৫০ বছর পূর্তিতে মটসে উৎসব
২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২৭
ঢাকা: পথচলার ৫০ বছর পূর্ণ করেছে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান ‘মট্স’। আনন্দ শোভাযাত্রা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দিনব্যাপী নানা আয়োজনে সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুরের নিজস্ব ক্যাম্পাসে এই উদ্যাপন করে কারিতাস বাংলাদেশের ট্রাস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত মটস্। দেশের নানা প্রান্ত ও দেশের বাইরে থেকে আসা প্রায় তিন হাজার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, প্রশিক্ষক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মট্স প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কারিতাস বাংলাদেশের ট্রাস্ট হিসেবে মট্স যাত্রা শুরু করে ১৯৭৩ সালে। এরপর থেকেব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও মানসম্মত উৎপাদনে মট্স দেশে ও দেশের বাইরে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। বিশেষ করে দেশের বাইরে কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষিত জনবল রফতানিতে প্রতিষ্ঠানটি ভূমিকা রাখছে। অটোমোবাইল ও মেশিনিস্ট ট্রেডে প্রায় ১৮০০ এবং ৪ থেকে ১৪ সপ্তাহের বিভিন্ন মডুলার কোর্সে ৪৮ হাজারেরও বেশি প্রশিক্ষণার্থী মট্স থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বক্তারা দেশে কারিগরি শিক্ষা খাতে মট্সের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করার আশাবাদ জানান।
মট্সের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী। উদ্বোধন ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান। গেস্ট অব অনার ছিলেন ঢাকা আর্চডায়োসিসের আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরীন শারমিন বলেন, মট্সের প্রশিক্ষিত ৪৮ হাজার জনশক্তি দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ধরনের কাজের মাধ্যমে অবদান রেখে চলেছেন। এখন সময় তথ্যপ্রযুক্তির। আমরা আশা করি, তরুণরা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের কারিগরি কৌশলের সঠিক প্রয়োগ করবে এবং অবদান রাখবে।
কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও মট্স বোর্ড অব ট্রাস্টের চেয়ারপারসন সেবাস্টিয়ান রোজারিওর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা আর্চডায়োসিসের অবসরপ্রাপ্ত আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও; কারিতাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও খুলনা ডায়োসিসের বিশপ জেমস্ রমেন বৈরাগী; সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্, জুয়েল আরেং ও অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার; কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান; এবং পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মট্স পরিচালক জেমস গোমেজ।
বক্তারা স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে মট্সের অবদানের কথা স্মরণ করেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টারি প্রর্দশন, ক্রেস্ট বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মট্স পরিবার অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে নতুন আশায় উজ্জীবিত হয়ে গঠনমূলক ও গতিশীল জীবন গঠনের মধ্যদিয়ে দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত হবার শপথ গ্রহণ করে।
মট্স শুরুতে তিন বছর মেয়াদি লং টার্ম মেকানিক্যাল কোর্স চালু করে। অটোমোবাইল ও মেশিনিস্ট ট্রেডে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে এক হাজার ৭৪৪ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী কর্মরত রয়েছেন। ১৯৮০ সাল থেকে বিভিন্ন এনজিও ও বেসরকারি খাতের চাহিদার ভিত্তিতে চার থেকে ১৪ সপ্তাহের সংক্ষিপ্ত কোর্স চালু করে মট্স, যা মডুলার কোর্স নামে পরিচিত। সব মিলিয়ে ৪৮ হাজার ৭৯৪ জন বেকার বা অদক্ষ তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলেছে মট্স।
মট্সে রয়েছে বিদেশগামী টেকনিশিয়ানদের জন্য স্কিল টেস্ট পরীক্ষার ব্যবস্থা। কারিগরি শিক্ষাকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মট্স ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদনে চার বছর বয়সী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করেছে। এখান থেকে এখন পর্যন্ত ডিপ্লোমা নিয়েছেন এক হাজারস ৭৪৫ জন। তাদের অনেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
সারাবাংলা/টিআর