আ.লীগের ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ, কর্মসংস্থান বাড়ানোর অঙ্গীকার
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৩৭
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১১ দিন। এ অবস্থায় টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন লক্ষ্যে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছিল দলটি। এবার দেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে তারা ইশতেহারে আনছে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্প। সেই সঙ্গে অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি থাকছে কর্মসংস্থান।
আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো বলছে, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে মূল স্তম্ভ থাকছে চারটি— স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ গঠন। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণে থাকছে সাশ্রয়ী, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্ঞানভিত্তিক বুদ্ধিগত ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি। ইশতেহারের স্লোগান রাখা হয়েছে— ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’।
আগামীকাল বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনি ইশতেহার-২০২৪ ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই ইশতেহার উপস্থাপন করবেন।
আরও পড়ুন- আ.লীগের ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ, জোর কৃষি-সেবা-শিল্পোৎপাদনে
ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠান সূচি অনুযায়ী সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের স্বাগত বক্তব্যের পর বক্তব্য দেবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হবে। সবশেষে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখবেন এবং ইশতেহার উপস্থাপন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে মতামত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্র বলছে, সেসব মতামতকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে ইশতেহার প্রণয়নের সময়। সব মিলিয়ে নতুন ইশতেহারে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অভিযাত্রায় উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে কৃষি, সেবা ও শিল্পোৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার থাকছে। থাকছে ২০৩১ সালের মধ্যে দেশে হতদরিদ্রের অবসানের অঙ্গীকার। ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্য ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও থাকবে। অঙ্গীকার থাকবে শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতিতে আগ্রহী করে তোলারও।
এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগানে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই ইশতেহারে ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে নিরাপদ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘দিন বদলের সনদ’ নিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। সেই ইশতেহারে অঙ্গীকার ছিল, ২০২১ সালের মধ্যেই ডিজিটাল হবে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন- আ.লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা ২৭ ডিসেম্বর
আওয়ামী লীগ বলছে, ২০০৮ সালের ইশতেহারের সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ এরই মধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে সরকার। তারই পথপরিক্রমায় আজ সারাদেশে ইন্টারনেট সুবিধা ছড়িয়ে গেছে। এখান থেকেই আগামীতে দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার অঙ্গীকারসহ বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার অঙ্গীকার থাকছে নতুন ইশতেহারে। সব মিলিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত করার অঙ্গীকার নিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ।
দলের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে কৃষি খাত, সেবা খাত ও শিল্পোৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাতেও। তবে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়েছে শিল্প খাত তথা উৎপাদন খাত সম্প্রসারণের দিকে। এ ক্ষেত্রে ছোট ছোট শিল্প কল-কারখানার পাশাপাশি এবার গুরুত্ব দেওয়া হবে ভারী শিল্পের দিকেও। দলের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের যে ঘোষণা শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন, সেটিও এই শিল্প ও উৎপাদন খাত সম্প্রসারণের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থেকেই।
এদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণমাধ্যম, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ বড় ভূমিকা পালন করে। এই তিনটি বিভাগ মিলিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারও বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে নির্বাচনি ইশতেহারে। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে দেশ পরিচালনার অঙ্গীকারও থাকছে এতে।
আরও পড়ুন- জাতীয় পার্টির ইশতেহার ঘোষণা
জানতে চাইলে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার থাকবে। দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কর্মসংস্থান, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শিল্পায়ন ও সুশাসনের ওপর জোরালো প্রতিশ্রুতি থাকবে।’
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব এবং দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চার স্তম্ভ নির্ধারণ করে অর্থনীতি, আর্থিক খাত, কৃষি খাত ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারসহ বহুমাত্রিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকবে। সার্বিকভাবে অর্থনীতির গতিশীলতা রক্ষা ও শৃঙ্খলায় গুরুত্ব থাকবে আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে।’
আরও পড়ুন-
যা আছে জাতীয় পার্টির ২৪ দফা ইশতেহারে
ইশতেহারে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্তির দাবি
নির্বাচনি ইশতেহারে নারী অধিকার স্পষ্ট করার আহ্বান
নগর দরিদ্রবান্ধব নির্বাচনি ইশতেহার চেয়েছে বারসিক
জাপার ইশতেহারে দ্বিস্তরবিশিষ্ট সরকার, ৮ প্রদেশের প্রতিশ্রুতি
নির্বাচনি ইশতেহারে উপকূল অঞ্চলের উন্নয়নে অঙ্গীকারের দাবি
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের ইশতেহার কর্মসংস্থানের অঙ্গীকার জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নির্বাচনি ইশতেহার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি সংসদ নির্বাচন স্মার্ট বাংলাদেশ