Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছালাম, বিজয়, শেঠ— কাকে ভোট দিলে হবে কালুরঘাট সেতু?

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:২৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জামালের বয়স ৩৫ হতে পারে, কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি। বাড়ি বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৫ বছর ধরে বোয়ালখালীতেই অটোরিকশা চালান। কর্ণফুলীর শাহ আমানত সেতু পার হয়ে পূর্ব দিকে পটিয়ার কালারপোল সেতু অতিক্রম করে বোয়ালখালীর দিকে অটোরিকশায় যেতে যেতে কথা হয় জামালের সঙ্গে।

পাচুরিয়া দিয়ে বোয়ালখালীতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়তে লাগল পোস্টার, বেশিরভাগই জনবহুল এলাকায়। সবচেয়ে বেশি দেখা গেল কেটলি মার্কার পোস্টার, প্রার্থী আবদুচ ছালাম। উপজেলা সদরের দিকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের কিছু পোস্টার দেখা গেল। সারোয়াতলী ও শাকপুরা ইউনিয়নে বেশি চোখে পড়ল ফুলকপি প্রতীকের প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরীকে। দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামে তার বাড়ির সামনে একটি নির্বাচনি ক্যাম্পও দেখা গেল।

বিজ্ঞাপন

ফেরা যাক জামালের সঙ্গে কথোপকথনে। নিজ থেকেই ভোটের কথা তুললেন। জানালেন, অবশ্যই ভোট দিতে যাবেন। নির্বাচন যেমনই হোক, জামাল প্রত্যেকবারই ভোট দিতে যান। তাকে বাধা দেওয়ার দুঃসাহস এলাকার কোনো ‘গুণ্ডাপাণ্ডা’র হয়নি।

আরও পড়ুন- বাচ্চুর সঙ্গে জোর লড়াইয়ে নওফেল-পত্নীর ‘উকিল বাপ’, আছেন ফরিদও

কাকে ভোট দেবেন— এমন প্রশ্নে মাথা চুলকালেন, ‘বদ্দা, সত্যি কথা বললে বিজয় দাদার বাড়ির পেছনে আমার বাড়ি। উনাকে দেবো কি না, চিন্তা করছি। কিন্তু ছালাম সাহেবের কথা সবাই বলছেন। উনাকে ভোট দিলে আমাদের কালুরঘাট ব্রিজটা অন্তত পাব, এলাকার উন্নয়ন হবে। এই যে আপনাকে শাহ আমানত ব্রিজ দিয়ে আসতে হলো, কালুরঘাট ব্রিজ হলে তো আপনি কুড়ি মিনিটে পৌঁছে যেতে পারতেন…।’

বিজ্ঞাপন

জামালের মতো একজন সাধারণ ভোটারের কথায় বোঝা গেল, প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের বিবেচনায় ছালামের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে যোগ্যতা, আর বোয়ালখালীতে ‘এলাকার ছেলে’ হিসেবে সহানুভূতি পাচ্ছেন বিজয়। সোলায়মান আলম শেঠের নামও কোনোদিন শোনেননি বলে জানালেন জামাল।

শিল্পপতি ছালাম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। ছালামের আমলে সিডিএর মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীতে একাধিক উড়াল সড়ক নির্মাণ, সড়ক সম্প্রসারণ ও নতুন সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ হয়েছে। ভোটের মাঠে এসে ছালাম মোটামুটি এ ধারণা সবার মধ্যে তৈরি করতে পেরেছেন, তিনি সংসদ সদস্য হলে কর্ণফুলী নদীর ওপর বহুল আলোচিত কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন হয়ে যাবে, যে সেতুটি গত ৩৪ বছরেও হয়নি, যে সেতুর জন্য লাখো মানুষকে প্রতিনিয়ত সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

আবদুচ ছালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার মতো একজন ক্ষুদ্র কর্মীকে সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আল্লাহর রহমতে আমি চট্টগ্রামে একাধিক ফ্লাইওভার করেছি। আউটার রিং রোড করেছি। আমার নেওয়া প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। পতেঙ্গা সৈকতকে আমি নতুনভাবে সাজিয়েছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে যে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে, সেটা আমার আমলে সিডিএর নেওয়া। আরও অনেক কাজ আমার হাত দিয়ে হয়েছে, সেটা আল্লাহ চেয়েছেন বলে। এখন আল্লাহ যদি চান, কালুরঘাট সেতুর কাজটাও হয়তো প্রধানমন্ত্রী আমার হাত দিয়ে করবেন।’

কর্ণফুলী নদীর উত্তরে মহানগরীর চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ থানা, দক্ষিণে বোয়ালখালী উপজেলা। একটি সেতুর অভাবে নদীর দক্ষিণ পার এখনো দুর্গম, লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। বহু বছরের পুরনো রেলসেতু থাকলেও তাই কর্ণফুলী নদীতে কালুরঘাট সেতু এখন এলাকাবাসীর প্রধান দাবি। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

কর্ণফুলী নদীর উত্তরে মহানগরীর চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ থানা এবং দক্ষিণে বোয়ালখালী উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসন। এ আসনে মোট প্রার্থী ১০ জন। তবে জোর প্রচারে আছেন ছালাম, বিজয় ও শেঠ।

গত তিনটি নির্বাচনে এবং সর্বশেষ দুদফা উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হলেও আওয়ামী লীগ এবার জাতীয় পার্টিকে আসনটি ‘উপহার’ দিয়েছে। লাঙ্গল প্রতীকে সোলায়মান আলম শেঠ প্রার্থী হলেও স্বতন্ত্র হিসেবে রয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত দুই নেতা আবদুচ ছালাম ও বিজয় কুমার চৌধুরী।

বিজয় কুমার চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি ২০১০ সালে নগরীর জামালখান ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। পেশায় প্রকৌশলী ও আবাসন ব্যবসায়ী বিজয় ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকে বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

কালুরঘাট সেতুর দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকলেও সেটিকে অবশ্য এক নম্বর প্রতিশ্রুতি করতে চান না বিজয়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি যদি বলি কালুরঘাট সেতু আমার প্রধান প্রতিশ্রুতি এবং পাঁচ বছরের মধ্যে সেটি বাস্তবায়ন করে ফেলব, তাহলে সেটা সম্ভব না-ও হতে পারে। এজন্য আমি বলছি, বোয়ালখালীর মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে আমি অবশ্যই কমিউটার ট্রেন চালুর ব্যবস্থা করব। আর সেতুর বিষয়টি সংসদে জোরালোভাবে তুলে ধরব।’

গ্রাম ও শহর দুভাগে বিভক্ত এ আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার ১৪৭ জন। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ ভোটার গ্রামের, অর্থাৎ বোয়ালখালীর, বাকিরা শহরের বাসিন্দা। আবদুচ ছালাম শহর অর্থাৎ চান্দগাঁওয়ের মোহরার বাসিন্দা। এ এলাকাতেই তার বিভিন্ন কলকারখানায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। স্বাভাবিকভাবেই মোহরা, কালুরঘাট, সিঅ্যান্ডবি মোড়, বাহির সিগন্যাল, কাপ্তাই রাস্তার মাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার-ব্যানারে ছালামের আধিপত্য আছে।

দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম এবং বিজয় কুমার চৌধুরী চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনি প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন বাকি প্রার্থীদের তুলনায়। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

তবে বিজয়ও ছেড়ে দেবার পাত্র নন। নিজ এলাকা বোয়ালখালীর পাশাপাশি নগরীও তিনি চষে বেড়াচ্ছেন। বিজয় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নাছির তাকে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছেন। নাছিরের অনুসারী নেতাকর্মীরা নেমেছেন বিজয়ের জন্য। প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে সহধর্মিণী হাসিনা মহিউদ্দিনের দোয়াও নিয়ে এসেছেন। এর ফলে মহিউদ্দিনের অনুসারী কিছু কর্মীকেও পাশে পেয়েছেন। এ আসনে সর্বশেষ উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। নাছিরের অনুসারী নোমানও প্রকাশ্যে বিজয়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ আসনে আমাকে সভাপতি আবার মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় আমাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হয়েছে। এখন নৌকার কোনো প্রার্থী নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী উন্মুক্ত করে দিয়েছেন সভানেত্রী। বিজয় আমাদের পরীক্ষিত নেতা, সাবেক কাউন্সিলর। তিনি নির্বাচিত হলে এলাকার জন্য ভালো হবে বলে আমি মনে করি।’

নগর আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ আসনে বিপুলসংখ্যক সংখ্যালঘু ভোটার আছে। বিজয়ের ভাবমূর্তি ভালো। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই তাকে পছন্দ করে। এ জন্য আমরা তাকে সমর্থন দিয়েছি।’

তবে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আবদুচ ছালামের পক্ষেও দাঁড়িয়েছেন। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ছালামের পক্ষে মতবিনিময় সভা করেছে নগর আওয়ামী লীগের একাংশ, যাতে সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও খোরশেদ আলম সুজনের উপস্থিতি ছিল। মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে নগর আওয়ামী লীগে যেসব নেতা আছেন, তাদের অধিকাংশই ছালামের পক্ষে নেমেছেন। আবার এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমেদের অনুসারীদেরও সমর্থন পাচ্ছেন ছালাম।

জানতে চাইলে খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না থাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামের কেটলি মার্কার পক্ষে আমরা অবস্থান নিয়েছি। ছালাম স্বপ্ন দেখতে জানেন এবং বাস্তবায়নও করতে জানেন। সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে তার প্রমাণ উনি দিয়েছেন। উনার কাছে এ আসনের জনগণের প্রত্যাশা আছে। দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের একটি বিষয় এখানে আছে। আশা করছি, ছালাম উনার অভিজ্ঞতা দিয়ে বোয়ালখালী, চান্দগাঁও এলাকাকে বদলে দেবেন।’

এই আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির সোলায়মান শেঠ। তবে প্রচারে তিনি দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকেই। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

এদিকে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর ‘দাপটে’ এখনো মাঠে ‘শেঠগিরি’ দেখাতে পারছেন না জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও নেতাকর্মীদের তেমন কেউ নেই তার পক্ষে। গত সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে শেঠ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজের দলের প্রার্থী প্রত্যাহার করে আমাকে প্রার্থী করেছেন। কিন্তু উনার দলের চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা কেন আমার সঙ্গে আসছেন না, বুঝতে পারছি না। কেউ যে নেই এমন নয়, কিন্তু অনেকে আসছেন না।’

জাপা নেতা সোলায়মান আলম শেঠ গত সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম-৮ আসনে তিনি আগে কখনো নির্বাচন করেননি। নগরীতে তার প্রভাব-পরিচিতি থাকলেও এ আসনের ভোটারদের কাছে পরিচিত হতে তাকে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তবে নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনিও সমান তালে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

শেঠ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ভোটারদের বলছি আমাকে একবার সুযোগ দেওয়ার জন্য। মানুষ তো দারোয়ানও রাখে, আমাকে না হয় দারোয়ান হিসেবে নিয়োগ দিলো। আমি যদি সফল না হই, তাহলে পাঁচ বছর পর ফেলে দেবে। একবার পরীক্ষা করে তো দেখতে পারে।’

তবে তিন প্রার্থীই স্বীকার করেছেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নবঞ্চিত ও সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা হচ্ছে এ আসনের বোয়ালখালী উপজেলা। গত ১৫ বছরে বোয়ালখালীতে উন্নয়ন বলতে তেমন কিছুই হয়নি।

আবদুচ ছালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘একপাশে শহর, আরেকপাশে গ্রাম আর মাঝখানে কর্ণফুলী নদী। সন্ধ্যা নামলেই বোয়ালখালীর মানুষ অন্ধকারে, আর নদীর ও পারে আলোর ঝলকানি। আমি নদীর দুপাড়েই আলো জ্বালাতে চাই। আমি কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে দুপাড়ের মধ্যেকার দূরত্ব কমাতে চাই। আমার স্বপ্ন— এ-পার, ও-পার দুপারেই শহর হবে। এজন্য যা যা করা দরকার, আমি পরিকল্পনা করব এবং বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকব।’

এই আসনে এলাকাবাসী এমন কাউকেই ভোটে বিজয়ী দেখতে চান, যিনি কালুরঘাট সেতু তৈরি করতে পারবেন। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

বিজয় কুমার চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শহর ও গ্রামে যেন উন্নয়নটা সুষম হয়, সবাই যেন সমানভাবে উন্নয়নের সুফলটা ভোগ করে, সেই ব্যবস্থা করা হবে। বোয়ালখালীতে লবণাক্ততার কারণে কৃষিজমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। আমি নির্বাচিত হলে লবণাক্ততা পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে তা নিরসনে কাজ করব, যেন জমি আবার উর্বরতা ফিরে পায়, ফসলটা ঠিকমতো হয়। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এসব নিয়মিত কাজ অবশ্যই করা হবে। বোয়ালখালী যেন আর পিছিয়ে না থাকে, শিক্ষায়-প্রযুক্তিতে সেই উদ্যোগ অবশ্যই নেব।’

সোলায়মান আলম শেঠ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু হলে বোয়ালখালীর উন্নয়ন এমনিতেই হয়ে যাবে। শিল্প কারখানা সম্প্রসারণ হবে নদীর দক্ষিণে। ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমার চেষ্টা থাকবে কালুরঘাট সেতুটা করার। পাশাপাশি বোয়লখালীর উন্নয়নকে আমি বিশেষ গুরুত্ব দেবো।’

কালুরঘাট এলাকায় গিয়ে কথা হয় এ আসনের দুই ভোটারের সঙ্গে। মোহাম্মদ সোলায়মান নামে একজন বললেন, ‘উন্নয়ন কী হবে আর কী হবে না, জানি না। এতটুকু জানি, ব্রিজ হলে উন্নয়ন এমনিতেই হয়ে যাবে। যিনি ব্রিজ করতে পারবেন, এমন প্রার্থী নির্বাচিত হোক।’

রীতা দাস নামে শাকপুরার এক বাসিন্দা বলেন, ‘ফেরি দিয়ে নদী পার হয়ে আসা-যাওয়া করতে কষ্ট হয়। ৮-১০টা নির্বাচন গেল। প্রত্যেকবার শুনে আসছি, কালুরঘাট সেতু হবে। কেউ করতে পারল না। এবারও বলছেন, হবে। বিশ্বাস করতে পারছি না। যাকে ভোট দিলে কালুরঘাট ব্রিজ হবে, তাকে ভোট দিতে চাই।’

কালুরঘাট সেতু করতে পারার মতো যোগ্যতা কার আছে— এমন প্রশ্নে সোলায়মান বলেন, ‘অনে বদ্দা বিপদত ফেলাই দিয়্যন (আপনি বিপদে ফেলে দিলেন)। এখন সরকার চাচ্ছে লাঙ্গল জিতুক। এলাকার লোকজন বলছেন ছালাম জিতুক। আ জ ম নাছির চাচ্ছেন বিজয় জিতুক।’

এক দশক ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে কালুরঘাট সেতুর দাবিকে জোরালো করেছে বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ। সংগঠনটির আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে প্রার্থীরা এই সেতুর মূলা ঝুলিয়ে আসছেন। ৩৪ বছর চলে গেল, সেতুটা হলো না। চট্টগ্রামে এত মন্ত্রী, এমপি— কারও জনদাবি শোনার সময় নেই। এখন আবার নির্বাচন এসেছে, আবার প্রার্থীরা কালুরঘাট সেতুর মূলা ঝোলাচ্ছেন। মানুষ অবশ্যই প্রার্থীর সক্ষমতা বিবেচনায় নেবেন।’

ছবি: শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট

সারাবাংলা/আরডি/একে

কালুরঘাট সেতু চট্টগ্রাম জাতীয়-নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর