ডলার সংকটে বেনাপোল বন্দরে আমদানি নেমেছে অর্ধেকে
২০ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:১২
বেনাপোল: ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পারায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বাণিজ্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমদানি কম হওয়ার কারণে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে। এছাড়া বন্দরের ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ হয়রানির কারণে রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
জানা গেছে, অধিক শুল্ককর আদায়যোগ্য পণ্যের আমদানি এই বন্দর দিয়ে কমে গেছে। মোটরপার্টস, ফেব্রিকস, আয়রন, স্টিল, আপেল ও মোটর গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানিকারকরা বেনাপোল দিয়ে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব পণ্য থেকে প্রায় ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।
বেনাপোলের রাতুল এন্টারপ্রাইজের আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমদানি কমার মূল কারণ হচ্ছে ব্যাংকের এলসি না দেওয়া। ডলার সংকট হওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কম হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’
আমদানিকারক আমিনুল ইসলাম আনু বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে এক ডলারের মূল্য ১১০.৪২ টাকা। এলসির সব টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করলেও ব্যাংক এলসি দিচ্ছে না। এলসি করতে গেলে পিআই অনুমোদনের জন্য ব্যাংকের ম্যানেজারকে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে এলসি করতে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ছিল ১১২ টাকা। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। এজন্য আমরা বেশি প্রয়োজন ছাড়া এলসি করছি না। বাণিজ্যিক আইটেমের এলসি না হওয়ার কারণে আমদানি বাণিজ্য কম হচ্ছে। ফলে রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে।’
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে বেনাপোলে সুপারেনটেনডেন্ট ও ইন্সপেক্টর সবাই নতুন হওয়ায় সমস্যা বেশি হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পণ্যের এইচএস কোড ও ভ্যালু নিয়ে জটিলতার কারণে রাজস্ব আদায় কমে গেছে।’
কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। গত ৪ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। তার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২৪০ কোটি টাকার রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে।
তবে আমদানি কমার কারণ হিসেবে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী জুয়েল রানা জানান, ভারতের নাসিক থেকে আসা আপেলসহ অন্যান্য উচ্চ পচনশীল পণ্যের চালান আসতে প্রায় তিনদিন সময় লাগে। এর ফলে অধিকাংশ কার্টনের ফলই পচে যায়। এ ধরনের পচনশীল পণ্যের রাজস্ব নেওয়াতে অধিকাংশ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশসেন সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ডলার সংকট চলছে। ডলার সংকট দেখিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এলসি দিতে চাচ্ছে না। আর এলসি দিলেও ডলারের রেট অনেক বেশি। ডলার বাইরে থেকে কেনার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। এলসি না হওয়ার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি অনেক কমে গেছে।’
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘জেনেছি ডলার সংকটে এলসি না হওয়ার কারণে বন্দরে আমদানি কম হচ্ছে। আগের তুলনায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বাণিজ্য অনেক কমে গেছে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে মূলত ঘাটতি হয়েছে উচ্চশুল্কের পণ্য আমদানি কমে যাওয়া। আশা করছি, আমদানি বাণিজ্য বাড়লে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালে ‘বাংলাদেশ ওয়্যারহাউজিং করপোরেশনের অধীনে বেনাপোল দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০২ সালে এই এলাকাটি মর্যাদা পায় স্থলবন্দরের। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানির বাণিজ্য থেকে সরকারের বড় অংকের রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
সারাবাংলা/এমটিকে/এমও