চট্টগ্রামে প্রচারণায় আওয়ামী লীগ-স্বতন্ত্র ‘সমানে সমান’
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:২৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে প্রতীক বরাদ্দের পর মাজার জিয়ারত, কর্মিসভা, অফিস উদ্বোধন, উঠোন বৈঠক ও ঢিমেতালে গণসংযোগের মধ্য দিয়ে প্রচারের প্রথম দিন পার করেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পাশাপাশি প্রচারে কিছুটা গতি আনছেন স্বতন্ত্ররা, যারা মূলত আওয়ামী লীগে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে ভোটের মাঠে এসেছেন।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দিনভর দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, দুপুর ২টা থেকে শুরু হয় প্রার্থীদের প্রচার।
মহিউদ্দিন বাচ্চুর পাশে নগর আওয়ামী লীগ
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর ও পাহাড়তলী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর অফিস উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচার শুরু হয়েছে। নগরীর দামপাড়ায় অফিস উদ্বোধনের সময় সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ নগর আওয়ামী লীগের নেতারা ছিলেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নৌকা বারবার উজান ঠেলে সাগরের মিলন মোহনায় পৌঁছেছে এবং জাতিকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে। আজ থেকে নির্বাচন পর্যন্ত চট্টগ্রামসহ সারাদেশ নৌকাময় হয়ে থাকবে।’
আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে ঠুনকো অজুহাতে বিএনপি নেই। তবে তারা মাঠে আছে অবরোধের নামে গুপ্ত হামলা চালিয়ে নাশকতা করতে। এই অপশক্তির পক্ষে তাদের বিদেশি মুরব্বিরা অনেক লাফ-ঝাঁপ দিলেও এখন চুপসে গেছে। তাই তারা এখন মিত্রহীন ও জনবিচ্ছিন্ন একটি অপাংঙ্ক্তেয় ডাস্টবিন। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে, নির্বাচনকে যেকোনো মূল্যে অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। এ জন্য দলের প্রত্যেক স্তরের নেতাকর্মীকে ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকার জন্য বলতে হবে।’
নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘নেত্রী আমার ওপর আস্থা ও ভরসা রেখে আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আমি নির্বাচিত হলে চেষ্টা করব এ আস্থা ও ভরসার প্রতিদান দিতে।’
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান বদিউল আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান ছিদ্দিকী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর এবং নগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন।
উঠোন বৈঠকে শুরু মনজুর আলমের প্রচার
চট্টগ্রাম -১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম নগরীর সরাইপাড়ায় তার প্রধান নির্বাচনি কার্যালয় উদ্বোধন করেন। এরপর পদ্মপুকুর জামে মসজিদ, ওয়্যারলেস জামে মসজিদ, মুরাদপুর জামে মসজিদ, খান সাহেব আবদুল হাকিম মিয়া জামে মসজিদ, শহীদ নগর স্কপ জামে মসজিদের মুসল্লিদের সঙ্গে ও মনছুরাবাদ সমাজ কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত উঠান বৈঠকে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু করেন নির্বাচনি প্রচার।
ফুলকপি প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেন, ‘ফুলকপি বাঙালির গ্রাম-বাংলার প্রতিচ্ছবি। ফুলকপি প্রতীককে আমি এলাকাবাসীর দিন বদলের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমার সঙ্গে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর বৈরিতা বা প্রতিহিংসা নেই। নির্বাচনকে অর্থবহ করাই আমার অঙ্গীকার। সরল মনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমি প্রার্থী হয়েছি। ভোটারদের নিরাপত্তা বিধান, স্বাধীনভাবে ভোট প্রয়োগের পরিবেশ আমি চাই।’
মনজুর পাশে পেয়েছেন নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কমিটির প্রতিনিধিদের। তাদের নিয়েই প্রচার চালান তিনি। এর আগে সোমবার সকালে মনজুর আলম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের সঙ্গে তার বাসায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি নির্বাচনি লড়াইয়ে রানা দাশগুপ্তের সহযোগিতা চান।
‘প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য নিন, ভালো মানুষকে সমর্থন দিন’
প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ নগরীর গরীব উল্লাহ শাহ মাজারে জোহরের নামাজ আদায় করেন। এরপর তিনি তার মায়ের কবর জেয়ারত করে লালখান বাজার ওয়ার্ডের গরীব উল্লাহ শাহ হাউজিং সোসাইটি, কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় গণসংযোগ করেন।
এ সময় কেটলি প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, ‘প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য নিন, ভালো মানুষকে সমর্থন দিন। যারা ক্লিন ইমেজের অধিকারী, নম্র, ভদ্র, বিনয়ী, সাধারণ মানুষের সেবক হয়ে কাজ করবে, তাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করুন।’
ঢোলবাদ্যে প্রচারণা জিয়াউল হক সুমনের
ঢোলবাদ্য বাজিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের
। নগরীর আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা থেকে জনসংযোগ শুরু করেন তিনি।
এ সময় কেটলি প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন বলেন, ‘আমার একটাই কথা, প্রধানমন্ত্রীকে আমরা আবারও ক্ষমতায় দেখতে চাই। আমি তৃণমূলের কর্মী। নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে সবসময় ছিলাম, সবসময় আছি। ইনশল্লাহ আমি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাব।’
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গত তিনবারের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। নির্বাচনি প্রচার শুরুর প্রথম দিনে তার অনুসারীরা নগরীর মাদারবাড়িতে গণসংযোগ করেন।
পটিয়ায় সামশুলের কর্মিসভা জনসভায় পরিণত
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী নির্বাচনি এলাকার আমজুরহাটে অফিস উদ্বোধন ও কর্মিসভার মাধ্যমে প্রচার শুরু করেন। বিপুল নেতাকর্মীর অংশগ্রহণের কারণে কর্মিসভা জনসভায় পরিণত হয়।
এ সময় সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করেন। কিন্তু ভেতরে-বাইরে নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি এবার আমাকে মনোনয়ন দিতে পারেননি। আমি পটিয়ায় আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেছি। কোনো চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীকে আমি প্রশ্রয় দিইনি। আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে অভিনন্দন জানাই। কিন্তু তিনি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বর্ধিত সভার নামে প্রতিদিন আমার সমালোচনা করেছেন। আমি আমার সমালোচকদের জন্য দোয়া করছি। আমার শক্তি পটিয়াবাসী। জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের সমালোচনায় আমার জনগণ বিভ্রান্ত হবে না। জনগণ আমাকে আবারও ভোট দিয়ে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেবে।’
অন্যদিকে পটিয়া উপজেলা সদরে গণসংযোগের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় পটিয়াসহ দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। গণসংযোগে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নৌকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতীক, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক। নৌকাকে জয়ী করে শেখ হাসিনাকে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।’
লাঙ্গলকে বিতাড়িত করার আহ্বান তৃণমূল বিএনপির
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরীর একাংশ) আসনে নিবন্ধনহীন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের সভাপতি ও সাবেক চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন তৃণমূল বিএনপির সোনালি আঁশ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তিনি হাটহাজারীর সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের এম এ ওহাব ও বিএনপির সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কবর জিয়ারত করে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেন।
এরপর গণসংযোগে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘হাটহাজারীর মানুষ পরিবর্তন চায়। জোট-মহাজোট করে আর রেহাই পাওয়া যাবে না। গত ১৫ বছর হাটহাজারীর মানুষের কী দোষ? কী উন্নয়ন হাটহাজারীতে হয়েছে? হাটহাজারীর মানুষ লাঙ্গল দিয়ে আর চাষ করতে চায় না। কারণ লাঙ্গলের মানুষ যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তার বিন্দুমাত্র পূরণ করতে পারেনি। এজন্য মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তনের সুর। স্বৈরাচার এরশাদের প্রার্থীকে পরাজিত করতে হাটহাজারীর মানুষ ঐক্যবদ্ধ। ইনশাল্লাহ বিজয় সোনালি আঁশের হবে। নির্ভয়ে ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে এসে লাঙ্গলকে বিতাড়িত করুন।’
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
জাতীয়-নির্বাচন নির্বাচনি প্রচার মনজুর আলম মহিউদ্দিন বাচ্চু সংসদ নির্বাচন