সমঝোতায় ১৪ দলের শরিকদের আসন কমে অর্ধেক
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:১৭
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসী আওয়ামী লীগের আদর্শিক জোট ১৪ দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই। ১৪ দলীয় জোটের একাধিক বৈঠকের পর অবশেষে সেই আসন ভাগাভাগির হিসাব দিয়েছেন জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু।
আসন ভাগাভাগির যে হিসাব তিনি দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট শরিকদের জন্য আওয়ামী লীগ ১৩টি আসন ছাড়লেও এবার ছেড়েছে মাত্র সাতটি। তাতে গতবারের তুলনায় আসন কমেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির। হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) আসনসংখ্যা আগের মতোই রয়েছে। অন্যদিকে শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদ এবং তরিকত ফেডারেশন এবার বাদ পড়েছে আসন সমঝোতার হিসাব থেকে।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) ১৪ দলীয় জোট নেতাদের এক বৈঠকের পর আমির হোসেন আমু এই আসন সমঝোতার তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সাতটি আসনে সমঝোতা হয়েছে। আসন সমঝোতা হয়ে গেছে বলা চলে। তবে আর মাত্র একটি আসন বাড়তে পারে। যদি বাড়ে তবে সেটি চট্টগ্রামে দেওয়া হবে।’
জোটের শরিক দলগুলোর জন্য আওয়ামী লীগ যে কয়েকটি আসন ছেড়েছে তার মধ্যে তিনটি পেয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, তিনটি পেয়েছে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এবং একটি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি)।
আরও পড়ুন- শরিকদের ৭ আসন ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সমঝোতা
ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া তিনটি আসনের মধ্যে পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বরিশাল-৩ আসন। রাজশাহী-২ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ফজলে হোসেন বাদশাকে। আর সাতক্ষীরা-১ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে থাকছেন মোস্তফা লুৎফুল্লাহ আহসান।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টিকে পাঁচটি আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবারে সমঝোতায় আসন পাওয়া তিনজন গতবারও ছাড় পেয়েছিলেন। এর মধ্যে মেনন নির্বাচন করেছিলেন ঢাকা-৮ আসনে। এবারে তিনি চলে যাচ্ছেন বরিশাল-৩ আসনে। গত নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনের টিপু সুলতান এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের ইয়াসিন আলী এবার জোট থেকে মনোনয়ন পাননি।
একাদশে ওয়ার্কার্স পার্টি ১৪ দলীয় জোট থেকে পাঁচটি আসনে ছাড় পেলেও নির্বাচনে জিতে আসেন তিনজন— রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা ও মোস্তফা লুৎফুল্লাহ আহসান। বরিশাল-৩ আসনে টিপু সুলতান এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ইয়াসিন আলী ভোটে জয় পাননি।
জাসদ (ইনু)-কে এবার ছেড়ে দেওয়া তিনটি আসনের মধ্যে হাসানুল হক ইনু লড়বেন কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে, মোশারফ হোসেন লড়বেন লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে এবং রেজাউল করিম তানসেন লড়বেন বগুড়া-৪ আসন থেকে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের জাসদ (ইনু) তিনটি আসনে ছাড় পেয়েছিল। ওই বছর এবারের মতোই ইনু কুষ্টিয়া-২ ও তানসেন ভোট করেছিলেন বগুড়া-৪ আসন থেকে। আর ফেনী-১ আসনে জোটের প্রার্থী ছিলেন শিরিন আক্তার। এবারে শিরিন আক্তার জোটের প্রার্থী হতে পারেননি। আর গতবার মনোনয়ন না পাওয়া মোশারফ এবার লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে নির্বাচন করবেন ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে। সেবার ইনু ও শিরিন আক্তার ভোটে জিতলেও তানসেন হেরে যান বিএনপির মোশারফ হোসেনের কাছে।
এবার পিরোজপুর-২ আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। গত বছরও একই আসনে তিনি জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। মঞ্জু এই আসনে ছয়বারের সংসদ সদস্য।
এদিকে গত নির্বাচনে শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদের আরেক অংশ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট থেকে দুটি আসনে ছাড় পেয়েছিল। জাসদের এই অংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া নিজে নড়াইল-১ এবং মইনুদ্দিন খান বাদল চট্টগ্রাম-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার প্রত্যয়নপত্র পান। পরে অবশ্য নড়াইল-১ আসনে নৌকার চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা কবিরুল হক মুক্তি নাম ঘোষণা করা হয়। ফলে আম্বিয়ার আর নির্বাচন করা হয়নি। তবে মইনুদ্দিন খান বাদল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
অন্যদিকে দ্বাদশে এসে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল তরিকত ফেডারেশন কোনো আসনে ছাড় পায়নি। একাদশে তারা দুটি আসনে ছাড় পেয়েছিল। এর মধ্যে দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে চট্টগ্রাম-২ আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন খান জোটের প্রার্থী হন লক্ষ্মীপুর-১ আসনে। এর মধ্যে নজিবুল বশর নিজ দলের প্রতীক ফুলের মালা নিয়ে জয় পেলেও আনোয়ার জয় পান নৌকা প্রতীক নিয়ে। এবার অবশ্য আমির হোসেন আমু সাতটির বাইরেও চট্টগ্রামের একটি আসনে সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। সেটি হলে হয়তো নজিবুল বশরের কপাল খুলবে।
এর বাইরে চট্টগ্রাম-১ আসনে সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া এবং ঢাকা-১৪ আসনে জেপির শেখ শহীদুল ইসলাম জোটের সমর্থন চেয়েছিলেন। জাসদের শিরিন আখতারও গতবারের মতো ফেনী-১ আসনে জোটের প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশায় ছিলেন। তবে তাদের কারও প্রত্যাশাই পূরণ হয়নি।
১৪ দলের শরিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দলসহ আরও কয়েকটি দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনেই জোটের সমর্থন পায়নি। এবারও এই দলগুলোর জন্য কোনো আসন ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ।
গত বছর জোটসঙ্গী না হয়েও নির্বাচনি কৌশলের কারণে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি চৌধুরী) বিকল্পধারা বাংলাদেশকে দুটি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ভোটে জয় পেয়েছিলেন মাহী বি চৌধুরী (মুন্সীগঞ্জ-১) ও আব্দুল মান্নান (লক্ষ্মীপুর-৪)। এবারে তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি জোট থেকে। আব্দুল মান্নানের মনোনয়নপত্র ইসি বাতিলও করেছে। আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি তিনি। আর মাহী বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করলেও আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনি।
১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা এখনো আরও কিছু আসন প্রত্যাশা করছেন। তবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বলছে, শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতার দরজা বৃহস্পতিবারের বৈঠকের মধ্য দিয়েই বন্ধ হয়ে গেছে। এবার কেবল সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির হিসাব বাকি।
গত বছর জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকা ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। এর মধ্যে ২২টি আসনে জিতেছিলেন জাপা প্রার্থীরা। এবার আরও বেশি আসনেই ছাড় প্রতাশা করছে জাপা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দুয়েক দিনের মধ্যে জাপার সঙ্গে হিসাবও চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।
সারাবাংলা/টিআর
১৪ দল ১৪ দলীয় জোট আওয়ামী লীগ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আসন ভাগাভাগি আসন সমঝোতা ওয়ার্কার্স পার্টি জাতীয় পার্টি জাতীয়-নির্বাচন জাসদ (আম্বিয়া) জাসদ (ইনু) জেপি তরিকত ফেডারেশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ফজলে হোসেন বাদশা বিকল্প ধারা রাশেদ খান মেনন সংসদ নির্বাচন হাসানুল হক ইনু