রাজশাহীতে বাড়ছে নির্বাচনি সহিংসতা, ঝড়ছে রক্ত
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৭
রাজশাহী: রাজশাহীর ৬টি আসনে চলছে জোর প্রচার-প্রচারণা। পিছিয়ে নেই কোনো প্রার্থী। প্রতিটি আসনেই রয়েছে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি। একটি মাত্র আসনে না থাকলেও বাকি পাঁচটি আসনে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থীও। তারাও মাঠে ছাড় দিতে নারাজ। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে রাজশাহীতে বাড়ছে সহিংসতা। প্রার্থীর সমর্থকরা জড়িয়ে যাচ্ছে দ্বন্দ্বে, সংঘর্ষে ঝড়ছে রক্তও। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ছাড়াও প্রচারণায় হামলার ঘটনাও ঘটছে।
এছাড়াও নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর, পোস্টার ছিড়ে ফেলা, অফিসে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, হাতুড়িপেটা করাও হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষেদাগারও বাড়ছে। যতদিন যাচ্ছে ততই উত্তেজনা বাড়ছে।
গত মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় ১৬টির মতো সহিংসতার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাগমারা, দুর্গাপুর, বাঘা ও চারঘাটে নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নৌকা প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনি প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
আবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা হামলা চালাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত এবার সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী-৪ আসনে। এই আসনে সবশেষ মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বাগমারা উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোস্টার লাগানোর সময় দুই কর্মীর উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মামলাও করা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার (২৪ ডিসেম্বর) স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। বাগমারা উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নে হামলায় এনামুলের হকের ২ কর্মী আহত হন। থানায় মামলা হলে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে।
এছাড়াও বাগমারা নরদাশ বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের কাঁচি প্রর্তীকের নির্বাচনী অফিসে হামলা করে নৌকার সমর্থকরা। ওইদিন রাতে উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ বাজারের গোডাউন মোড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি এনামুলের কাঁচি প্রতীকের নির্বাচনি অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে।
এর আগে বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়নের যাত্রাগাছি গোবিন্দপুর ইউনিয়নের হাটদামনাশ বাজার, তাহেরপুর পৌরসভার অর্জুনপাড়া ও গণিপুর ইউনিয়নের অচিনঘাট এলাকায় কাঁচি প্রতীকের গাড়ি ও প্রচার মাইক ভাঙচুর, পোস্টার কেড়ে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন এনামুল হক।
নৌকা প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নৌকা হারানোর পর থেকে এনামুল হক মিথ্যা কথা বলছেন। কোথাও তার সমর্থকদের ওপর হামলা করা হয়নি। বরং নৌকা প্রতীকে তিনবার এমপি হয়ে এখন তিনি নৌকার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন তারপক্ষে থাকতে।’
রোববারের ঘটনার পর সোমবার ২ প্রার্থীকে ডেকেছিলেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ। আর কোনো সহিংসতা ঘটবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি এনামুল হক। হাতে হাত রেখে দু’জন সুষ্ঠ ভোটের প্রতিশ্রুতিও দেন।
সোমবার রাতে বাঘার গড়গড়ি ইউনিয়নের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) আবদুস সামাদের (নোঙ্গর) নির্বাচনি অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী-৫ আসনের দুর্গাপুর উপজেলায় নৌকার ৩ কর্মীকে হাতুড়িপেটা করায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্বস্তন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের পোস্টার কেড়ে নিয়ে তিন কর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রাতেই দুর্গাপুর থানায় মামলা হলে নৌকা প্রতীকের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রাজশাহী-৬ আসনে আসনের শলুয়া ইউনিয়নের বামনদীঘি বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের কাঁচি প্রতীকের নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর ও একইসময়ে মালেকের মোড় এলাকায় কাঁচি প্রতীকের প্রচার গাড়ি ও মাইক ভাঙচুর করেছে নৌকার কর্মীরা বলে অভিযোগ করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপাকে (মাহিয়া মাহি) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন মাহাবুর রহমান মাহাম নামের এক যুবক। তিনি নিজেকে জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন। তানোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়নার অনুসারী বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেন চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা।
তবে রাজশাহী সদর আসন ও রাজশাহী-৩ আসনে কোনো অপ্রীতিকর সংবাদ পাওয়া যায়নি। এই আসন দু’টিতে প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহী-৩ আসনের বিএনএম প্রার্থী মতিউর রহমান মন্টু বলেন, ‘রাজশাহী-৩ আসনে নির্বাচনি পরিবেশ খুব সুন্দর আছে। এখানে প্রচারণা চালাতেও কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আমার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গে আমার ভোটযুদ্ধ হবে।’
রাজশাহী-২ আসনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী বলেন, ‘রাজশাহীর সব এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছি। তবে কোনো বাধা আসেনি। নির্বাচন পরিবেশ খুব সুন্দর আছে।’
তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘রাজশাহী-২ আসনে সর্বপ্রথম প্রচারণা শুরু করি। প্রথমদিনেই আমার কর্মী-সমর্থকরা পোস্টার মেরেছেন বিভিন্ন এলাকায়। কোর্ট স্টেশন ও হড়গ্রাম এলাকার পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়েছে। ওই এলাকায় ১৪ দলের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা থাকেন। এছাড়াও ভদ্রাতে আমার ফেস্টুনের উপরে অন্য প্রার্থী ফেস্টুন মেরেছে।’
রাজশাহী রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘কিছু কিছু ঘটনায় ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিও দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত উৎসবমুখর।’
সারাবাংলা/এমও