Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড়ের ২ তালুকদারের আয় কমেছে!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৩৬

রাঙ্গামাটি: দীপংকর তালুকদার। যাকে রাঙ্গামাটির রাজনীতিতে ‘বরপুত্র’ বলা হয়। ১৯৯১ সাল থেকে টানা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রাঙ্গামাটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন করছেন। এবারসহ টানা সাতবারই পেয়েছেন দলের মনোনয়ন। এর মধ্যে ছয় বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুই বার হেরেছেন, চার বার জিতেছেন। হারার চেয়ে জয়ের পাল্লা দ্বিগুণ। সবশেষ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীর কাছে হারেন তিনি। তার আগে ২০০১ সালে প্রথমবার বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন দীপংকর তালুকদার। তবে দ্বিতীয় দফায় হারের আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর পালন করেছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও। কিন্তু পরের বার আঞ্চলিক দলের ‘হাতির শুঁড়ে’র থাবায় ডোবে তার ‘নৌকা’।

বিজ্ঞাপন

দীপংকরের আয় কমেছে!

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিজের পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন সাধারণ ঠিকাদার ও কাঠের ব্যবসা। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেশার পরিবর্তন করেননি তিনি। তবে দ্বাদশে এসে তিনি একটি পেশা ছেড়েছেন। সাধারণ ঠিকাদার হিসেবে না থাকলেও এবার ব্যবসা হিসেবে রেখেছেন প্রথম শ্রেণির কাঠ ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারী। কিন্তু দশম জাতীয় নির্বাচনে উল্লিখিত ব্যবসা হতে ৪৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৭৫ টাকা এবং একাদশের নির্বাচনে ৮৪ লাখ ১৩ হাজার ১৪৫ টাকা বাৎসরিক আয় দেখালেও এবার তার ব্যবসা খাতে আয় শূন্য! তবে বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট এবং দোকান বা অন্যান্য খাতে ভাড়া বাবদ উল্লেখ করেছেন এবার ৫ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ টাকা। দশম নির্বাচনে যা ছিল ৪ লাখ ২১ হাজার ৫৭৫ এবং একাদশে এসে দাঁড়িয়েছিল ৫ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা। ১০ বছরের মাথায় এসে তার এই খাতে আয় বেড়েছে ২১ হাজার টাকা।

শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত খাতে দশম জাতীয় নির্বাচনে বাৎসরিক আয় ৬৮ হাজার ৪৩৭ টাকা ও একাদশে ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩২ টাকা দেখালেও দ্বাদশে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বাৎসরিক আয় ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬০০ টাকা দেখালেও ওই নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত না হওয়ায় একাদশে চাকুরি খাতে কোনো আয় ছিল না। তবে দ্বাদশের হলফনামায় তিনি এমপি সম্মানি ও ব্যাংক লভ্যাংশ হিসেবে আয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৭ টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দীপংকরের বাৎসরিক আয় ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৮৭ টাকা এবং একাদশে ৯৮ লাখ ১০ হাজার ২৭৭ টাকা হলেও বর্তমানে বাৎসরিক আয় ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ টাকা। এমপিও হয়েও পাঁচ বছরে তার আয় কমেছে এক পঞ্চমাংশেরও বেশি।

বিজ্ঞাপন

স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে

বিএ অনার্স (ইংরেজি) শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন দীপংকর তালুকদারের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। এবারের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নগদ টাকা ১ কোটি ৭৭ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৪ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৩০ টাকা, স্থায়ী আমানতে এফডিআরে ৫৪ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে ১ কোটি টাকা। মোটরগাড়িখাতে ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৮ টাকা। তবে নিজের ২৫ ভরির সোনার দাম দেখিয়েছেন মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যদিও বর্তমান বাজারে প্রতিভরি সোনার দাম লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী খাতে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭০০ টাকা, আসবাবপত্রে ৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং অন্যান্য বলতে একটি পিস্তল ও একটি রাইফেল খাতে উল্লেখ করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে নগদ ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৭৪ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৬ টাকা, সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা এবং ২৫ ভরি সোনার আনুমানিক মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৩ লাখ টাকা।

স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজ নামে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর অন্যান্য রেসিডেন্সিয়াল এলাকায় পাঁচ কাঠা জমি বাবদ আনুমানিক ৩৩ লাখ টাকা। দীপংকর তালুকদার যে বাসায় থাকেন; রাঙ্গামাটি শহরের চম্পকনগরের পাঁচ তলা বিশিষ্ট দীপালয়ের আনুমানিক মূল্য লিখেছেন ৮৮ লাখ ৩২ হাজার ২৩৩ টাকা। এছাড়া জেলার রাজস্থলী উপজেলার ৩৩১ নম্বর গাইন্দ্যা মৌজায় ২১ দশমিক ৩০ একর এবং রাঙ্গামাটি সদরের ১০৪ নম্বর ঝগড়াবিল মৌজায় ২ দশমিক ২৩ একর জায়গা দানসূত্রে পাওয়া উল্লেখ করলেও সেটির দাম লিখেননি। অন্যদিকে, স্ত্রীর নামে স্ত্রী প্লট বাবদ ১০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং একটি অ্যাপার্টমেন্ট বাবদ ৮০ লাখ ১২ হাজার টাকা উল্লেখ করেন। দায়-দেনার মধ্যে বর্তমানে (শেয়ারের হার অনুপাতে) ৫৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৫০ টাকা ৪০ পয়সা দেনা রয়েছেন।

দীপংকর তালুকদারের বর্তমানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২২ টাকা। স্ত্রীর আছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭৬ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় নিজের নামে ছিল ৪ কোটি ২৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫২ টাকা। স্ত্রীর নামে ছিল ১ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার ৫৭৬ টাকা। ২০১৩ সালের হলফনামায় দীপংকরের নামে ছিল ৩ কোটি ২৯ লাখ ৪২ হাজার ২৭৩ টাকা। স্ত্রীর নামে ছিল ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ৩২৫ টাকা। ১০ বছরের মাথায় দীপংকর তালুকদার ও তার স্ত্রী উভয়ের সম্পদ বেড়েছে।

দ্বাদশের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলোতে দীপংকর তালুকদার পার্বত্য অঞ্চলের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন ও নির্বাচনি এলাকার ব্রিজ, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্জনসমূহে দীপংকর বলেছেন, কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, অবশিষ্ট অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সম্পাদিত শান্তিচুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি পূর্ণ ও ৪টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে; অর্জনের হার ৯০ শতাংশ। আর অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রায় ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।

২৯৯ নম্বর রাঙ্গামাটি আসনে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দীপংকর তালুকদারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন জনসংহতি সমিতির স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার। ২০১৪ এর নির্বাচনে প্রথমবারই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দীপংকরকে হারিয়ে বিজয়ী হন ঊষাতন তালুকদার। যদিও একাদশের ভোটে ফের আসনটি ফের দীপংকর তালুকদারের দখলে চলে যায়। ২০১৪ সালে ঊষাতন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতীক ও ২০১৮ সালে সিংহ প্রতীকে নির্বাচন করেছিল। দুইবারের লড়াইয়ে দীপংকর ও উষাতন অর্থাৎ দুই তালুকদার সমানে সমান।

৫ বছরে দুই তৃতীয়াংশ আয় কমেছে ঊষাতনের

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ঊষাতন তালুকদার নিজের পেশায় উল্লেখ করেছিলেন ব্যবসা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য। ২০১৮ সালের একাদশের নির্বাচনে ব্যবসা ও সংসদ সদস্য এবং ২০২৪ সালের দ্বাদশের হলফনামাতে শুধুমাত্র ব্যবসা রেখেছেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় তিনি বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাতে ৭ লাখ এবং ব্যবসা খাতে ৫ লাখ টাকা।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ ৫ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত ৫ হাজার, ইলেকট্রনিকস্ সামগ্রী হিসেবে ৩ লাখ টাকা এবং আসবাবপত্রে ৩ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। স্ত্রীর নামে নগদ ১ লাখ টাকা ৮ ভরি সোনা বাবাদ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ১০ একর কৃষি জমির দাম ১ লাখ টাকা, অন্যান্যখাতে ৮ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর সম্পদ নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ (অনার্স) সম্পন্ন এই প্রার্থীর নামে বর্তমানে দু’টি সিআর মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঊষাতনের হলফনামায় উল্লেখ ছিল, তার বাৎসরিক আয় ৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাতে ২ লাখ টাকা, ব্যবসা খাতে দেড় লাখ টাকা এবং আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও অন্যান্য বাবদ ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ ৫ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত ৬ হাজার ২০৫ টাকা, ইলেকট্রনিকস্ সামগ্রী হিসেবে ৪৫ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্রে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেখিয়েছিলেন। স্ত্রীর নামে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণ বাবাদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ১০ একর কৃষি জমির দাম ১ লাখ টাকা, অন্যান্যখাতে ৮ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ৯ একর জমি বাবদ ৩ লাখ টাকা।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বাৎসরিক আয় ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ২০ টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাতে ৪ লাখ টাকা, ব্যবসা খাতে ৬ লাখ টাকা এবং সংসদ হিসেবে ২৬ লাখ ২৯ হাজার ২০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ ৩ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত ৭ হাজার ১৫৭ টাকা, স্থায়ী আমানত ৩০ হাজার, ইলেকট্রনিকস্ সামগ্রী হিসেবে ৩ লাখ টাকা এবং আসবাবপত্রে ৩ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে নগদ ১ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত ৫ হাজার ৭৪৪ টাকা, স্থায়ী আমানত ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৩ টাকা, ৮ ভরি সোনা বাবাদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ১০ একর কৃষি জমির দাম ১ লাখ টাকা, অন্যান্যখাতে ৮ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ৯ একর জমি বাবদ ৩ লাখ টাকা উল্লেখ করেছেন।

বাৎসরিক আয় হিসাবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঊষাতন তালুকদারের আয় কমেছে দুই তৃতীয়াংশ। দ্বাদশের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ঊষাতন তালুকদার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন, কাপ্তাই বাঁধের পানি নিয়ন্ত্রণ, আত্মকর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যসেবা, গণমুখী ও পরিবেশমুখী উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সারাবাংলা/পিটিএম

ঊষাতন তালুকদার দীপংকর তালুকদার রাঙ্গামাটি হলফনামা

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর