চীনে শক্তিশালী ভূমিকম্প, নিহত ১১৮
১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:০৮
চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গানসু প্রদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১১৮ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা ওই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, চীনের দারিদ্রপীড়িত অঞ্চল গানসুর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভূমিকম্পের তীব্রতা ও প্রভাব বেশি অনূভূত হয়েছে। মাঝরাতে এমন একটি সময়ে ভূমিকম্প হয়, যখন তীব্র তুষারপাতের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ নিজের ঘরে ঘুমন্ত ছিল। এ কারণে হতাহতের সংখ্যা অনেক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, গানসু ও কিংহাই প্রদেশের সীমান্ত অঞ্চলে সোমবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্যমতে, ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গানসু ও কিংহাই প্রদেশের সীমান্ত অঞ্চলে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫.৯। দ্য ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি ছিল ৬ দশমিক ১ মাত্রার। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, এ মাত্রা ছিল ৬.২।
ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল গানসু প্রদেশের রাজধানী লানঝোর থেকে ১০২ কিলোমিটার পশ্চিম–দক্ষিণপশ্চিমে এবং ভূপৃষ্ঠের ৩৫ কিলোমিটার গভীরে বলেও জানিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। তবে ইউএসজিএসের তথ্য অনুসারে, ভূমিকম্পটি আঞ্চলিক শহর চেংগুয়ানজেনের প্রায় ২৩ মাইল পশ্চিম উত্তর-পশ্চিমে মাটির ৬ মাইলের কিছুটা গভীরে আঘাত হানে। প্রাদেশিক রাজধানী লানঝো ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৬০ মাইল দূরে।
ভূমিকম্পের পর কয়েকবার আফটারশক অনুভূত হয়েছে। হতাহতের পাশাপাশি সেখানের ভবনগুলো ভেঙে পড়েছে। প্রদেশের জিশিশান কাউন্টির চেংগুয়ানজেন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া পাশের প্রতিবেশী কিংহাই প্রদেশ থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্প আঘাত হানার পর পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এমনিতেও চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গত কদিন ধরেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও তুষাড়ঝড় চলছে। তীব্র ঠান্ডায় খালি হাতে শত শত উদ্ধারকর্মী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ফুটেজে ঘরের মেঝেসহ বিভিন্ন ভবনের ছাদ আংশিকভাবে ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। দেখা গেছে, উদ্ধারকারীরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভেতরে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গানসুতে পূর্ণ উদ্ধারকাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় কর্মীদের সহায়তা করার জন্য চীনা সরকার হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকর্মীদের দল পাঠিয়েছে। এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সময়মতো আহতদের চিকিৎসা এবং হতাহতের সংখ্যা কমানোর জন্য সকল প্রচেষ্টা করছে চীনা সরকার।
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এমনিতেই ভূমিকম্পপ্রবণ। প্রায়ই এ অঞ্চলে ছোট-বড়মাত্রার বিভিন্ন ভূমিকম্প আঘাত হানছে। গত সেপ্টেম্বরে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশে ৬.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। এছাড়া আজ সকালেও প্রতিবেশী জিনজিয়াংয়ে অপর একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ওই ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। তবে ওই ভূমিকম্প থেকে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে, গানসুতে ১৯২০ সালের ভূমিকম্পে দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যা বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর ভূমিকম্পগুলোর একটি বলে ধরা হয়।
সারাবাংলা/এসবিডিই/ইআ