Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারীর হাতে বদলে যাচ্ছে উপকূলের কৃষি

মনিরুল ইসলাম, লোকাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৩৩

কুয়াকাটা: ঘরের কাজ শেষে রাহেলা বেগমের অবসর কাটাত নিতান্তই অলসতায়। এসময়ে পরিবারের আর্থিক অক্ষমতা বিষন্ন করে তুলত তাকে। কিভাবে পরিত্রাণ মিলবে এমন ভাবনায় ছিলেন উদ্বিগ্ন। সিদ্ধান্ত নেন, অলস সময়ে বাড়ির আশেপাশের পতিত জমিতে মৌসুমী নানা সবজি চাষ করবেন। শুরুও করেছিলেন। কিন্ত পাচ্ছিলেন না কাঙ্ক্ষিত ফলন। এসময় প্রতিবেশির পরামর্শে যোগাযোগ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে রাহেলাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাকে চাষের উপকরণসহ বীজ সরবরাহ করে বেসরকারি এই উন্নয়ন সংস্থা।

বিজ্ঞাপন

শুধু বাড়ির আশেপাশের পতিত জমি নয়, বছরের পর বছর ধরে অনাবাদি থাকা লবণাক্ত পতিত জমিকেও করে তুলেছেন চাষ উপযোগী। এখন রাহেলা একজন সফল কৃষি উদ্যক্তা। প্রথম দিকে অনেকেই এটি নিছক পাগলামি মনে করলেও এখন তারাই রাহেলার সাহায্য নিয়ে পরিণত হয়েছেন সফল কৃষাণীতে।

চাকামইয়ার চুঙ্গাপাশা গ্রামের রাহেলা ছাড়াও এখন সফল কৃষাণী ও কৃষি উদ্যক্তা মহিপুরের মনোহরপুর গ্রামের মালতী রাণী, লাভলী বেগম, লালুয়ার চারিপাড়া গ্রামের সালেহা বেগম। এদের দেখাদেখি এখন উপকূলের অনেক নারীই সরাসরি জড়িয়ে পড়েছেন কৃষিকাজে।

এখন পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ বাড়ির আশেপাশেসহ আনাবদি পতিত লবণাক্ত জমিতে বছর জুড়ে চলছে সবজি চাষ। এসব সবজি চাষ করছে প্রান্তিক জনপদের নারীরা। সরকারি, বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এমন সবজি চাষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত পটুয়াখালীর উপকূলীয় জনপদের নারীদের করছে সাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল। পাশাপাশি পরিবারে যোগান হচ্ছে বাড়তি অর্থনৈতিক সুবিধা।

আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অসহায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলার বাড়ছে সক্ষমতা। নারীরা পরিণত হবে দক্ষ জনশক্তিতে। কৃষি অর্থনীতিতে আসছে নতুন গতিশীলতা।

উপকূলের প্রান্তিক জনপদের নারীদের কাছে দিনদিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কৃষিকাজ। বাড়ির অব্যবহৃত জমিসহ অনাবাদি লবণাক্ত জমিকে চাষ উপযোগী করে বছর জুড়ে উৎপাদন করছে বিভিন্ন মৌসুমী সবজি। জমি প্রস্ততকরণ, চারা রোপণ, বীজ বপন, সেচ, পরিচর্য, ফসল উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ এমনকি বাজারজাতেও এককভাবে ভূমিকা পালন করছে এসব নারীরা।

জৈব সারের ব্যবহারে উৎপাদিত এই সবজি পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে হচ্ছে সাবলম্বী নারীরা। হাঁস-মুরগি পালন করেও পরিবারে যোগান দিচ্ছে বাড়তি আয়ের।

বিজ্ঞাপন

চাকামইয়ার রাহেলা বেগম জানান, অভাবের সংসারে বছরজুড়ে সবজি চাষ তার সংসারের অভাব দূর করেছে। এখন স্বামীর আয়ের সঙ্গে বাড়তি যোগান দিচ্ছে তার উপার্জন।

মনোহরপুরের মালতী রানী, লাভলী বেগম জানান, এ অঞ্চলে আদা চাষ হয় না। অন্য সবজির সঙ্গে তারা আদা শুরু করেছিলেন। কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর একটি এনজিও থেকে তাদের আদার বীজ সরবারহ করা হয়। পরীক্ষামূলক চাষে তারা বেশ সফলতা পেয়েছেন। তাদের দেখাদেখি এখন অনেকেই আদা চাষে এগিয়ে আসছে।

লালুয়ার সালেহা বেগম বলেন, ‘এনজিও থেকে পাওয়া মাত্র ১২টি হাঁস নিয়ে তিনি পালা শুরু করেছিলেন। গত ৩ বছরে এখন তার ফার্মে প্রায় ৩০০ হাঁস, ১৫০ মুরগি আছে। এখন প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে তার গড় আয় ২ হাজার ৪০০ টাকা।’

ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ’র এসিসটেন্স ফর সাসটেইন্যাবল ডেভলপমেন্ট প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূলীয় জনপদের নারীদের কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করা গেলে দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। কারণ দুর্যোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা আর্জনের ফলে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা সম্ভব।’

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রশিক্ষণ, উপকরণ সরবারহ, নিয়মিত তদারকিতে উপকূলীয় জনপদের নারীরা কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে। কোনো জমি আর অনাবাদি থাকছে না। ফলে কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা হচ্ছে।’

সারাবাংলা/এমও

উপকূল উপকূলের কৃষি নারী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর