ঘূর্ণিঝড় মিধিলি: ভোলায় ১৩০টি ইটভাটায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৭
ভোলা: ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ভোলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষিখাতে। এরপরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভোলার ইটভাটাগুলো। ভাটায় মাত্র ইট বানানো শুরু করেছিলেন প্রায় ১৩০টি ইটভাটার মালিকরা। এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয় ভাটায় থরে থরে সাজানো নতুন কাঁচা ইট। গত এক মাস ধরে ভাটার মালিকরা নতুন ইট তৈরি করে পোড়ানোর জন্য সাজিয়ে রেখেছিলেন। এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সব ইট কাঁদামাটিতে পরিণত হয়। দু’একটি ভাটা মালিক পলিথিন দিয়ে ঢেকে কিছুটা রক্ষা করতে পারলেও বেশিরভাগ মালিকই কাঁচা ইট রক্ষা করতে পারেননি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদীর বাঘমারা এলাকায় আমির হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর ‘মায়ের দোয়া’ ও সাবাব নামের দুইটি ইটভাটা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি শুকিয়ে গেলেও কাঁচা ইট গলে কাঁদা-মাটিতে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির সময় কাঁচা ইট পলিথিন দিয়ে ঢেকে কিছুটা রক্ষা করতে পারলেও জোয়ারের পানিতে সেগুলো প্লাবিত হয়ে ভিজে-গলে কাদা মাটিতে রূপ নিয়েছে। এছাড়াও পোড়ানোর জন্য চুল্লিতে সাজানো ইটও গলে গেছে। একই অবস্থা ভোলার ১৩০টি ইটভাটার।
ইটভাটার মালিক আমির হোসেন জানান, তার দু’টি ইটভাটায় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। একটি ইট আগুনে বসানোর আগে প্রায় ৪টাকা খরচ হয়। এ রকম প্রায় ২৫ লাখ ইট নষ্ট হয়েছে। এসব ইট মাঠ থেকে তুলে আবার ইট বানাতে এক মাস সময় লাগবে। এ সময় ইটের কারিগর ও শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হবে। আবার মাঠ পরিষ্কার করতেও ১০-১৫ লাখ টাকা খরচ আছে।
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে সদর উপজেলা ‘অ্যাডভান্স অটো ব্রিকস’। ঝড়ে তাদের একটি উৎপাদন শেড উড়ে গেছে। ভাটার পরিচালক মাহমুদ হোসেন সুমন জানান, বিশাল আকারের শেডটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে তাদের প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভাটার অন্যান্য মালামাল ও যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে গিয়েছে। কারখানার উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, ভোলার সদর উপজেলার সোনালী, জাহিদ, রিয়াদ, বাঘা, সেভেন স্টার, রূপালী-১, রূপালী-২, খান, প্রাইম, ফাইভস্টার, পান্না, মুকুল, একতা, অ্যাডভান্স ভাটাসহ আরও ২৬টি ইটভটার অবস্থা একই। এসব ইটভাটার প্রায় সব ইট কাদা হয়ে গেছে।
চরফ্যাশন ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল জানান, উপজেলার প্রায় ৩০টি ভাটার অনেকেই ইট শুকিয়ে পোড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কারও চুল্লিতে ইট সাজানো হয়েছিল, আবার কেউ বৃহস্পতিবার চুলায় আগুন দিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হলে ইট পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়। এরপরে শনিবারে আসে উচ্চ জোয়ার। একরাতেই সব শেষ। ইটের ওপরে পলিথিন দিয়ে কিছুটা সুবিধা পেলেও জোয়ারের পানিতে নিচ থেকে গলে সব ইট পানির মধ্যে পড়ে যায়। ভালো ইট একটাও পাওয়া যায়নি।
ভোলা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোশারেফ হোসেন দুলাল বলেন, ‘ভোলায় এমন কোনো ইটভাটা নেই, যেখানে ক্ষতি হয়নি। গড়ে একেকটি ভাটার ৩০-৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ইটভাটার প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
সভাপতি আরও বলেন, ‘ভাটার মালিকরা আগাম কম দামে ইট বিক্রি করে ভাটার কাজ শুরু করেছিলেন। এখন আবার শুরু করতে গেলে ব্যাংক ঋণ করতে হবে।’
সারাবাংলা/এমএইচইউ/এমও