ঢাকা: রাজধানীর বিভিন্ন বাজার এখন নতুন পেঁয়াজে ভরপুর। কমতে দামও। মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় সব ধরনের পেঁয়াজের দামই কমতে শুরু করেছে। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কারওরানবাজার, সেগুনবাগিচা, রাপমুরা, মালিবাগ ও মহখালী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা গত শুক্র-শনিবার ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
এদিকে পাঁড়া মহল্লায় ফেরি করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও পেঁয়াজ ৭০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাতাসহ মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম নেমেছে ৬০ টাকা কেজিতে।
তবে পুরনো দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো বেশি। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। যা ২৪০ টাকা পর্যন্ত ছিল। এছাড়া অধিকাংশ দোকানেই পাওয়া যায়নি দেশি পুরনো পেঁয়াজ। এছাড়া চায়না পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০-১৩০ টাকা কেজি।
রবি মৌসুমে দেশের সিংহভাগ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। আশ্বিন থেকে ফাল্গুন— এ সময়ে প্রথম দিকে কন্দ বা মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়। এরপর চারা বা হালি পেঁয়াজ আবাদ করেন কৃষক। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ দিকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ কাটা শুরু হয়। কিন্তু এ বছর কৃষকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই মুড়িকাটা পেঁয়াজ কাটতে শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের রবি মৌসুমে মোট ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টরে এ বছর আবাদ করা হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় আট লাখ টন। প্রায় দুই-তিন মাস দেশের বাজারে এ পেঁয়াজ থাকে। এরপর মার্চে হালি পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৮ লাখ টন।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। সর্বশেষ অর্থবছরে ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে মাঠ পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত যেতে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয় কিংবা শুকিয়ে কমে যায়। চলতি বছরের মার্চে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গত এপ্রিলের মাঝামাঝি নিত্যপণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। এরপর জুনের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০০ টাকায় ঠেকলে গত ৫ জুন থেকে আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ২৯১ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। এর বিপরীতে আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার ৪৩৭ টন।
এদিকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এছাড়া সারাদেশে প্রায় তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ৫৩টি টিম। এসব অভিযানে ১২২টি প্রতিষ্ঠানকে ৮ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এচছাড়া বাজারে নজরদারি বাড়িয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।