ঢাকা-৮: নৌকার পালে হাওয়া, মাঠে নেই অন্যরা
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:০১
ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। এই আসনে নির্বাচনি প্রতীক পেয়েছেন আরও ৯ জন। তবে তাদের কাউকেই ‘শক্ত’ প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন না নাছিমের কর্মী-সমর্থকরা। শুধু তাই নয়, ভোটের মাঠে এসব প্রার্থীর উপস্থিতিও নেই সেই অর্থে। সব মিলিয়ে আসনটিতে নাছিমের জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই ‘চিন্তামুক্ত’ তার অনুসারীরা।
কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, রমনা, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসন। এই আসনের আওতাভুক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলো হলো— ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড। প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর থেকেই এসব এলাকায় জোর গণসংযোগ চালাচ্ছেন নাছিম। বাকি ৯ প্রার্থীর কারওই যেন খোঁজ নেই।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ও বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) এই আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এলাকাগুলোতে কেবল বাহাউদ্দিন নাছিমের পোস্টারই দৃশ্যমান। বাকি প্রার্থীদের পোস্টার চোখে পড়ে না বললেই চলে। এদিকে ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির নোটিশ পেয়েছিলেন নাছিম। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন থেমে নেই।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের ১৮১ নম্বর এই আসনের ভোটার দুই লাখ ৭০ হাজার ৬৫০ জন। এর মধ্যে এক লাখ ৫১ হাজার ৯৩৮ জন পুরুষ, এক লাখ ১৮ হাজার ৭১১ জন হাজার নারী। হিজড়া ভোটার রয়েছেন একজন।
এই আসনে বাহাউদ্দিন নাছিম ছাড়া আর যে ৯ জন প্রার্থী হয়েছেন তারা হলেন—ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. আবুল কালাম জুয়েল (আম), বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের এস এম সরওয়ার (মোমবাতি), সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. রাসেল কবির (ছড়ি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির খন্দকার এনামুল নাছির (একতারা), জাতীয় পার্টির মো. জুবের আলম খান (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির এম এম ইউসুফ (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (ফুলের মালা) এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. সাইফুল ইসলাম (টেলিভিশন)।
প্রার্থী ১০ জন হলেও মাঠের পরিস্থিতি বলছে, প্রার্থী যেন একজনই! এই আসনের অধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, পরীবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর পোস্টার কিংবা ব্যানার চোখে পড়েনি।
কয়েকটি এলাকার জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়— নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীকে গণসংযোগ বা নির্বাচনি প্রচারও চালাতে দেখেননি তারা।
বাহাউদ্দীন নাছিমের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের এক অনুষ্ঠান থেকে ভোটের প্রচার শুরু করেন আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম। পরে শান্তিনগর, মগবাজার, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা-৮ আসনভুক্ত এলাকায় নিয়ম করে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।
বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে স্বাচিপ ও সকল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন বাহাউদ্দিন নাছিম। এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ইশতেহারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আর্থিকখাতে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাসহ মোট ১১টি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার লক্ষ্যে আমাদের এ ইশতেহার।
এদিন বিকেলে পিডব্লিউডি স্টাফ কোয়ার্টার, নয়া পল্টন, পূর্ব মানিক নগর, ফকিরাপুল পানির পাম্প, কালভার্ট রোডসহ সংলগ্ন এলাকাগুলোতে গণসংযোগ করেন নাছিম। সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উদ্যোগে মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি মাঠে নির্বাচনি সভা করেন। এরপর অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সি বাংলাদেশের উদ্যোগে কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে পিঠা উৎসবে অংশ নেন।
এদিকে ভোটের প্রচার শুরুর অন্তত ৯ দিন আগেই আগাম মহড়া, পোস্টার সাঁটানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির পক্ষ থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল বাহাউদ্দীন নাছিমের কাছে। প্রচার শুরুর পর ‘চিন্তামুক্ত’ পরিস্থিতিতেও বিধির বাইরে গিয়ে হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, ফ্লাইওভারের পিলারের মতো স্থানে লাগানো হয়েছে নৌকার পোস্টার। আদর্শ মানের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বড় ব্যানার লাগানো এবং ব্যানারে ব্যক্তির ছবির আধিক্যের মতো নিয়মেরও ব্যত্যয়ও ঘটেছে।
পরিবাগে অবস্থিত টেলিযোগাযোগ ভবনের পাশে বাহাউদ্দীন নাছিমের সমর্থনে অন্তত ১৫-১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ব্যানার দেখা গেছে। ব্যানারে বাহাউদ্দীন নাছিমসহ মোট ৯ জনের ছবি শোভা পাচ্ছে। অথচ আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থী ও দলীয় প্রধান ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যানারে থাকার সুযোগ নেই। ব্যানারের আকারও দৈর্ঘ্যে ৩ মিটার ও প্রস্থে ১ মিটারের মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত কোনো ভবন বা দেয়ালে পোস্টার-ব্যানার সাঁটানোর বিধি না থাকলেও হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের মূল ভবনজুড়ে বাহাউদ্দীন নাছিমের পক্ষে একটি ব্যানার ঝুলতে দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিমের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা-৮ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর
গণসংযোগ জাতীয়-নির্বাচন ঢাকা-৮ ঢাকা-৮ আসন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নির্বাচনি প্রচার বাহাউদ্দিন নাছিম সংসদ নির্বাচন