বিএনপি নেতারা ভর করছেন বিএনএমে, প্রার্থী রাজশাহীর ৬ আসনেই
২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১১:০২
রাজশাহী: তফসিলের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী বাছাইও প্রায় শেষ করে এনেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় একটি অংশ কারাগারে এবং বাকি অংশ আত্মগোপনে থাকা বিএনপি এখনো হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতেই বৃত্তবন্দি। তবে রাজশাহীর বিএনপি নেতারা ভোটযুদ্ধে পিছিয়ে থাকতে রাজি নন। বরং জেলার ছয় আসন থেকেই দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ভোটে যাওয়ার প্রস্তুতি প্রায় গুছিয়ে এনেছেন। আর এ ক্ষেত্রে আলোচনায় উঠে এসেছে নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)।
বিএনপি, বিএনএম ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে রাজশাহীর দুটি আসনে বিএনএমের প্রার্থী চূড়ান্ত। দুটি আসনেই তারা প্রার্থী হিসেবে পেয়েছে বিএনপির দুই নেতাকে। বাকি চারটি আসনে প্রার্থী নিশ্চিত করতেও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে দলটির। এ ছাড়া বিএনপির আরও কিছু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হলেও ভোটে যেতে মনস্থির করেছেন।
বিএনএম নেতারা বলছেন, বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা বিএনএম থেকে নির্বাচনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেকে দলীয় মনোনয়নও নিয়েছেন। আরও কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন নেবেন। কয়েকদিনের মধ্যে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করবেন। এর মধ্যে দিয়ে রাজশাহীর ছয়টি আসনেই যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
দলটির নেতারা আরও বলছেন, বিএনএম দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রথমবার ভোট করেই অন্তত ৭০ থেকে ৮০টি আসনে জয়ী হয়ে আসতে চায় তারা। এ ক্ষেত্রে রাজশাহীর ছয়চি আসনের মধ্যে অন্তত দুটি আসনে নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করে আনার ব্যাপারে তারা বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে রাজশাহী বিএনপির বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা রয়েছেন তাদের সঙ্গে আলোচনায়।
গত বুধবার (২২ নভেম্বর) রাতে রাজশাহীর একটি হোটেলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেছে বিএনএম। বৈঠকে রাজশাহীর ছয়টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন, যাদের সবাই-ই মূলত বিএনপির রাজনীতি করেন। আপাতত প্রতিটি আসনে দুজন করে প্রার্থী তারা ঠিক করেছে দলটি। মামলা বা অন্য কোনো কারণে প্রথম প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলে আরেকজন সেখানে ভোট করবেন।
দলটির একটি সূত্র বলছে, রাজশাহী-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোটভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। বিএনপির কোনো পদে না থাকলেও আমিনুল হকের ভাই হওয়ার সুবাদে এলাকায় শরীফের বেশ প্রভাব আছে। গত বছরের ২ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় জনসভাতে তিনি বক্তব্যও দিয়েছিলেন।
বিএনএম নেতারা বলছেন, প্রায় ১৫ দিন আগে শরীফ উদ্দিন বিএনএমের সদস্য ফরম পূরণ করেছেন। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেননি। দলে যোগদান করেই তিনি নির্বাচন করবেন।
এ ছাড়াও রাজশাহী-১ আসন থেকে বিএনপির মহিলা দলের নেতা তাসকিয়া বিনতে নাজীব গ্রেসী রয়েছেন বিএনএম প্রার্থী হিসেবে। গ্রেসী এরই মধ্যে বিএনএমের মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন।
রাজশাহী-২ (সদর) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন বিএনপির সমর্থক ব্যবসায়ী আবদুল বারী। তিনি বিএএনএমের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন থেকে নির্বাচন থেকে অংশ নেবেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু। তিনি বিএনএমের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বিএএনএমে যোগ দেওয়ায় তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদও দেওয়া হয়েছে। এখন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
মতিউর রহমান মন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করেছি। এই রাজনীতিতে জীবন-যৌবন শেষ করেছি। অথচ দল থেকে কিছুই পাইনি। উল্টা মিথ্যা মামলা খেয়েছি। তাই এবার নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্তমানে আমি বিএনএমের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছি। আমি রাজশাহী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করব।’
রাজশাহী-৪ থেকে বিএনএম প্রার্থী হিসেবে নিবার্চন করছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি হাটগাঙ্গোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি আবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তার স্ত্রী বাগমারা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য করা হলেও দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতাম। রাজনৈতিক দলগুলোর বিধিবিধান নিয়ে আমার কিছু আপত্তি আছে। এবারে আমি বিএনএম থেকে নির্বাচন করতে চাই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনএমের এক নেতা জানিয়েছেন, এই আসনে বিএনপির ‘হেভিওয়েট’ এক নেতাকে প্রার্থী করতে চায় বিএনএম। ওই নেতার সঙ্গে আলোচনাও চলছে। ওই নেতা বিএনপির চলমান আন্দোলন-কর্মসূচিতে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। সে কারণে সবকিছু চূড়ান্ত করে তবেই তার নাম প্রকাশ করবে বিএনএম।
এদিকে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসন থেকে ভোট করবেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত রায়হান আলী ও আবদুস সামাদ।
দুটি আসনে জয়ের প্রত্যয় জানিয়ে রাজশাহী জেলা বিএনএমের সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দল থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির অনেক নেতা এরই মধ্যে যোগদান করেছেন। আরও অনেকেই যোগদান করার প্রক্রিয়ায় আছেন। এর মধ্যে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীও আছেন। আমরা রাজশাহী থেকে অন্তত দুটি আসনে জয়ী হতে চাই।’
শরিফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘রাজশাহী-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন মেজর জেনারেল শরীফ উদ্দীন। তিনি সাবেক মন্ত্রী আমিনুল হকের ভাই। দলে যোগদান করলে আমিনুল হকও হয়তো নির্বাচনে অংশ নেবেন। আমরা তাকেও ধরে রেখেছি। রাজশাহী-৩ আসন থেকে বিএনপির সাবেক নেতা আমাদের দলের ভাইস চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মন্টু নির্বাচন করছেন। আরও অনেকেই আছেন। সময়মতো সবার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হবে।’
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহীন শওকত বলেন, ‘যারা নির্বাচন করবেন, তারা দলের সঙ্গে বেঈমানি করবেন। আমার দেশ ও জাতির পক্ষে আন্দোলন করছি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু বর্তমান সরকার যে স্বৈরশাসকের ভূমিকা পালন করছে, তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে অনেকেই। যারা দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নির্বাচনে যাবে দল তাদের কোনোদিনও ক্ষমা করবে না।’
সারাবাংলা/টিআর
জাতীয়-নির্বাচন তাসকিয়া বিনতে নাজীব গ্রেসী দ্বাদশ নির্বাচন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) বিএনএম বিএনএম রাজশাহী ব্যারিস্টার আমিনুল হক মতিউর রহমান মন্টু শরীফ উদ্দিন শহিদুল ইসলাম সংসদ নির্বাচন