শরিকদের আসন কমিয়েছে আ.লীগ, জাপার ভাগে থাকছে কটি
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:০৪
ঢাকা: দ্বাদশ নির্বাচনে নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় বাকি মাত্র দুই দিন। এরপরই ১৮ ডিসেম্বর শুরু হবে নির্বাচনি প্রচার। নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর প্রার্থিতা চূড়ান্তের বিষয়টি তাই এখন উঠে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার জোটের শরিক দলগুলোর পাশাপাশি মহাজোটের সঙ্গী ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আসন নিয়ে কতটা সমঝোতা করবে, সেটিই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম আলোচিত বিষয়।
শেষ পর্যন্ত ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এবার শরিকদের মধ্য থেকে তিনটি দলের জন্য আওয়ামী লীগ ছাড় দিয়েছে সাতটি আসনে। অথচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও এই জোটের জন্য ১৩টি আসন ছেড়েছিল দলটি। সে হিসাবে এবার ছেড়ে দেওয়া আসন নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই মহাজোটের সঙ্গী জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ কয়টি আসনে ছাড় দেবে।
টানা বেশ কয়েকটি বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির সঙ্গেও নির্বাচনি আসন ভাগাভাগি বা সমঝোতা নিয়ে হয়েছে একাধিক বৈঠক। তবে সেসব বৈঠক থেকে কোনো ফলাফল আসেনি। জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তাদের চাহিদার আসনগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি নিয়েই আওয়ামী লীগের সঙ্গে মতৈক্য হচ্ছে না বলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে সময় লাগছে।
আরও পড়ুন- ৪০ আসনে সমঝোতা না হলে সরে দাঁড়াতে পারে জাপা!
জাপার একাধিক নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছিল জাতীয় পার্টিকে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি উম্মুক্ত প্রার্থী রেখেছিল ১৪৭টি আসনে। তবে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মহাজোট থেকে ছাড় দেওয়া ২৬টি আসনের মধ্য থেকে ২২টিতে জয় পায় জাপা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় চারটি সংরক্ষিত মহিলা আসন। সব মিলিয়ে ২৬ জন সংসদ সদস্য একদশ সংসদে জাপার প্রতিনিধিত্ব করছেন। দ্বাদশের সংসদে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আরও বেশি আসন প্রত্যাশা করছে দলটি।
জাপা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার জাপার পক্ষ থেকে ৪৭টি আসনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের কাছে, যে আসনগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে জয়ের নিশ্চয়তা চায় জাপা। তাদের প্রত্যাশা, এই আসনগুলোতে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী থাকবেন না।
জাপার একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ওই তালিকা থেকে আওয়ামী লীগ ৩৬টি আসনে ছাড় দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু সেই তালিকায় থাকা বরিশাল-৩ (রাশেদ খান মেনন) ও সাতক্ষীরা-১ (মোস্তফা লুৎফুল্লাহ আহসান) আসন দুটি ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আরও পড়ুন- শরিকদের ৭ আসন ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সমঝোতা
এদিকে জাপার সিনিয়র নেতা কাজী ফিরোজ রশিদ প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা-৬ আসনে। এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দুই দল থেকেই ইঙ্গিত মিলেছে, এই আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জাতীয় পার্টির দাবি করা আরও কয়েকটি আসনে এমন জটিলতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তারপরও তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে সমঝোতার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫টি আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে জাতীয় পার্টি ছাড় পেতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
আরও পড়ুন- সমঝোতায় ১৪ দলের শরিকদের আসন কমে অর্ধেক
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আগে অবশ্য জাতীয় পার্টি ১০০ জনের তালিকা প্রস্তুত করেছিল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের নির্বাচনি আসনের দর কষাকষি শুরুই হয় ওই ১০০ আসন দিয়ে। আওয়ামী লীগের সাড়া না পেয়ে নিজেরাই রিভিউ করে সেই তালিকা ৪৭ জনে নামিয়ে আনে জাপা। এর মধ্যেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসন নিয়ে জটিলতায় জাপা নেতারা এখন এই তালিকাও পর্যালোচনা করছেন। পর্যালোচনা শেষে সংখ্যা কমিয়ে ফের এটি দেওয়া হবে আওয়ামী লীগকে।
জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল ও প্রভাবশালী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতার হিসাব শেষের পথে। আগামীকাল (আজ শুক্রবার) সব হিসাব পরিষ্কার হতে পারে। কোনো কারণে সেটি সম্ভব না হলে পরশু (শনিবার) সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ২০ থেকে ২৫টি আসনে হয়তো ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
আওয়ামী লীগ আসন ভাগাভাগি আসন সমঝোতা জাতীয় পার্টি জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংসদ নির্বাচন