Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:২৩

ঢাকা: কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা যাবে না; দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিলে সেটিই হবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।

এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) আয়োজিত ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন কথা বলেন। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ মিলনায়তনে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে আদি এবং পুরনো সংজ্ঞা হচ্ছে, গভর্নমেন্ট অব দ্যা পিপল বাই দ্যা পিপল ফর দ্যা পিপল। আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্র নিয়ে এই সংজ্ঞা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, ডেমোক্রেটিক গভর্নমেন্ট কোনো রাজনৈতিক দলের সরকার নয়, এটা জনগণের সরকার। অতএব, জনগণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই সেটা গণতান্ত্রিক সরকার বা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়। সেখানে কোনো দল অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন খুবই ত্রুটিযুক্ত হবে এমনটা বলা যাবে না। যেটা হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টিকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসলে সেটিই হবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের সবাইকে ভোট দিতে আসতে হবে। আমি সবাইকে নিজ নিজ পছন্দের দলকে বা প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানাই।

তিনি আরও বলেন, আশা করি আগামী ৭ জানুয়ারি একটি ভালো নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আমরা একটি নতুন সরকার পাব। আশা করি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যে কর্মযজ্ঞ চলছে সেটারই ধারাবাহিকতা থাকবে।

ড. মীজানুর রহমান বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের ভিত আরও মজবুত হবে। পাশাপাশি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণ তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদান করবেন।

আলোচনা সভার প্রধান আলোচক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে আমরা সেই প্রত্যাশাতেই আছি। আমরা মনে করি আগামী ৭ জানুয়ারি আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে জনগণ উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। যার মাধ্যমে এদেশের জনগণের বিজয় হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি, ৭ জানুয়ারি ৩০০ সংসদীয় আসনের নির্বাচনে ২ হাজার ৭৪১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আমার প্রত্যাশা থাকবে, ভোটাররা উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আমি মনে করি, যেকোনো মাপকাঠিতে বিবেচনা করা হোক না কেন, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা, মুক্তিযুদ্ধে চেতনা বাস্তবায়ন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে সবাইকে ভোট কেন্দ্রে আসতে হবে। এবং সব ধরনের ভয়-ভীতি, আশঙ্কা উপেক্ষা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে আগামী নির্বাচনে ভোট প্রদানের আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ও ইআরডিএফবির সভাপতি অধ্যাপক ড. সাজ্জাত হোসেন বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আসন্ন। আগামী ৭ জানুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে উৎসবমুখর পরিবেশে বাঙালিরা ভোট দিয়েছিল। এবারও ৭ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় উৎসব হবে। আমি তরুণ সমাজকে বলব, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যেভাবে একটি দেশকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে, উন্নত দেশ, আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে তৈরি করেছেন, সেখানে ৭ জানুয়ারি জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় উৎসব উদযাপন করবে।

তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সকলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন। সকলে দলে দলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধারাকে আরও বেগবান করতে ভূমিকা পালন করবেন। আমি আশা করব, শিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়নে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ সমাজসহ সব নাগরিক সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া এবং ভোট দেওয়া। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।

অধ্যাপক ড. সাজ্জাত হোসেন বলেন, নির্বাচনের জন্য এবার সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। আর সুষ্ঠু ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষই নির্বাচন চায়। আমাদের চাওয়া, সবাই যেন নাগরিক দায়িত্ব মনে করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের জনপ্রতিনিধি বাছাই করেন। যার মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিজয় হবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও ইআরডিএফবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি দল অংশগ্রহণ করছে। এবং সারাদেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি। জনগণের মধ্যে ভোট প্রদানের আকাঙ্ক্ষা ও স্বতঃস্ফূর্ততাও আমরা লক্ষ্য করছি। সারাদেশে নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে, ভোটারদের মধ্যে থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কেটে গেছে, এখন চারদিকে ভোটের জোয়ার চলছে।

তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য জনগণের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ততাও দেখতে পাচ্ছি, সেভাবেই বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো অপশক্তি, কোনো অরাজকতা বা সন্ত্রাস করে কিংবা আগুন সন্ত্রাসী করে হরতাল-অবরোধ দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট তারা আদায় করতে পারবে না। আমি মনে করি, আগামী ৭ জানুয়ারি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত হবে। নির্বাচনে গণতন্ত্রের চেতনা সমুন্নত রাখতে জনগণ আবারও মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে বিজয়ী করবে। এবং দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার গঠিত হবে।

অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান বলেন, উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ বিশ্বে যে রোল মডেল হয়েছে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ আবারও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। কোন অপশক্তিই বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। দুর্বার গতিতে অপ্রতিরোধ্যভাবেই বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য ও ইআরডিএফবির সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এদেশের ১৭ কোটি জনগণ তাকিয়ে আছে। আগামী ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেটি নিয়ে আগ্রহ, উৎসাহ-উদ্দীপনা নানা দিক থেকে অনেক বেশি। আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন, আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। যেখানে ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য ৩০টি রাজনৈতিক দলের ২ হাজার ৭৪১ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। একটি আসনের জন্য প্রায় ৯ জন প্রার্থী প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে দেখা যাচ্ছে। তার মানে আগ্রহের দিকে থেকে অনেকটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

অধ্যাপক আব্দুল জব্বার খান বলেন, বিদেশিদের প্রেসক্রিপশনের নির্বাচন এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। বিদেশিদের প্রেসক্রিপশনে কোনো নির্বাচন ইআরডিএফবি দেখতে চায় না। বিদেশিদের প্রেসক্রিপশনে কোনো নির্বাচন বাংলাদেশের কেউ দেখতে চায় না। আমরা আমাদের ভোটের অধিকার নিজেরা প্রয়োগ করতে জানি এবং ১৯৭০ সাল থেকে সে অধিকার প্রয়োগ করে আসছি। ভুল করলে আমরা করব, সঠিক করলেও আমরাই করব। যা কিছু করতে হয় আমরাই করব। কিন্তু বিদেশি কোনো রাষ্ট্র আমার দেশে সামরিক ঘাটি করার জন্য, অস্ত্র বিক্রি করার জন্য আমাদের দিয়ে কোনো নির্বাচন করাতে পারবে না। আজকের আলোচনা সভা থেকে আপনাদের সবাইকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. সাজাত হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট অজয় দাসগুপ্ত এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবউননেছা।

আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসেফিক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

২০২২ সালের ১ অক্টোবর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন ও প্রযুক্তি নিয়ে সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি শিক্ষা, গবেষণা এবং উন্নয়ন বিষয়ে ১৮টি সভা-সেমিনার সফলভাবে আয়োজন করেছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/আইই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘তুফান’ আসছে হিন্দি ভাষায়
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯

সম্পর্কিত খবর