স্মার্ট বাংলাদেশের নতুন স্মার্ট উদ্যোগ ‘সাথী’
১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:০৬
ঢাকা: স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নাগরিক সেবাকে আরও সহজ ও জনবান্ধব করে তোলার পাশাপাশি ডিজিটাল ডিভাইস শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে স্মার্ট সেবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ-এর আওতাধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং ডাক অধিদফতর। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই এর কারিগরি সহযোগিতায় ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড পলিসি বাস্তবায়নের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ ‘সাথী’, মোবাইল এয়ারটাইমভিত্তিক সরকারি সেবার ফি পরিশোধ, স্মার্ট আর্টিক্যাল কালেকশন (চিঠি, ডকুমেন্ট, পার্সেল), স্মার্ট মোবাইল ডাকঘর এবং স্মার্ট পোস্ট বক্সের মতো স্মার্ট সেবার পাইলট কার্যক্রম শুরু করা হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত ৬ ডিসেম্বর পৃথক সভায় এই স্মার্ট সেবা কার্যক্রমগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এটুআই-এর সহায়তায় এর আগে আয়োজিত ‘স্মার্ট সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব’ থেকে উদ্ভূত সব স্মার্ট সেবাসমূহ বাস্তবায়নে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও তিনি নির্দেশ প্রদান করেন।
স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ ‘সাথী’ মূলত অ্যাপলের সিরি কিংবা আমাজনের অ্যালেক্সার মতোই একটি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ হিসেবে চালু করা হচ্ছে। স্মার্ট নাগরিকের জন্য স্মার্ট সংযোগ। এটি এমন একটি সংযোগ ব্যবস্থা, যা হবে মানুষের সাথী বা পার্টনার। তার কাছ থেকে ব্যবহারকারী সব ধরনের তথ্য পাবেন। এটুআই উদ্ভাবিত এআই প্রযুক্তির ‘সাথী’ অ্যাপ জিরো রেট ও প্রতিটি মোবাইলে ডাউনলোড করার জন্য বিটিআরসি সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে।
সরকারের সব ধরনের ডিজিটাল সেবা, পেমেন্ট সেবা ইত্যাদি এতে সংযুক্ত থাকবে। ফলে নাগরিকগণ আগের চেয়ে মোবাইল ব্যবহার করে বেশি বেশি কাজ সহজে করতে পারবেন। এরইমধ্যে সাথী’র একটি প্রাথমিক ইন্টারফেস তৈরি হয়েছে। সাথী মোবাইল নম্বর এর সঙ্গে ‘একীভূত’ করা থাকবে। মোবাইলে সিম চালু থাকলেই এটি সেটে সক্রিয় হবে না বরং মোবাইলে ইনস্টল করে নিতে হবে। তবে এটি ডাউনলোড করতে যাতে ব্যবহারকারীর কোনো ধরনের ডাটা (ইন্টারনেট) খরচ না হয় সেই ব্যবস্থাও থাকবে। সাথী যেন মোবাইলে খুব বেশি জায়গা না নেয় সেটি নিয়েও ভাবা হচ্ছে। স্মার্ট ও ফিচার ফোন- দুই ফোনেই সাথী ব্যবহার করা যাবে। সাথীকে অ্যাপ স্টোর বা প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে।
যেসব ব্যবহারকারী ইউএসএসডি বা অন্যান্য ফিচার ব্যবহার করতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সাথীকে মুখে বললেই কানেক্ট করিয়ে দেবে সেসব সেবায়। কলসেন্টার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কথা বলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে সাথী। ধীরে ধীরে বেসরকারি অপারেটর ও বিভিন্ন সেবাকেন্দ্রের সেবাকেও সাথী সংযোগ করিয়ে দেবে। এতে করে মোবাইলে বিভিন্ন সেবার জন্য বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার কমে আসবে। সাথীর বিভিন্ন ফিচার পর্যায়ক্রমে গ্রাহকের কাছে উম্মুক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে সাথী ইনস্টল করা থাকলে প্রতিটি ফিচার উম্মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে প্লে স্টোর ও আপ স্টোরে থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হবে। সাথী একটি জিপিটি এনাবল এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ব্যবহারকারীর সেবা দিতে দিতে আরও স্মার্ট হতে থাকবে। গ্রাহকের সুবিধার্থে ভবিষ্যতে সাথীর সঙ্গে চ্যাটবট যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এর এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট’কে জরুরি হেল্পলাইন ৯৯৯-এর সাথে সংযুক্ত করে একটি কমন এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট গড়ে তোলা হবে। এক্ষেত্রে বিটিআরসি এবং এটুআই একসাথে কাজ করবে। এছাড়া টেলিকম সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ প্রতিকার এর জন্য জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এর এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট’কে প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে।
নাগরিকদের বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন সরকারি সেবার অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে ডিরেক্ট অপারেটর বিলিং (ডিওবি) পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা হবে। ডিওবি হলো একটি অর্থপ্রদানের পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা এয়ারটাইম ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদির অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। সকল সরকারি সেবায় ডিওবি চালু হলে পেমেন্ট চ্যানেলের ঝামেলা দূর করা সম্ভব হবে এবং একইসাথে নাগরিকগণ ঘরে বসে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা উপভোগ করতে পারবেন। এয়ারটাইম ইন্টারঅপারিবিলিটি ও অন্যান্য নাগরিকবান্ধব সেবাকে ডিওবি-এর আওতায় আনার জন্য বিটিআরসি এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক এর সাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া ডাক অধিদপ্তরের আওতায় স্মার্ট আর্টিক্যাল কালেকশন (চিঠি, ডকুমেন্ট, পার্সেল) সেবার আওতায় নাগরিকরা ডাকঘরে না এসে ঘরে বসেই যেকোনো ডিভাইসের মাধ্যমে প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকানা এবং ডাকযোগে প্রেরিতব্য আর্টিক্যাল এর বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে ঠিকানা লেবেল প্রিন্ট করতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত ডাকদ্রব্য ডাকঘরের নিয়োজিত ‘র্যাপিড রানার’গণ প্রেরকের ঠিকানা হতে সংগ্রহ করবেন ও ডাকযোগে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই সেবার আওতায় ডাকযোগে প্রেরিত ডকুমেন্ট ও পার্সেলসমূহ ট্র্যাক ও ট্রেসিং এর আওতায় থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ঠিকানাসমূহ হতে সংগ্রহপূর্বক দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো ঠিকানায় প্রেরণের জন্য এই সেবা চালু হতে যাচ্ছে।
স্মার্ট মোবাইল ডাকঘর এর মাধ্যমে দেশের প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রসমূহ হতে দেশের অভ্যন্তরে যে কোনো ব্যবসায়ী, দোকান ও ভোক্তার ঠিকানায় পার্সেল যোগে বিভিন্ন বিক্রিত পণ্য পাঠানো যাবে। সপ্তাহের ৭ দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চালু থাকা এই স্মার্ট মোবাইল ডাকঘরগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রসমূহেই অবস্থান করে নিয়মিত ডাকঘরের বর্ধিত সেবা হিসেবে কাজ করবে। এই ডাকঘরসমূহ হতে প্রেরিত পণ্যসমূহ দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে দ্বিতীয় কর্মদিবসেই পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার প্রধান কয়েকটি পাইকারি বাজারে স্মার্ট মোবাইল ডাকঘরের অপারেশন শুরু হবে। এই ডাকঘরগুলো পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বাণিজ্যিক কেন্দ্রে সম্প্রসারণ করে কমিউনিটি লেভেলেও সম্প্রসারিত করা হবে।
কমিউনিটি পর্যায়ে ‘স্মার্ট পোস্টবক্স’ নামক একটি অটোমেটেড ডেলিভারি সেবা চালুর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন। এটুআই উদ্ভাবিত ‘স্মার্ট পোস্টবক্স’ গুলো চালু করা হলে কমিউনিটি পর্যায়ে স্থাপিত ‘স্মার্ট পোস্টবক্স’গুলোতে নাগরিকদের বিভিন্ন ঠিকানায় আগত ডাকদ্রব্যসমূহ পৌঁছে দেওয়া হবে। এই বক্সে প্রদান করা মাত্রই নির্দিষ্ট প্রাপক তার মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পাবেন। পরবর্তীতে নিজ পরিচয় নিশ্চিত করে নির্দিষ্ট বক্স থেকে নির্দিষ্ট ডাকদ্রব্য সংগ্রহ করতে পারবেন। সম্পূর্ণভাবে ডিভাইস ও প্রযুক্তিনির্ভর এই অবকাঠামো থেকে কোনো রকম জনবলের উপস্থিতি ছাড়াই সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা জুড়ে ডাকদ্রব্য সংগ্রহ করা যাবে। প্রাথমিকভাবে প্রধান প্রধান জনবহুল এলাকায় ধারাবাহিকভাবে এই বক্সগুলো স্থাপন করা হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে