সারাদেশে মহান বিজয় দিবস উদযাপন
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:২১
ঢাকা: সারাদেশে আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্যে উদযাপন করা হচ্ছে বিজয় দিবস। দেশের বিভিন্ন স্থানের বধ্যভূমি, শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানান একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়েছে উজয় উৎসবেরও। কোথাও কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া হয়েছে সম্মাননা।
বিজয়ের এই দিনে বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষেরা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে উৎখাত, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিসহ সব ‘অন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ রুখে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিজয় দিবস উদযাপনের খবর পাঠিয়েছেন সারাবাংলার প্রতিনিধিরা।
নাটোর
উৎসবমুখর পরিবেশে আজ জেলায় বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি নেয়। সূর্যোদয়ের সাথে-সাথে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়। সকল ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শহরের মাদরাসা মোড়ে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। স্থানীয় শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে।
সন্ধ্যায় আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং সরকারি গণগ্রন্থাগার শিক্ষার্থীদের জন্যে চিত্রাংকন, রচনা, উপস্থিত বক্তৃতা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে তথ্য অফিস।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। শনিবার ভোরে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়স্থ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। অনুষ্ঠানে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মনোমুগ্ধকর শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। এছাড়াও দিনের অন্য কর্মসূচির মধ্যে আলোচনা সভা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণও করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা: জেলায় মহান বিজয় দিবস গভীর শ্রদ্ধাভরে উদযাপন করা হচ্ছে। ভোর ৬টায় শহীদ হাসান চত্বরে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা করা হয়। এরপর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জেয়ার্দ্দার ছেলুন।
এসময় জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, জেলা পরিষদ ও রেডক্রিসেন্ট ইউনিটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এসময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান।
সকাল সাড়ে ৮টায় পুরাতন স্টেডিয়ামে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কবুতর অবমুক্ত ও পতাকা উত্তোলন ও বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা ও পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান। এসময় স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
জয়পুরহাট: একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শনিবার জয়পুরহাটে যথাযোগ্য মর্যাদা ও নানা আয়োজনে ৫২তম বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়।
শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহে ৩১বার তপোদ্ধনির মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সরকারি বিভিন্ন বিভাগ, আওয়ামী লীগ, জাসদ, সিপিবি, জাপা, বাসদ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে অবস্থিত স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মরণে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
সিলেট: আজ সকালে সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকাল থেকেই সিলেট নগরীর চৌহাট্রাস্হ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকার সড়কে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনসহ সকল শ্রেণীপেশার মানুষ ফুল,ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্দেশে দলে দলে আসতে থাকেন। এতে পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য পরিণত হয়।
সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বেদিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে প্রথমে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। পরে একে একে সিলেট সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় কমিশনার, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এসপি আরআরএফ কমান্ডেন্ট, এসপি এপিবিএন শ্রদ্ধা জানান।
ফেনী: জেলায় বিনম্র শ্রদ্ধায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন জেলাপ্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনৈতিক দল, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
সকালে জেলা প্রশাসন থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান জেলাপ্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান পুলিশ সুপার জাকির হাসান এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান সিভিল সার্জন ডা. মো. শিহাব উদ্দিন। এসময় বীরমুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা পরিষদ ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এর আগে দিবসটি পালন উপলক্ষে ফেনী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গন থেকে বধ্যভূমি পর্যন্ত র্যালি করে প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পাবনা: বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় পাবনায় উদযাপিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস।
এ উপলক্ষে শনিবার সকালে শহিদদের স্মরণে নির্মিত ‘দুর্জয় পাবনা’ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পাবনা জেলা প্রশাসন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা পরিষদ, পুলিশ প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ, পাবনা জেলা বিএনপি, পাবনা পৌরসভা, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা মেডিকেল কলেজ, সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ, গণপুর্ত, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, সড়ক ও জনপথ, সরকারি মহিলা কলেজ, পাবনা কলেজ, পাবনা প্রেসক্লাব, হাজী জসীম উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ, পাবনা সংবাদ পত্র পরিষদ, জেল সুপার , ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জেলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ড্রামা সর্কেল, থিয়েটার ৭৭, গণমঞ্চ, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা।
এছাড়াও দেশের অন্য জেলাতেও যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
সারাবাংলা/এমও