বাজার থেকে ‘উধাও’ নিউমোনিয়ার স্যালাইন
১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:১১
রাজশাহী: রাজশাহীর বাজারে গত কয়েকদিন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছিল শিশুদের নিউমোনিয়ার স্যালাইন। ৬৫ টাকার ‘এপিএন স্যালাইন’ ১২০০ টাকা দিয়েও কিনতে হয়েছে রোগীর স্বজনদের। তবে এখন আর তা ফার্মেসির দোকানগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে না, একদিনেই ‘উধাও’ হয়ে গেছে এই স্যালাইন।
রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার ফার্মেসি ঘুরে এই স্যালাইন খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওষুধ বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্যালাইন সরবরাহ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর থেকে তারাও বিক্রি করতে পারছেন না এই স্যালাইন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, ‘হাসপাতালেও স্যালাইন সংকট আছে, এজন্য লিখে দিতে হচ্ছে। ফার্মেসির দোকানগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে না এই স্যালাইন। অনেকে বেশি দামে কিনে নিয়ে আসছেন। তবে রোগী সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এই স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে কিছু নেই।’
নগরীর লক্ষীপুর এলাকার এক ওষুধ বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এপিএন স্যালাইন সরবরাহ করে অপসো স্যালাইন লিমিটেড। আমাদের কেনা পড়ে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। আর বিক্রি সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা ৩০ পয়সা। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কয়েকদিন থেকে এই স্যালাইন দেওয়া বন্ধ করেছে। এর আগে বেশি দামে এই স্যালাইন দিয়েছে তারা। চাইলেও বড় বড় ফার্মেসিগুলোকে তারা এপিএন স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছে না।’
তবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এই স্যালাইনের উৎপাদন যা ছিল তাই আছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করছে। এখন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই কারণে চাহিদা বেড়েছে স্যালাইনের।
রামেক হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের শিশুর অভিভাবক আবু হানিফ বলেন, ‘ওয়ার্ডের ডাক্তার এসে স্যালাইন লিখে দিচ্ছে। তা কিনতে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দামেও মিলছে না। হাসপাতাল থেকেও বলছে সরবরাহ নেই। এক ফার্মেসি থেকে বেশি দামে স্যালাইন কিনে নিয়ে এসেছি।’
লক্ষ্মীপুর এলাকার ওল্ড রাজশাহী ফার্মেসির সত্বাধিকারী ডন বলেন, ‘এপিএন স্যালাইনের সংকট মাসখানেক থেকে চলছে। যা পাওয়া যাচ্ছে তা খুবই কম। কেউ এলে আমরা নির্ধারিত দামেই বিক্রি করেছি। কয়েকদিন থেকে এই স্যালাইন সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। তবে আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করছি না। অন্যরা কেউ করলে করতে পারে। আমাদের দোকানে বাড়তি দামে স্যালাইন কেন, কোনো ওষুধ বিক্রিরও কোনো সুযোগ নেই।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য জানাচ্ছে, পাঁচ-সাত দিন ধরে গড়ে একশরও বেশি শিশু ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো দিন ১০০ থেকে ১৩০টি শিশুও ভর্তি হয়েছে। শুক্রবার ভর্তি হয়েছে ৭২টি শিশু। আর গত অক্টোবর মাসে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৮৭৫ শিশু। শিশু বিভাগের চারটি ওয়ার্ডের মধ্যে এ সময়ে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ শিশু মারা গেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. শাহিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, যাদের বয়স শুন্য ২৪ মাসের মধ্যে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত চাপ যাচ্ছে। আমরা চাপ সামলানোর চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির রাজশাহী শাখার সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘এখন বাজারে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। একটি চক্র সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একটি স্যালাইনের দাম সর্বোচ্চ ১০০ টাকা হতে পারে। কিন্তু ১২০০ টাকা মেনে নেওয়া যায় না। এতে কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের নামও খারাপ হচ্ছে।’
অপসো স্যালাইন লিমিটেডের রাজশাহী ডিপো ইনচার্জ জাফর সাদেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এপিএন স্যালাইন আমাদের স্টকে নেই। আমরা ঢাকায় চাহিদা জানিয়েছি। এলে পরে আবার সরবরাহ করতে পারবো।’
দাম বেশি কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে পাইকারি দাম তা দোকানদারের কাছে রাখা হয়। এর বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীরা বেশি রাখলে তাদের বিষয়। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।’
ওষুধ প্রশাসন রাজশাহীর সহকারী পরিচালক মাখনুওন তাবাসসুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজশাহীতে চারটি কোম্পানি এপিএন স্যালাইন সরবরাহ করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। তারাও বলেছে স্যালাইন সরবরাহ কম হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে থেকে স্যালাইন সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘শিশু রোগীর চাপ আছে তবে চিকিৎসা কার্যক্রম ঠিকঠাক মতো চলছে। স্যালাইনের সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের কারণে নিউমোনিয়া রোগীদের স্যালাইন সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাইরেও পাওয়া যাচ্ছে না। সারা দেশেই স্যালাইন সংকট আছে।’
সারাবাংলা/এমই/এমও