হাসপাতালের গেইটে গাড়ি আটকে চিকিৎসককে চাকরিচ্যুতির নোটিশ
৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সাত বছর কর্মরত থাকার পর এক চিকিৎসককে প্রবেশমুখে গাড়ি আটকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন চিকিৎসক আরিফ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি হাসপাতালটির মাস্টার হেলথ চেকআপ ইনচার্জ, একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর, মেডিকেল রেকর্ড বিভাগের ইনচার্জ এবং চট্টগ্রাম ইমপেরিয়াল কলেজ অব নার্সিংয়ের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. আরিফ বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে এখানে কাজ করছি এবং আমার নিয়োগপত্রে লেখা ছিল যে, একবছর পর আমাকে নিয়মিত করা হবে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর তারিখে আমাকে মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর হিসেবে তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর হিসেবে পদায়ন করা হয় ও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় ইনচার্জ মাস্টার হেলথ ক্লিনিক এবং ইনচার্জ মেডিকেল রেকর্ড বিভাগের।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর এইচআর ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে একটি চিঠি দেওয়া হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, আমাকে নতুন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। ইমপেরিয়াল হাসপাতালে তিন বছর মেয়াদি চুক্তি বাতিল ও অকার্যকর বলে বিবেচিত হবে এবং আমাকে ১ নভেম্বর থেকে একটি নতুন নিয়োগ চুক্তিতে সই করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী, আমার চাকরি ইমপেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেডে নিয়মিত ও স্থায়ী হিসাবে পরিণত হয়েছে। আমাকে নিয়মিত থেকে চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে আনার অপৎপরতা বন্ধ করার জন্য আমি চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করি, যা এখনও বিচারাধীন। ইমপেরিয়াল হাসপাতাল যেনতেন উপায়ে আমাকে নতুন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে চাইছে, যা বৈধ নয়। কারণ, আমি ইতোমধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত ও কর্মরত আছি। আমাকে নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার এ প্রক্রিয়া অবৈধ।’
ইমপেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসম্মানজনকভাবে গেইটে গাড়ি আটকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টায় আমি প্রতিদিনের মতো অফিসে যাই। হাসপাতালের প্রধান ফটকে সিকিউরিটি গার্ড আমাকে আটকে দেয়। এর পর আমাকে ৩ ডিসেম্বর সই করা একটি চিঠির ফটোকপি দেওয়া হয়। এতে লেখা আছে- আমার কাজের শেষ দিবস ছিল ৩ ডিসেম্বর। আমি চিঠির মূল কপি দেওয়ার অনুরোধ জানালেও তা দেওয়া যাবে না বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাক্তার রবিউল হোসেনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি কাজ করে আসছিলাম। বেআইনিভাবে আমাকে নিয়মিত ও স্থায়ী চাকুরি থেকে চুক্তিভিত্তিক করার অপতৎপরতা চালানো হয়েছে। কিন্তু এতে ব্যর্থ হয়ে আমাকে কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই অন্যায় ও অসম্মানজনক আচরণের মাধ্যমে হাসপাতালের গেইটেই চাকুরিচ্যুতির নোটিশ দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাত বছর ধরে যে শ্রম, মেধা আমি এখানে দিয়েছি আমি সেগুলো ফেরত চাই। যখন কোনো চিকিৎসক ছিল না, আমিই এ হাসপাতালে একা সেবা দিয়েছি। চাকুরিচ্যুতির নোটিশ প্রত্যাহার করে আমাকে আমার সকল বেতন-ভাতা ও বকেয়া পরিশোধের দাবি জানাই।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী আকবর মাহমুদ বাবর, হাবিবুল হক বিপ্লব ও রুপম কান্তি শীল।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমপেরিয়াল হাসপাতালের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান আরিফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনাকে (আরিফ) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে তার চুক্তি শেষ হয়। এরপর থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবেই চাকরি করছিলেন। প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে ফের নতুন চুক্তি করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। তাই এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
হাসপাতালের প্রবেশমুখে গাড়ি আটকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ‘নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব’ বলে তিনি কল কেটে দেন। এরপর তিনি আর কল রিসিভ করেননি।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম