যুদ্ধ-বিধ্বস্ত পৃথিবীতে বড়দিন আজ, শান্তির প্রার্থনা
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:০৭
ঢাকা: আজ বড়দিন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ দিন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীরাও এ দিন যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচার, আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ‘শুভ বড়দিন’ উদযাপন করবেন।
আরও পড়ুন- যিশুর জন্মস্থান যেন ধু ধু মরুভূমি
এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাগুলোকে সাজানো হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। এ ছাড়াও রোববার সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন গির্জা ও তারকা হেটেলগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীসহ সবার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ধর্মের মূল কথাই হচ্ছে মানুষ হিসেবে মানুষের সেবা করা। সব ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে। তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা মহামতি যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিনকে যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে ‘বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। খ্রিষ্ট ধর্মানুসারে যিশু খ্রিষ্ট ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত ও আলোর দিশারী।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। সব শ্রেণিপেশার জনগণের উন্নয়নই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা সব সম্প্রদায়ের মানুষের মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’
এর আগে শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে আর্চবিশপ হাউজে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বড়দিনের বাণী রাখতে গিয়ে আর্চবিশপ বলেন, ‘আমরা এ বছর এমন এক সময়ে যিশুর জন্মতিথি বা বড়দিন পালন করতে যাচ্ছি, যখন যিশুর জন্মস্থান পুণ্যভূমিতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে, অনেক নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছেন। একইভাবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধেও শত-সহস্র মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন। এগুলোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর ও ধর্মের লোকদের মধ্যে যুদ্ধভাব, সহিংসতা, মারামারি ও হানাহানি চলছে। এমন অবস্থায় যিশুর জন্মতিথি উদযাপন আমাদেরকে শান্তি আনয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করছে।’
বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। অন্যদিকে দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরির পাশাপশি আছে বিশেষ খাবারের আয়োজন। এ ছাড়াও দেশের অনেক অঞ্চলে আয়োজন করা হয়েছে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের অনুষ্ঠান।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বড়দিনকে বেছে নেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি গেছেন।
রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে আলোকসজ্জার পাশাপাশি হোটেলে কৃত্রিমভাবে স্থাপন করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও সান্তাক্লজের প্রতিকৃতি। বড়দিনের প্রাক্কালে রোববার রাতে বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে শুরু হবে বড়দিনের প্রার্থনা।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর