ঢাকা: রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনের কাছাকাছি মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আগুনের ঘটনার কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি), কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি) ও এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) সদস্যরা ট্রেনে নাশকতার ঘটনা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে। এর বাইরে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ঘটনার ক্লু উদ্ধারে ব্যস্ত।
তবে গোয়েন্দারা একটি বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে ট্রেনে সরাসরি কেউ আগুন দেয়নি। পেট্টোল ঢেলেও কেউ আগুন দেয়নি। সুপরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে। যা কেউ টেরই পায়নি। একমাত্র গান পাউডার দিয়েই তা সম্ভব। কারণ গান পাউডার খোলা জায়গায় রাখার কিছুক্ষণ পর আগুন জ্বলে ওঠে। আর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে সেটাই ঘটেছে।
কমলাপুরে পুড়ে যাওয়া ট্রেনটির আলামত সংগ্রহ ও ঘুরে দেখার পর গোয়েন্দারা বলছেন, আগুনে ট্রেনের সবকিছু পুড়ে গেছে। এমনকি স্টীল গলে গেছে। লোহার আসবাবপত্র গলে গেছে। সাধারণ আগুন হলে স্টীল ও লোহা গলে যেত না। একমাত্র বিস্ফোরক দ্রব্য গান পাউডারের আগুনেই ভারি ধাতু গলে যায়।
গোয়েন্দাদের দাবি, গান পাউডার দিয়েই যে নাশকতা করা হয়েছে তা অনেকটা নিশ্চিত। এরপরও পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলামত ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন নিয়ে সিটিটিসি কাজ করছে। গান পাউডার কি না তা ফরেনসিক পরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব হচ্ছে না।’
তবে সিটিটিসির এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে তা অনেকটা নিশ্চিত। কারণ, গান পাউডারের আগুনে পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের যে অবস্থা হয় তার সবকিছুই আলামতে পাওয়া গেছে।’
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই ট্রেনের যাত্রীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিমানবন্দর স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফোন কোম্পানিগুলোর ডাটা নেওয়া হয়েছে। সবকিছু চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। জড়িতরা শিগগিরই শনাক্ত হবে।’
ফরেনসিক আলামত সংগ্রহকারী দল সিআইডির এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া ট্রেন থেকে যেসব আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সেটি গান পাউডার নাকি অন্য কোনো শক্তিশালী বিস্ফোরক দ্রব্য, তা নিশ্চিত হতে ফরেনসিক ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘কমলাপুর রেলওয়ে থানায় যে হত্যা মামলা হয়েছে সেই মামলায় ছায়াতদন্ত করছে র্যাব। র্যাবের সক্ষমতা অনুযায়ী সবটুকু দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি জড়িতরা গ্রেফতার হবে।’
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানবন্দর থেকে ট্রেনটি ছাড়ার পর মূলত ট্রেনে আগুন দেখতে পায় রেলে থাকা কর্মচারীরা। ফায়ার স্টিংগুইসার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে তা অন্য বগিতেও ছড়িয়ে পড়ে। এখন দেখার বিষয় হলো- তিনটি বগিতেই গান পাউডার ছিটানো হয়েছে, নাকি এক বগির আগুন আরেক বগিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
রেলে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দর স্টেশন ছাড়ার পর ট্রেনে আগুন দেখতে পাওয়া যায়। ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছতেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ট্রেনটি অনেক দ্রুত গতিতে ছিল, থামাতে থামাতে অনেক দূর চলে যায়। না হলে ফায়ার সার্ভিস আরও আগে কাজ শুরু করতে পারত।’
এর আগে, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন আগুনে পুড়ে যায়। তিনটি বগি সম্পুর্ণরূপে পুড়ে গেলেও আরও চারটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রেনে নাশকতা ও যাত্রী হত্যার ঘটনায় ওই ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) খালেদ মোশারফ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ঢাকা রেলওয়ে থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা করেন।