Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাপায় এবার অস্থিরতার কেন্দ্রে চেয়ারম্যান-মহাসচিব

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৪

ঢাকা: নির্বাচন এলেই সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) অবস্থান নিয়ে তৈরি হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল তো বটেই, প্রতীক বরাদ্দের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। তবে জাতীয় পার্টির নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিরতা দূর হয়নি। পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং তার ছেলে সাদ এরশাদকে বাদ দিয়েই চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে মনোনয়নপত্র বিতরণসহ নির্বাচনের প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছিল দলটি। শেষ মুহূর্তে এসে সেই জি এম কাদেরের নেতৃত্বই পড়তে পারে হুমকির মুখে। পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর অবস্থানও নড়বড়ে বলে ইঙ্গিত মিলছে।

বিজ্ঞাপন

পার্টির একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর ভূমিকায় নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতি আরও জটিল হলে এই শেষ সময়ে এসেও দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে পারে পরির্বতন। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। সেদিন জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদেরের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। দুজনেই দাবি করেন, তার সইয়েই প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন জি এম কাদেরের সই গ্রহণযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত জানায়। তবে জি এম কাদেরের সইয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলকে জি এম কাদেরের অধীনে থাকার সমতুল্য বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতার দৌড়েই দাঁড়াননি রওশন এরশাদ। মনোনয়নপত্র জমা দেননি তার ছেলে সাদ এরশাদও।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, রওশন এরশাদের সঙ্গে বিবাদসহ আরও কয়েকটি দলীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মতানৈক্যের কারণে জাপার চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে দায়িত্বরত জি এম কাদের ও চুন্নুর অবস্থান টলে গেছে। এ ক্ষেত্রে মহাসচিব পদে নতুন মুখের সম্ভাবনা দেখছেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই। অন্যদিকে জি এম কাদের নিজ পদে বহাল থাকলেও কার্যত তার হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে না।

এ অবস্থায় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহামুদ পার্টির নির্বাচন পরিচালনাসহ সার্বিক দায়িত্বে প্রকাশ্যে আসতে পারেন— এমন সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ। সব কিছু মিলিয়ে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন।তিনি চুড়ান্ত সিন্ধান্ত নিবেন ১৭ ডিসেম্বর।

বিজ্ঞাপন

জাপার একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, নির্বাচনের আর সপ্তাহ তিনেক বাকি থাকলেও জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আগের মতো আসন ভাগাভাগি করে ভোটে যাবে নাকি এককভাবে ভোট করবে— সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগই মনে করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এবং জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে গেলে আসন মিলতে পারে হাতেগোনা দুই-তিনটি। কারণ জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্যদেরও নিজ এলাকায় জনসমর্থন ও জনসম্পৃক্ততা নেই।

দলের আরেক সূত্র জানায়, নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিলেন জি এম কাদের। সরকারি দলের হাইকমান্ডের কাছেও তথ্য যায়— তিনি ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণাও দিতে পারেন। এ তথ্য জানার পরপরই রওশন এরশাদকে গণভবনে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জাতীয় পার্টিকে সাফ জানিয়ে দেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট বা আসন নিয়ে তারা কোনো সমঝোতা করবেন না। এতে আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলার চিন্তা করতে গিয়ে জি এম কাদের জাতীয় পার্টিকেই বিপাকে ফেলে দেন।

জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনে ৭৫টি আসন চেয়ে বসেন জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু। বলেন, অন্তত ৪০টি আসনের আশ্বাস মিললে জাপা সমঝোতা করবে। জাপার এমন চাহিদাকে পাত্তাই দেননি আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা ২০টিরও কম আসনে ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। পরে শেখ হাসিনার সঙ্গে রওশন এরশাদের বৈঠক হলে আসন নিয়ে সমঝোতার পথ থেকেই সরে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। এ পরিস্থিতিকে জাপার অনেক নেতাই রীতিমতো পানিতে পড়ার সঙ্গে তুলনা করছেন।

জানতে চাইলে জাপার প্রভাবশালী একজন কো-চেয়ারম্যান সারাবাংলাকে বলেন, জি এম কাদের চেয়েছিলেন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নির্বাচন বর্জন করার মতো শক্তি তার নেই। কারণ আমরা টিকেই আছি বঙ্গবন্ধুকন্যার কারণে। বিএনপি এলে হয়তো আমাদের অস্তিত্ব অনেক আগেই বিলীন হয়ে যেত। ফলে আমরা যারা প্রার্থী হয়েছি ও মাঠে রয়েছি, তারা জি এম কাদেরের আদেশ-নির্দেশের তোয়াক্কা করব না।

পার্টির ওই কো-চেয়ারম্যান আরও বলেন, সোজাভাবে পথ চললে নির্বাচনের আগে নেতৃত্বে পরির্বতন আসবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে বাঁকা পথে চললে পরিবর্তন আসতেও পারে। এরকম লক্ষ্মণ দলের মধ্যে দেখাও যাচ্ছে। যেমন— জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হলেও তার ভূমিকাটি পালন করছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। অন্যদিকে মহাসচিব পদে থাকলেও মুজিবুল হক চুন্নু মূলত পার্টির মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছেন। অদৃশ্য অনেক শক্তিই এখন পার্টিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।

এসব বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে কোনো শঙ্কা বোধ করছেন না বলে জানান জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এরকম কোনো আশঙ্কা আমি করছি না। হয়তো একটি পক্ষ এসব কথা ছড়াচ্ছে।’

জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। ঘটলে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। আবার নাও ঘটতে পারে। তবে আমরা সংকটের মধ্য দিয়ে পথ চলছি, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

আসন ভাগাভাগি আসন সমঝোতা জাতীয় পার্টি জাতীয়-নির্বাচন জি এম কাদের মুজিবুল হক চুন্নু রওশন এরশাদ সংসদ নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর