সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে দেশে ঢুকছে ভারতীয় চিনি
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০৪
সুনামগঞ্জ: রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সুনামগঞ্জের দুই উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে দেশে আসছে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় চিনি। আর সেই চিনি রাত ১২টার পর সুনামগঞ্জের পৌর শহর দিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এতে প্রতিনিয়ত যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি এলাকায় বাড়ছে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য।
জানা যায়, বৈঠাখালী এলাকার সুরমা নদীর ওপর আব্দুজ জহুর সেতু নির্মাণের পর বদলে যায় এই অঞ্চলের অর্থনীতি। তবে রাত ১২টার পর থেকে বদলে যায় এই সেতুর ধরণ। প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় চিনি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে সম্প্রতি আব্দুজ জহুর সেতু থেকে ২ কিলোমিটার দূরে রাধানগর পয়েন্টে যেতেই অন্ধকারের মধ্যে দেখা যায় একটি মাল ভর্তি ট্রাক। সেই ট্রাকের সামনে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাক চালক শিবুল বলেন, ‘গাড়িতে ভারতীয় চিনি আছে। সেগুলো জেলার জাওয়া বাজার এলাকায় যাবে। পুলিশ ট্রাক আটকে টাকা দাবি করেছিল, পরে আপনাদের (সাংবাদিক) দেখে চলে গেছে।’
এদিকে রাধানগর পয়েন্ট থেকে আরও ৩ কিলোমিটার দূরে চালবন পয়েন্ট। সেখানে রাস্তার দুই পাশে পুলিশের চেক পোস্ট থাকলে দায়িত্বরত কোনো পুলিশ সদস্যকে পাওয়া যায়নি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ বাজারে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে চায়ের ব্যবসা করেন করম আলী। করম আলী জানান, শুধু পলাশ বাজার দিয়ে চোরাকারবারিরা ভারতীয় চিনি আনা-নেওয়া করে না। এই উপজেলার অন্য সড়ক দিয়েও প্রতিদিন ভারতীয় চিনি বের হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন রাত ১২টার পর ধনপুর, চিকারকান্দি, বাঘবেড়, চেংবিল, শরীফগঞ্জ, মতুরকান্দিসহ বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ৮ থেকে ১০টি ট্রাক ভর্তি চিনির গাড়ি বের করে চোরাকারবারিরা। প্রতিটি গাড়িতে ৩০০ বস্তা করে ভারতীয় চিনি থাকে। পরে রাধানগর এলাকায় এসে পুলিশকে ম্যানেজ করে সেই সব চিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
অবৈধ ভারতীয় চিনির চোরাকারবারী সাইফুল (ছদ্মনাম) বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় ২০ থেকে ২২ জন ব্যবসায়ী চোরাইপথে চিনি নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে। যার ভাগ সবাই পায়।’
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে চলতি বছর নভেম্বর মাস পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ অভিযানে সুনামগঞ্জে ১৯২.৯ মেট্রিক টন চিনি জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য ১ কোটি ৯২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে ১৯৭ জন চোরাকারবারিকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্ বলেন, ‘চিনি চোরাচালানের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ চোরাচালান বন্ধে বদ্ধপরিকর।’
সারাবাংলা/এমও