ব্যবস্তায় সম্পৃক্ত থাকেন। তাই জাতীয় নির্বাচনকালীন সময় কো-চেয়ারম্যানের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যিনি সারাদেশে নির্বাচনের অবস্থান পর্যবেক্ষণ, তদারকি, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনাসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মুখোমুখি হওয়াসহ নানাবিধ কাজে জড়িত থাকেন।

১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানে পদটি আলোচনায় আসে। সেবার সাবেক সচিব ও কূটনীতিক শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে নির্বাচন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ওই নির্বাচনে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। অবশ্য সেবার তিনি নিজেও প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়।

শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মৃত্যুর পর এইচ টি ইমামকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। ২০০৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পায়। ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কো-চেয়ারম্যান হিসেবে এইচ টি ইমাম দায়িত্ব পালন করেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটি নির্বাচন পরিচালনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর