রাজশাহীতে নেই তৃণমূল বিএনপির কমিটি, প্রার্থীরাও বহিরাগত
৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৫
রাজশাহী: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত ২৩০টি আসনে প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছে তৃণমূল বিএনপি। আট বছরের পুরানো এই দলটির রাজশাহীতে কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। কিন্তু দ্বাদশ নির্বাচনে রাজশাহী ছয়টি আসনের মধ্যে দুটিতে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। তবে যে দুজন প্রার্থী হয়েছেন তারা গাজীপুর ও ঢাকার বাসিন্দা।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। সে সময় তিনি জানান, বাকি আসনগুলোতে পরবর্তী সময়ে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে রাজশাহী-১ থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে জামাল খান দুদুকে। রাজশাহী-২ থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে এসএম আরমান পারভেজকে। রাজশাহী-২ থেকে মো. শামীম নামের একজন মনোনয়ন উত্তোলন ও জমা দেন।
দলটির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘রাজশাহীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ খুব ভালো অবস্থানে। এছাড়া অন্যান্য দলও খুব শক্তিশালী। আমরা রাজশাহীতে কোনো কমিটি গঠন করতে পারেনি। তবে দুটি আসনে প্রার্থী দিয়েছি। স্থানীয় কেউ না থাকার কারণে বাইরে থেকে নিয়ে আমাদের প্রার্থী দিতে হয়েছে। নির্বাচন শেষে আমরা রাজশাহীর কমিটি ঘোষণা করব।’
রাজশাহী-১ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জামাল খান দুদু। তিনি নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন তুলে জমাও দিয়েছেন। পেশায় ব্যবসায়ী জামাল খান দুদুর বাড়ি গাজীপুর সদরের নীলনগর এলাকায়। সেখানকার তিনি স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি থেকে আমাকে রাজশাহী-১ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি ওই আসন থেকে নির্বাচন করব।’
তিনি দাবি করেন, তার বাড়ি গোদাগাড়ীর বিদিরপুর এলাকায়। জন্মস্থান টাঙ্গাইলে। ব্যবসার জন্য তিনি থাকেন গাজীপুরে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় তার দোকান আছে। ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র) বিক্রি করেন তিনি। তৃণমূল বিএনপির কোনো পদ-পদবীতেও নেই তিনি।
দুদু বলেন, ‘আমি গোদাগাড়ীতে গিয়েছি কিছুদিন আগে। সেখান মানুষজন আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। হাত তুলে স্বাগত জানিয়েছে। তারা নির্বাচিত করবে বলে কথা দিয়েছে। আমি তাদেরই সন্তান। নির্বাচিত হয়ে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই।’
রাজশাহী-২ থেকে তৃণমূল বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন এসএম আরমান পারভেজ। পেশায় অভিনেতা আরমান পারভেজ মনোনয়ন জমা দেননি। তবে উত্তোলন করেছিলেন। তিনি রাজশাহীর বাসিন্দা হলেও ঢাকায় থাকেন। তিনি বলেন, ‘বিশেষ কিছু কারণে আমি নির্বাচনে দাঁড়াব না। আমি স্বাধীনতার পক্ষের লোক। সাংস্কৃতিক আন্দোলন করি। রাজনীতি আমাকে মানায় না। নেতারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তাই তারা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আমি মনোনয়ন জমা দিইনি।’
তবে রাজশাহী-২ থেকে তৃণমূল বিএনপির হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মো. শামীম নামের একজন। ঢাকার বনশ্রীর শামীমের কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। তিনিও কোনো পদে নেই তৃণমূল বিএনপির। শামীম বলেন, ‘দলের নেতারা আমাকে রাজশাহী-২ থেকে নির্বাচন করার কথা বলেছেন। আমি মনোনয়ন তুলেছি, জমাও দিয়েছি। তবে শুনছি আরেকজনকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন দল সিদ্ধান্ত নেবে কাকে রাখবে। ঢাকা থেকে গিয়ে আমার নির্বাচন করা সম্ভব না। আর রাজশাহীতে দলের কমিটি ও কর্মী-সমর্থক নেই। বাইরে থেকে নিয়েও আমরা সেখানে প্রচারণা করতে পারব না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নেতা বলেন, ‘প্রার্থী না থাকা কারণে বহিরাগতদের দেওয়া হয়েছে। আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ২৩০টি আসনে পেরেছি। অন্তত ৩০টি আসনে আমরা জয়লাভ করব।’
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জনগণই আমাদের কমিটি। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে যাবে তৃণমূল বিএনপির নাম।’ বহিরাগত প্রার্থীদের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনি তো রাজশাহীর লোকাল। আপনি প্রার্থী হবেন? আমরা প্রার্থী দিয়েছি এটাই বড় কথা।’ এই বলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে কল দেওয়া হলে তিনি ধরেননি।
দলের চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি এখন ব্যস্ত আছি। এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’
উল্লেখ্য, সাবেকমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ২০১৫ সালে তৃণমূল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধনও পেয়েছে দলটি। তৃণমূল বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেয়। এ বছরের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল বিএনপির কাউন্সিল হয়। তখন দলের নেতৃত্বে আসেন সাবেক বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা তৈমুর আলম খন্দকার।
সারাবাংলা/পিটিএম